আজমীর, ভারত থেকে: পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ল স্থানীয় সময় দুপুর একটা ১০ মিনিটে। রেলস্টেশনে পৌঁছা এবং ট্রেনে ওঠার আগ পর্যন্ত বাঙালিদেরই বেশি চোখে পড়লো।
কিন্তু ট্রেনে টানা ৩৬ ঘণ্টার যাত্রায় একে একে বুঝতে পারলাম এটি বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবাংলা থেকে ছাড়লেও এর ভেতরে রয়েছে নানা বিচিত্রতা। পথে যেতে যেতে ট্রেনের ভেতর এবং বাইরে এই বিচিত্রতার ঝাঁপি খুলতে লাগলো।
পশ্চিমবাংলার সমতল এলাকা শেষ না হতেই ট্রেনের জানালার ফাঁক গলিয়ে এলো লালমাটি। ঝাড়খন্ডের লালমাটি আর পাহাড়, সেইসঙ্গে ঘন জঙ্গলে খুঁজে পেলাম অন্যরকম একটি পরিবেশ। ট্রেনে আমাদের পাশের আসনের এস প্রকাশ ঝড়খন্ডের মধুপুরের বাসিন্দা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি বেড়াতে যাচ্ছেন রাজস্থানের জয়পুরে।
তিনি বললেন, উপজাতি অধ্যুষিত ঝাড়খন্ডে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের চাল ও রুটি। লিট্টি চোখা, পানি পুরি, পিঠা, ঢুসকা, দুধাউরি, কেরা দুধাউরি উল্লেখযোগ্য খাবার। ঢুসকা ঝাড়খন্ডের খুবই প্রসিদ্ধ একটি খাবার, যা মূলত খাসির কারি ও আলু দিয়ে তৈরি। শুকনা মাশরুমও এখানকার জনপ্রিয় খাবার। কাঁঠাল, আম ও লিচু এসব খাবারে যোগ করে বাড়তি আনন্দ।
কিছুদূর পর পর কোথাও লালমাটি, কোথাওবা ঘন জঙ্গলের পাহাড় ঘেরা। ঝাড়খন্ডের পথ শেষ হতেই প্রবেশ করলাম বিহার রাজ্যে। ৯৪ হাজার ১৬৩ বর্গকিলোমিটারের এই প্রদেশটি পেরোতে সময় লাগলো অনেকক্ষণ। হিন্দির পাশাপাশি উর্দু ভাষাভাষীর এই রাজ্যকে মাঝখান থেকে আড়াআড়ি দু’ভাগ করেছে গঙ্গা নদী। এখানকার ৮৫ ভাগ মানুষই গ্রামে বসবাস করে। ভারতের ৭১ শতাংশ লিচুর উৎপাদক এই রাজ্যের ২২ শতাংশ মানুষই কৃষক।
সমতল ও পাহাড়ের রাজ্য বিহার শেষে এলো উত্তর প্রদেশ। এ রাজ্য থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী।
কৃষকের জমি চাষ, ফসল তোলা, মহিষ চরানো, সাইকেলে চড়ে নারীর পথ চলা, রাস্তা নির্মাণ, মাছ শিকার, শিশুর ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য চিরায়ত গ্রামের ছবিকেই মনে করিয়ে দেয়। ফসলের মাঠে কাজ করা কৃষকের অনেকেই নারী। এসব নারী শাড়ি পরেই স্বচ্ছন্দে কাজ করছেন।
টানা ২৪ ঘণ্টার ট্রেনযাত্রার পরদিন দুপুরের দিকে যাত্রাপথে হঠাৎ বিশাল বিশাল লাল রঙের দেয়াল দেখে থমকে গেলাম। পরে জানলাম এটি আগ্রার দূর্গ। মোঘল সম্রাট আকবরের এই বিশাল দূর্গের অদূরেই রয়েছে সম্রাট শাহজাহানের ভালোবাসার অনিন্দ্য নির্দশন তাজমহল। যমুনা নদীর তীর ঘেষেই এই দুটি ঐতিহাসিক জায়গায় বেড়াতে আসা শতশত মানুষের ভিড়।
একেক প্রদেশের একেক ভৌগলিক বিচিত্রতা যেমন চোখে প্রশান্তি এনে দিল তেমনি বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ভাষার মানুষের ট্রেনেও ছিল বিষয় বৈচিত্র্য। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অনন্যা এক্সপ্রেসের যাত্রী। মাইলের পর পর মাইল কোথাও পাহাড়, মাইলের পর মাইল কোথাও শুধুই সবুজ, মাইলকে মাইল কোথাও মিলেছে ঘন জঙ্গল। গমক্ষেত, ধানক্ষেত ছেয়ে আছে একরের পর একর ফসলি জমি।
হিন্দু, শিখ, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈনসহ নানা ধর্মের মানুষের বসবাস ভারতে। শুধু ধর্মই নয়, নানা জাতি, নানা ভাষার মানুষেরও আবাসস্থল ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯০ বর্গকিলোমিটারের এই দেশটি। সেই দেশে তো বিচিত্রতা থাকবেই। এর ব্যতিক্রম নয়, অনন্যা এক্সপ্রেসও।
অনন্যাতেই পরিচয় হলো প্রসাদ মৈত্র্যের সঙ্গে। বারবার ট্রেনের কামরা পরিষ্কার করতে আসছিলেন এই তরুণ। বয়স বড়জোর ২৩/২৪। সারাদিন রাত ধরে কিছু সময় পরপর প্রসাদের আগমন ঘটছে আমাদের কামরায়। ট্রেনটিকে যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার রাখার জন্যই এই তরুণের দিনান্ত পরিশ্রম। বিহারের বাসিন্দা প্রসাদ ট্রেনের চাকরিতে ঢুকেছেন কয়েকমাস হলো। তার চাকরির এবং কাজের প্রতি ভালোবাসাটা যেন একটু বেশিই মনে হলো।
বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক এই দেশটির পূর্ব প্রান্ত থেকে উত্তরাংশ হয়ে পশ্চিমাংশের রাজস্থানের আজমীরে যখন পৌঁছলাম তখন ৩৬ ঘণ্টার দীর্ঘযাত্রার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে পূর্ণ আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৪
** আহমেদাবাদের কাপড় জগতে নয়া মনীষা রাণী!
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...
** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল
** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে
** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব
** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে
** সেই তো আমরাই!
** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা