ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মরুতে মরীচিকা

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪
মরুতে মরীচিকা প্রবীণ টোগাড়িয়া

বেশি নয়, এক শিশি ফলিডন ঢাললেই পুকুরের সব মাছ শেষ। একটাও জ্যান্ত থাকবে না।

সব মাছ ভেসে উঠবে। সেটা দেখে মৎস্যচাষীরা যখন কান্নায় ভেঙে পড়বে। ঘাতকদের প্রাণে খুশির হাওয়া লাগবে। আর্থিক লাভ নেই তবু অন্যের বিষাদে তৃপ্তি ষোলআনা। বিদ্বেষই তাদের অস্ত্র। এতে শক্তি-সাহসের দরকার পড়ে না। চোরের মতো কাজটা করে সরে পড়ে। সবার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ চাপড়ে বলতে পারে না, এই যে আমি এ কাজটা করেছি। একই রকম ষড়যন্ত্র সব পরিবারে। নেতারা গোপনে ছুটছে গ্রামে গ্রামে। বাতাসে বিদ্বেষের বিষ মিশিয়ে পালাচ্ছে।   মৌলবাদের গরমে মনুষ্যত্বের মৃত্যুতে তাদের যে কী উল্লাস। ধরা পড়লেই বলবে, কই আমরা তো কিছু করিনি, অন্যায় কিছু বলিনি। শুধু শুধু আমাদের দোষ দেওয়া হচ্ছে। অপরাধীদের সৎ সাহস থাকে না। তাদেরও নেই। ঘাড়ে করে অন্ধকার বয়ে এলে তারাও ক্লান্ত। শ্রান্ত মনে গা ঢাকা দিয়ে পালানোর দিন গুনছে। খোঁজ নিচ্ছে কোথায় কতটা আগুন লাগল। দাঙ্গায় কত লোকের প্রাণ গেল। মানুষের মৃত্যুতেই তো সাফল্যের ফুল ফোটে। যার ঘ্রাণ যতই কটু হোক, বীভৎসতায় যতই মানুষ শিউরে উঠুক— তাদের কিছু যায় আসে না। বরং অন্ধকারকে বরণ করে সাগ্রহে। হিংস্রতার আগুন জ্বালিয়ে সব ছারখার না করা পর্যন্ত স্বস্তি নেই।

মানুষ মেরে তারা ক্ষমতার ল্যাজ ধরতে চাচ্ছে। ধর্ম, ক্ষমতায় চড়ার সিঁড়ি। তরতরিয়ে উঠে তখতে বসে তবে তৃপ্তি। ধর্ম মানুষকে ধারণ করে। শুদ্ধতায় চৈতন্যের আলোয় জাগ্রত করে। তাহলে ওরা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে কেন। জঘন্য কাজে কীসের উৎসাহ!

সাম্প্রদায়িকতার বারুদ যখন ভিজে দুর্বল হয়ে যায়, আস্তাকুঁড়ে পড়ে মৌলবাদীরা। দুর্বলতা ঢাকতে দাঁত-নখ বের করে। সভ্যতার ছাপ ছিঁড়ে ভালবাসার হ্রদপিণ্ড উপড়ে নিতে চায়। হুঙ্কার দিয়ে বলে, আমাদের ভোট দাও, নয়ত জাহান্নামে যাও। দেওঘরে বিহারে বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং,মোদী বিরোধীদের পাকিস্তানে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। গুজরাটের ভাবনগরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি প্রবীণ টোগাড়িয়া বিচ্ছেদের মশাল জ্বেলেছেন নির্লজ্জভাবে। কর্কশ জিভে তলআয়ালের ধার। জিঘাংসায় উন্মত্ত। তিনি জানেন, যা বলছেন সবটাই সংবিধান বিদ্বেষী। তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হতে পারে। তবুও উচ্চকিত উচ্চারণে নৃশংকতার ধুম্রজাল। খাল কেটে সাম্প্রদায়িকতার কুমির আনতে মরিয়া। আইনের জালে ফাঁসার ভয়ে আগেই চিৎকার, আমায় কেউ কিছু করতে পারবে না। এসব মামলা একদিনে শেষ হয় না। মাসের পর মাস চলে। যেমন চলেছে রাজীব গান্ধী হত্যা মামলা।

giriraj_singhতোগাড়িয়ার কাছে সময়টা বড় ফ্যাক্টর। তিনি জানেন, নির্বাচনের সময় আগুন জ্বেলে তিনি লাপাত্তা হবেন। তার মধ্যেই হারজিতের ফয়সালা হয়ে যাবে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে ভাল, না হলে অন্য রাস্তা খুঁজতে হবে। দিল্লি হাতে না এলেও গুজরাট তো থাকছে। মোদীও আছেন। মৌলবাদী শক্তি বেকার হয়ে যাবে না।

বিপদে মোদী। নিজের ইমেজ মেঝে-ঘঁষে যখন ঝকঝকে করতে চাইছেন, তখন উল্টো বিপত্তি। সঙ্ঘ পরিবার তাঁর গায়ে কাদা ছিটোচ্ছে। প্রকান্তরে প্রকাশ করতে চাইছে তিনি মৌলবাদী। সঙ্ঘপরিবার কাজটা করছে জেনে বুঝেই। আজ যে মোদীর এত বাড়বাড়ন্ত সে তো তাদের জন্যেই। নির্বাচনের মুখে মৌদী যদি সেটা অস্বীকার করে তাহলে কী চুপ করে থাকা যায়। আর এসএস ছাড়া মোদী শূন্য। এই সত্যিটা না মানলে চলবে কেন। আর এসএস নেতা মোহন ভাগবতকে পর্যন্ত অস্বীকার করছেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, মোহনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা কোনও দিনই ছিল না। বরং তাঁর বাবাকে তিনি চিনতেন। তাঁর চত্রছায়ায় বড় হয়েছেন। ওঁর আঙুল ধরে হাঁটতে শিখেছেন। আর এসএস-কে পাশ কাটানোর যতই চেষ্টা করুন মোদী, তারা ছাড়বে না।

হিন্দুত্বের ঢেউ বাঁচাতে মোদী সতর্ক, তবু সেই তরল গায়ের ওপর আছড়ে পড়ছে। পালানোর পথ নেই। মোদীকে দেখে এলডিএর পুরোনো শরিকরা আগেই সরেছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টানায়েক জানিয়েছেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী আর নরেন্দ্র মোদী এক নন। বাজপেয়ীর সঙ্গে ছিলাম বলে মোদীর সঙ্গেও থাকতে হবে তার কোনও মানে নেই। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার গতবার বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন লড়েছেন, এবার তাদের ছায়া মাড়াচ্ছেন না। পাঞ্জাবের শিরোমনি অকালি দল পর্যন্ত সংশয়ে। মৌদীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন কী-না ভেবে দেখছেন। আস্তাকুঁড়ে মোদী। তিনি জানেন, বিজেপি যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়  সরকার গড়া মরীচিকা হয়ে দাঁড়াবে। শরিক ধরতে গিয়ে শূন্যতাই পাওনা হবে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরিকল্পনা, পরী হয়ে, কল্পনার আকাশে উড়বে, বাস্তবের মাটি ছোঁবে না।



স্বপ্নে বিভোর শারদ

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।