‘দিল হ্যায় মানতা নাহি’-তে প্রেম করতে করতে খুব খিদে পেয়েছিল আমির খান আর পূজা ভাটের। জায়গাটা এমন, কিচ্ছুটি পাওয়ার জো নেই।
ফলের কথা বলে কী লাভ। শুধু ফল খেয়ে কী মানুষ বাচেঁ? হ্যাঁ বাঁচে। আগেও বেচেঁছে, এখনও বাচেঁ। বনবাসে শ্রীোমচন্দ্র সপরিবারে ফল খেয়ে থেকেছেন। এখনকার যোগগুরু রামদেব ফলাহারে শক্তিমান। ফলের মস্ত বড় সুবিধে পাক করার দরকার হয় না।
কাটো, খাও। ক’দিন বাদে আম উঠলে কথাই নেই। গুজরাটের রত্নাগিরিতে ‘হাপসু’ আম গাছে বেলি ধরছে ভাল। গুজরাটিয়া আমরস খেতে খুব ভালবাসে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী নিশ্চয়ই হাপুসহুপুস করে ‘হুপুস’ আম খাওয়ার সুযোগ পাবেন। সবার ভাগ্যে জোটা কঠিন। অভিজাত আম, অসম্ভব দাম। মহারাষ্ট্রের আলফামসো আর গুজরাটের হাপুস প্রায় হাতির দাতেঁর মতন দামী। গত গ্রীষ্মে নিউমার্কেটে বিক্রি হয়েছে এক একটা আশি টাকায়।
কাচকলা ফল নয়, সবজি। বাংলায় আকালের সময় প্রফুল্ল সেন, কাচকলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাতে তাঁর নাম হয়েছিল কাচকলা মন্ত্রী। বদনাম হবে জানলে নিশ্চয়ই কাচকলার কথা ভুলেও তুলতেন না। বাঙালিদের নিয়ে এটাই মুশকিল। টেস্ট পাল্টাইতে এটা ওটা খায় বটে, শেষে ডাল-ভাতে ফেরে। সঙ্গে মাছ-মাংস তরিতরকারিও চাই। সাপ্লাইয়ে গোলমাল হলে ছেড়ে কথা কয় না।
নির্বাচনী ইশতেহারে তৃণমূল-সিপিত্রম দু’দলই মূল্যবৃদ্ধি রোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কীভাবে সেটা বলেনি। বাজার অর্থনীতিতে সেটা কী সম্ভব। দেশ চলছে ক্যপিটালিজমের রাস্তায়। নিচের লোকেরা নিচেই পড়ে থাকছে। ওপরের মানুষ আরও ওপরে উঠছে। অর্থনেতিক ব্যবস্থার সার্বিক প্রতিফলনে মূল্যবৃদ্ধি। সমাজতন্ত্রের রাস্তায় টেনে আসা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব। বিশাল দেশে রাজনৈতিক সংহতি নেই বলেই এতো দল। তাদের উচ্চাকাঙ্খিাই বড় বিষয়, দেশ নয়।
সেই সূত্র ধরেই বেনোজলের মতো দুর্নীতি ঢুকছে রাজনীতিতে। সেটাই বা ঠেকানো যাবে কীভাবে? ভোটে লড়তে টাকা চাই। টাকা তো আর আকাশ থেকে পড়ে না। কে দেবে টাকা, কেনই বা দেবে। এখন দেবে পরে বেশি করে নেবে।
লেনদেন থেকে নয়, সবটাই কালো টাকায়। কড়কড়ে গোলাপী হাজার হাজার টাকার কারেন্সি নোট স্যুটকেসে বা বস্তায়। টাকা বন্ধ হলে দলের দরজায় তালা। মৃত্যুর দিন গোনায় পালা। নির্বাচনের মুখে সব দলই একে অপরের খোঁজখবর নেয়। সবাই জানে, টাকাই শক্তি, টাকাই ভক্তি। যে দলের যত টাকা সে দলে ভক্তের ভীড় ততো বেশি। রাজনৈতিক দলগুলোই দুর্নীতির স্মৃতিকাগার। তারা যদি বলে দুর্নীতি বন্ধ করব, সেটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। গরম আইসক্রিমের মতো দেখায়।
ভুক্তভোগী বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিত্রানের রাস্তা খুঁজছেন। যে পথ পেয়েছেন সেটা সরুগলি। ভারতের মতো বিশাল বাস সেখানে ঢুকবে না। তিনি চাইছেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো ভারতেও সরকারি টাকায় নির্বাচনের খরচ চালালে দলগুলোর আর পরের কাছে হাত পাততে হয় না। হলে ভালই ছিল, কিন্তু তা হওয়ার নয়। এই তিনটি দেশেই জনসংখ্যা সম্ভাব্য। এক একটি দেশে পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কম লোক থাকে। রাজনৈতিক দল নাম মাত্র। বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্ধিতা দ্বিমুখি। ভারতের সংসদে প্রতিনিধি আছে এমন দলের সংখ্যা ৩৮। তার অধিকাংশই আঞ্চলিক; তৃণমুলও তাই। তারা এবার জাতীয় দল হওয়ার চেষ্টা করছে। সেটা পেতে কমপক্ষে ৬ শতাংশ ভোট দরকার। আসন কম হলেও চলবে, ভোটের পরিমাণ যেন বাড়ে।
পশ্চিমবঙ্গের সব আসলেই প্রার্থী দিয়েছেন মমতা। অন্য রাজ্যেও তৃণমুল প্রার্থীরা লড়ছেন। রাজ্যে কংওগ্রেস বা বিজেপির সঙ্গে জোট না হওয়ায় আসন কমার আশঙ্কাকে তিনি পরোয়া করছেন না।
দু-চারটে আসন কমলে-বাড়লে কিছু যায়-আসে না। জাতীয় দল না হয়েও রাজ্যসভার ২৪৫ আসনের ১২টি তৃণমুলের, লোকসভায় ৫৪৩-এর ১৯টি তাদের। রাজ্যসভায় ২৯টি দলের প্রতিনিধি আছেন।
এত দলের ভোট লড়াইয়ের রসদ সরকারকে যোগাতে হলে তহবিল খালি হয়ে যাবে। ইভিএম কেনার পয়সা থাকবে না। তাছাড়া সব কিছুই যখন বেসরকারিকরণের দিকে, তখন রাজনীতি সরকারিকরণ করে ঘাড়ে ফালতু বোঝা নেওয়া কেন? ইউরোপের দেশগুলোতে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুই বা তিন। সরকারি সাহায্য দেওয়া হলে ভারতে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা একশো ছাড়াতে সময় লাগবে না। টাকা দেওয়াটা নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকলেও তারা পুরোটা ম্যানেজ করতে পারবে না। পৃথক দপ্তর খোলতে হবে। সেখানেও দুর্নীতির আশঙ্কা থাকবেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি মনে করেন তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে সব সমস্যা মিটিয়ে দেবেন সেটাও কষ্ট-কল্পনা। তিনি একাধিকবার রেলমন্ত্রী হয়ে কাজ অসমাপ্ত রেখে শেষে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হলে পশ্চিমবঙ্গ কে সামলাবে । তিনি পরিবর্তন পিয়াসী।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যদি বলেন, রাজনীতি ছেড়ে রাষ্ট্রপতি হবেন, তখন? প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ ফুরোতে কিন্তু এখনও ঢের দেরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৪