ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মোদি প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্য নন

সুকুমার সরকার, কলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৯ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৪
মোদি প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্য নন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন

কলকাতা: নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য নন। তাকে নিয়ে আমার মতামত সবারই জানা।

প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য আমি তাকে যোগ্য প্রার্থী মনে করি না। ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় তিনি। কিন্তু তার মানে মোদি আমাদের প্রিয় প্রার্থী হবেন তার কোনো অর্থ নেই।

বুধবার ভোট দিয়ে শান্তি নিকেতনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে দেশে অশান্তি বাড়বে, মানুষেরও কোনো কল্যাণ হবে না।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমি ধর্মনিরপেক্ষ একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। এমন একজনকে চাই, যাকে দেখে এদেশের সংখ্যালঘু মানুষেরা যেমন- মুসলিম, খ্রিস্টানরা ভয় পাবে না। দেশের নেতার অন্যতম চরিত্র এটাই হওয়া উচিত। ভারত হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব ধর্ম-গোত্রের মানুষের।

এদিকে, দলীয় প্রতীক চিহ্ন নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করায় চরম বিপাকে পড়েছেন বিজেপির প্রধনামন্ত্রী প্রার্থী মোদি। ভোট দেওয়ার পর পোলিং বুথে বিজেপির দলীয় প্রতীক চিহ্ন নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি।

আর এতেই নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে মোদির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মোদির বিরুদ্ধে গুজরাট সরকারকে এফআইআর দায়ের করতে হতে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী নির্বাচন চলাকালীন কোনো রকম দলীয় প্রচার করা আইন বিরুদ্ধ। পোলিং বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো প্রার্থী কাউকে প্রভাবিত করতে পারবেন না।

কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি উভয়েই মোদির বিরুদ্ধে স্পষ্ট দলীয় প্রতীক পদ্ম নিয়ে সভা করার অভিযোগ এনেছেন কমিশনের কাছে।  

উনঝায় মোদি স্ত্রী
আহমেদাবাদের উনঝা ভোটকেন্দ্রে বুধবার ভোট দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদির স্ত্রী যশোদাবেন। এই প্রথম ক্যামেরার সামনে মুখ দেখালেন তিনি। মাত্র ১৪ দিনের ঘর-সংসার ছিল তাদের। স্ত্রীকে ফেলে চলে যান মোদি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়নি।

তাই এবার বিপাকে পড়ে কিংবা মুখ রক্ষার খাতিরে মোদি নির্বাচনে প্রার্থী ফরম পূরণ করে জমা দেওয়ার  সময় স্ত্রী হিসেবে যশোদাবেনের নাম উল্লেখ করেন।

এদিকে গুরু লালকৃষ্ণ আদবানিকে ভোট দিয়েছেন শিষ্য নরেন্দ্র দামোদর মোদি। বুধবার সকালে আমেদাবাদে ভোট দিয়ে বেরিয়েই মোবাইলে পদ্ম-চিহ্নের সঙ্গে নিজের ছবি ‘সেলফি’ তুলে টুইটারে পোস্ট করেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী৷

সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে বিদ্ধ করে মোদী বলেন, মা-ছেলের সরকার তো গেল। আর এদের রক্ষা করা যাবে না। নতুন শক্তিশালী ও স্থায়ী সরকার গঠন নিশ্চিত করতে এখন ভোট হচ্ছে।

মোদি একইসঙ্গে জানান, বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানির কেন্দ্র গান্ধীনগরের ভোটার হতে পেরে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান ও ধন্য মনে করছেন।

লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া নিয়ে ও পরে পছন্দের কেন্দ্র নিয়ে মোদি-আদবানির মধ্যে নীরব লড়াই, মান-অভিমান চলেছে। কিন্তু এদিন গুরুকে শিষ্যর সমর্থনে বিজেপির ঘরোয়া কোন্দলের চিত্রটা পালটে গেল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অপরদিকে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের নয়টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ৷  

এদিন এ রাজ্যে তৃতীয় দফায় এক কোটি ৩৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৮ জন ভোটারের হাতে ছিল নয়টি আসনের ভাগ্য নির্ধারণ। তীব্র গরমকে উপেক্ষা করেই সকাল ৭টা থেকে বুথে বুথে ছিল লম্বা লাইন। বিকেল ৬টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। এ রাজ্যের হাওড়ায়, উলুবেড়িয়া, বোলপুরে দুর্গাপুরে, বর্ধমান পূর্ব, বীরভূম, শ্রীরামপুরে, আরামবাগ, হুগলিতে গড় ভোটের হার ছিল ৮০ শতাংশের ওপর।

তবে, কয়েকটি বুথে ভোটগ্রহণ শুরুর তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে ১০০ শতাংশ ভোট পড়ে যায় বলে বিরোধীদল সিপিএম অভিযোগ করেছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বীরভূম, বর্ধমান, হাওড়া,  হুগলি সব জেলাতেই টানটান উত্তেজনা ছিল। টহল ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীরও। পর্যবেক্ষকদের কড়া নজরদাড়ি ছিল। বুথে এজেন্ট বসা নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও আবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগও ওঠে।

বুধবার সপ্তম দফার ভোট হয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ নয়টি রাজ্যের মোট ৮৯টি লোকসভা আসনে। পশ্চিমবঙ্গের জ্ঝটি কেন্দ্র ছাড়া গুজরাটে ২৬টি, অন্ধ্রপ্রদেশে ১৭টি, উত্তরপ্রদেশে ১৪টি, পাঞ্জাবে ১৩টি, বিহারের জ্জটি, জম্মু ও কাশ্মীর, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউতে ১টি করে আসনে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ হয়। একইসঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গানা অঞ্চলের  প্রথম দফার নির্বাচনে ১১৯টি বিধানসভা আসনে ভোট হয়েছে।

বুধবার ভোটের ভাগ্যনির্ধারিত হয়েছে গুজরাটের ভদোদরার প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি, গান্ধীনগরে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলির প্রার্থী কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, লখনউ কেন্দ্রে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং,  কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা, পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং, বিজেপি নেতা মুরলিমনোহর যোশী, অরুণ জেটলি, উমা ভারতী, কংগ্রেস নেত্রী অম্বিকা সোনি, অভিনেতা বিনোদ খান্না, জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদবদের।

পশ্চিমবঙ্গে আছেন হুগলীর শ্রীরামপুর থেকে বিজেপির প্রার্থী গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি, বীরভূম থেকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের অভিনেত্রী শতাব্দী রায়।

শতাব্দী ওই  এলাকার বর্তমান এমপি। ভোট শেষে বেড়িয়ে শতাব্দী রায় জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি এলাকার অনেক উন্নয়নে কাজ করেছেন। একটি টাকাও ফেরত যায়নি।

একজন সাংবাদিক শতাব্দীকে জিজ্ঞেস করেন, গত পাঁচ বছর এমপি থেকে একজন পাকা রাজনীতিবিদ হয়েছেন আপনি। জবাবে শতাব্দী পাকা রাজনীতিবিদের মতো উত্তরে বলেন, কী হয়েছি জানি না- তবে মানুষের মাঝে আছি।

এদিকে এদিন ভোট দিতে গিয়ে হায়দরাবাদের অভিজাত এলাকা জুবিলি হিলসের কেন্দ্রে লাইন ভাঙার অভিযোগ উঠল কংগ্রেস নেতা ও দক্ষিণের সুপারস্টার চিরঞ্জীবীর বিরু‌দ্ধে। চিরঞ্জীবী ভিড় ঠেলে আগে ভোট দিতে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা তাকে আটকে দেয়।

অবশ্য ফের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে ভোট দেন লজ্জিত অভিনেতা। হায়দরাবাদে এদিন ভোট দেন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনা নেওয়াল। আইপিএল’র ফাঁকে দুবাই থেকে রাজকোটে ফিরে ভোট দিয়ে গেলেন ক্রিকেটার চেতেশ্বর পুজারাও। ভোট দিয়েছেন বসপা নেত্রী মায়াবতীও।

সোনিয়া গান্ধীর রায়বরেলি আসনে ভোট নির্বিঘ্নে হয়েছে বলেই খবর পাওয়া গেছে। তবে সকাল থেকে সোনিয়া ভোট প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। জনসমক্ষেও আসেননি।

এদিকে মোদি এদিন কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে জনগণের উদ্দেশে আরও বলেছেন, নির্ভয়াকে ভুলে যাবেন না। বেকার যুবকদের কথা ভুলবেন না। কৃষকদের আত্মহত্যা ও সেনাদের মাথা কেটে নেওয়ার ঘটনাও ভুলবেন না।

এদিন কাশ্মীরের শ্রীনগর কেন্দ্রে ভোট শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার দিকেই বেশি ভোট পড়বে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে অমৃতসরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি ও কংগ্রেস নেতা ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং’র মধ্যে। আনন্দপুর সাহিব কেন্দ্রে লড়াইয়ে আছেন কংগ্রেস নেত্রী অম্বিকা সোনি।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।