ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

শেষ হলো পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪
শেষ হলো পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচার

কলকাতা: একে একে খুলে ফেলা হচ্ছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাগানো লাউড স্পিকারগুলো। উঁচু করে বাঁধা মঞ্চ থেকে নামিয়ে ফেলা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের পতাকা।

দেয়াল লেখা কিংবা ফ্লেক্স টানানোর আস্ফালন আর চোখে পরছে না।

কানের কাছে গত কয়েক মাসের চেনা মাইকের শব্দ অসুর যেন হঠাৎ আমায়িক হয়ে নির্বিবাদী হয়ে পড়েছে। আড়াই –তিন মাস ধরে একটানা ভোটের প্রচার করে ক্লান্ত নেতা-কমীরা এবার তাদের গলাকে একটু বিশ্রাম দেবেন। কারণ পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের শেষ দফার নির্বাচনের প্রচারের সময়সীমা শেষ হয়েছে শনিবার বিকেলে।

কলকাতায় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সূর্য অস্ত যেতে যেতে সন্ধ্যে ছটার কাছাকাছি হয়ে যায়। তাই এবার নির্বাচনের প্রচার শেষ হচ্ছে সূর্য অস্ত যাওয়ার ঘণ্টা খানেক আগেই। আর দিল্লিতে আগামী পাঁচ বছর রেসকোর্স রোডের বাড়িতে বসে কে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ পাবেন সে জবাবও জানা যাবে আগামী ১৬ মে।

তবে এবারের নির্বাচনে গোটা দেশের বিশেষ নজর থাকবে পশ্চিমবঙ্গের ওপর। এর বড় কারণ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। প্রথমত ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের শাসন শেষ হওয়ার পর এটাই প্রথম লোকসভা নির্বাচন।

দ্বিতীয়ত, এ নির্বাচনে চতুর্মুখী লড়াই হচ্ছে বেশির ভাগ আসনে। তৃতীয়ত, প্রথম পশ্চিমবঙ্গের আসন সংখ্যার বিন্যাসের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে আগামী সরকার কে গঠন করবে সেটাও।

চতুর্থত, রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর এবারই প্রথম কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো নির্বাচন হচ্ছে।

পঞ্চমত, তৃণমূল সরকারে আসার পর সারদা কেলেঙ্কারি, টেট কেলেঙ্কারি, রাজ্যের নারী নির্যাতনের অনেকগুলো ঘটনা বেশ কিছুটা ধস নামিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রিয়তায়। এমন ধারণা করছেন অনেকে।

তবে শুধু এই পাঁচটি কারণই নয়। ভোটের আগে প্রচারের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাও খুব বেশি করে প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গকে। এর মধ্যে যেমন আছে রাহুল –মমতার বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য। আবার অন্যদিকে আছে মোদী-মমতা তরজা।

প্রচারের একদম শুরুতে রাহুল গান্ধীকে বসন্তের কোকিল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ নির্বাচনী প্রচারে কলকাতার শহীদ মিনারের সভায় দাঁড়িয়ে রাহুল বলেন ‘দিদি’ বিরোধী হিসেবে ভালো ছিলেন কিন্তু সরকার পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

তবে নরেন্দ্র মোদী শুরুটা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গবাসীর দুই হাতে লাড্ডু ধরিয়ে। তিনি বলেন, রাজ্যে দিদি আর কেন্দ্রে মোদী। কিন্তু মিষ্টির বদলে যখন দিদির কাছ থেকে জুটল ‘দাঙ্গা বাবু’ উপাধি তখন মোদীও সুর চড়ালেন। সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান ইউএসপি নিয়ে আঘাত হেনে বসলেন।

তিনি বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে সৎ বলে দাবি করলেও তিনি অতটা সৎ নন ,যতটা তিনি প্রচার করেন।

ব্যাস, শুরু হয়ে গেল বাক্য বাণের প্রবল যুদ্ধ। মোদীর একটি বানের জবাবে মমতা ছুঁড়লেন তার দ্বিগুণ বাক্যবাণ আর সেটাকেই চার গুন করে ফিরিয়ে দিলেন মোদী।

কিন্তু ফুট কাটলেন বামেরা। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে তাদের শক্তি যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে তাতে তাদের এর থেকে বেশি কিছু করাও সম্ভবও নয়।

তারা একদিকে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততার প্রশ্ন নিয়ে বলতে গিয়ে সারদা আর শিক্ষকদের চাকরির পরীক্ষা ‘টেট’ টেনে আনলেন। অন্যদিকে তারা বললেন, মোদী –মমতা লড়াই আসলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। ভোটের পরে তারা জোট বাঁধবে।

এতো গেল প্রচার পর্বে কথার লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত। কিন্তু এ লড়াই ছাড়াও যে মূল ইস্যুগুলো সামনে উঠে এসেছে তার মধ্যে একদিকে মোদীর গুজরাত মডেল অন্যদিকে কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ সরকার অন্যতম।

গুজরাট মডেলের পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ মডেল খাড়া করেছেন। তবে বিরোধীরা সেই মডেলকে কটাক্ষ করেছে। যেমন করেছে তার ফেডারেল ফ্রন্টের তত্ত্বকে। তবে যে পাঁচটি আঞ্চলিক দল দিল্লিতে সরকার গঠনে প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস একটি।

বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, বিজেপি একযোগে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে আক্রমণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। প্রচারের বেশিরভাগ সময়ই বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিতে দিতেই সময় কেটে গেছে তৃণমূল নেতা–কর্মীদের। তাদের কাজের কথা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা বলে বিশেষ প্রচারের সুযোগ তারা পায়নি।

তবে প্রচারের প্রায় শেষ কুড়ি দিন কেটেছে অনুপ্রবেশকারী ইস্যু নিয়ে। মোদীর তোলা এই ইস্যু নিয়ে মোদী –মমতা তরজা বিগত সমস্ত নমুনাকে ছাপিয়ে গেছে।

অন্য দলগুলোর দিকে তাকালে বলা যায়, কংগ্রেসের প্রচারের মূল সুর বাঁধা ছিল তৃণমূল সরকারের অপশাসন আর বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার দিকে। তারা বিগত দশ বছরে সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছে জনগণের কাছে।

বামফ্রন্ট তাদের প্রস্তাবিত তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বললেও মানুষের মনে এটি খুব একটা দাগ কেটেছে বলে মনে হয় না।

তৃণমূল কংগ্রেস তাদের প্রচারে তিন বছরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিরোধীদের সমালোচনার সামনে সেটা খুব বেশি টিকতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে হাজির করেছেন তারকাদের। তাদের দেখতে ভিড় হয়েছে তবে সেটা কতটা ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হবে সেটাই দেখার।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কোনো জনসভায় বক্তব্য রাখেন। তখন তিনি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখেন না। কখনো মঞ্চের বাম দিকে আবার কখনো মঞ্চের ডান দিকে গিয়ে পায়চারি করতে করতে তিনি কথা বলেন। কিন্তু ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের পর তিনি ঠিক কোন দিকে যাবেন, সেটা মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়।

অনেকে বলছেন, তিনি বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধবেন অনেকে আবার বলছেন হয়তো তিনি কংগ্রেসের সঙ্গেই ফিরে যাবেন। তবে সবাই যেটা বুঝতে পেরেছেন সেটা হলো তার পরিকল্পিত ফেডারেল ফ্রন্ট হচ্ছে না। কিন্তু তার যে ভূমিকা সরকার গঠনে থাকবে সে কথা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত।     

বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।