কলকাতা: বর্ধমান বিস্ফোরণে যুক্ত থাকতে পারে আন্তর্জাতিক সোনা পাচার চক্র। তদন্তের গতি প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য করে এমন ধারণাই করছেন এনফোর্সমেন্ট ডাইরেকটরেট (ইডি) এর গোয়েন্দারা।
বর্ধমান বিস্ফোরণের অর্থের যোগান নিয়ে আলাদাভাবে তদন্ত করছে ইডি। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপনগরে রামকৃষ্ণ গায়েন নামে এক ব্যক্তিকে দেড় কোটি টাকার সোনার বিস্কুটসহ আটক করে শুল্ক দপ্তর। এটাকেই বর্ধমানের ঘটনার জঙ্গিদের কাঁচা অর্থের উৎস হিসেবে মনে করছে গোয়েন্দারা। এন আই এ এবং শুল্ক দপ্তরের গোয়েন্দারাও এর অনুসন্ধানে নেমে পড়েছেন।
এর আগেও সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকবার বি এস এফ সোনা উদ্ধার করেছে। বেশ কয়েকমাস আগে কলকাতা বিমান বন্দরেও বিভিন্ন বিমান থেকে বেশ কিছু সোনা উদ্ধার করা হয়। এর ফলে বেশ কজনকে গ্রেফতারও করা হয়।
এমন একজন আব্দুল বারিক বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের দেগঙ্গা অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ৪৪.৬৫ কিলো সোনা উদ্ধার করা হয়।
আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে জেরা করেই নাকি বড় একটি সোনা পাচার চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দারা।
গত সপ্তাহে বি এস এফ ওই স্বরূপনগর থেকেই ১ কেজি সোনা বাজেয়াপ্ত করে। চলতি বছরের জুন মাসে সোনা পাচারকারীর এক চাঁই ধরা পড়ে ১০ কেজি সোনা নিয়ে।
এই ঘটনার পরেই সবকটি তদন্তকারী সংস্থা চূড়ান্ত সতর্ক হয়। গ্রেপ্তার হয় রামকৃষ্ণ গায়েন। এই রামকৃষ্ণ গায়েন আগেই গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় ছিল। তাকে চোরাচালানকারীদের ‘পুরান লোক’ বলেই জানা গেছে।
ইদানীং রামকৃষ্ণ গায়েনের গতিবিধিতে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বেশ কিছুটা সক্রিয় হয়ে ওঠে রামকৃষ্ণ গায়েন। সম্ভবত সোনা পাচারের সঙ্গে নগদ টাকার লেনদেন করার বিষয়টিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে এই পাচারকারীরা।
সাধারণত সোনা হাতবদল করে নগদে টাকা নিয়েই গা ঢাকা দেয় এই পাচারকারীরা। ই ডি বর্ধমান-কাণ্ডের তদন্তে নেমে জঙ্গিদের তহবিলের খোঁজ করতে গিয়ে নগদ টাকা লেনদেনের যথেষ্ট তথ্য পাচ্ছে। সে টাকা হাতে আসার উৎস সোনা পাচারকারীরা, এমনই সন্দেহ গোয়েন্দাদের।
ভারতে সোনা পাচারের অবস্থা সম্পর্কে একটি তথ্য পেশ করে ডাইরেকটরেট অফ রেভিনিউ ইন্টিলিজেন্স (ডি আর আই)। তারা জানায় ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সোনা পাচারের হার গত এক বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩৩০ শতাংশ।
এ হিসাব ডি আর আই এর হাতে বাজেয়াপ্ত হওয়ার সোনার হিসাব থেকে বলা হয়েছে। শেষ ৬ মাসে প্রায় ৬০০ কোটি রুপির সোনা বাজেয়াপ্ত করেছে ডি আর আই।
এ নিয়ে ডি আর আই এর মহাপরিচালক নাজিব শাহ ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠিও লেখেন বলে জানা গেছে।
কিন্তু কেন এই সোনা পাচার হঠাৎ করে বেড়ে গেল। এ একটি কারণে সোনার উপর ভারত সরকারের বর্ধিত আমদানি কর চাপান। এই কর বেশ কিছুটা বেশি থাকায় বিশ্ব বাজারের সোনা ভারতে প্রবেশ করাতে পারলে এক লাফে অনেকটা বেশি দামে এ সোনা বিক্রি করা যায়।
আর এই সোনা পাচারের বাড়বাড়ন্ত চিন্তায় রেখেছে গোয়েন্দাদের। সূত্রের খবর তাদের সন্দেহ এর মাধ্যমেই অর্থ পৌঁছাত জঙ্গিদের হাতে।
গোয়েন্দাদের অনুমান ভারতে সোনা মূলত আসে ব্যাংকক এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
তবে অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকেও কলকাতা বিমান বন্দরে সোনা উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। উত্তরবঙ্গেও সোনা উদ্ধারের খবর প্রকাশ হয়েছিল।
উত্তরবঙ্গ থেকে পাচারকারীদের পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার রাস্তা বিহারের কিষণগঞ্জ হয়ে। এমনটাই তথ্য আছে প্রশাসনের কাছে।
বিহারের কিষণগঞ্জে প্রবেশ করতে পারলে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় উত্তরপ্রদেশে। স্বরূপনগরের সোনারও বিহার যাওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে। সোনা পাচারকারীদের কয়েকজনকে জেরা করে টাকা পাচারের পথটি খুঁজছেন ই ডি কর্তারা।
সম্প্রতি বর্ধমান বিস্ফোরণের অন্যতম মাথা সাজিদ গ্রেপ্তারের পেছনেও সেই হাওলা কারবারির সূত্রই পেয়েছে গোয়েন্দারা।
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু সোনা পাচারের টাকাই নয়, মোট তিনটি পথে অর্থ আসত জঙ্গিদের হাতে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। অপর একটি পথ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। খবরে প্রকাশ বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থার হাত ঘুরে অর্থ পৌঁছে যেত জঙ্গিদের হাতে।
তাই জঙ্গিদের ব্যাংকের খাতায় বিশেষ অর্থ না থাকলেও তাদের হাতে থাকত হাজার হাজার রুপি। তাই কোন রকম দরদাম না করেই বাড়ি ভাড়া নিত এই জঙ্গিরা। চাইলেই এদের হাতে চলে আসত বিস্ফোরক কেনার অর্থ, আর এই অর্থের মাধ্যমেই তারা বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনার পরিকল্পনা করেছিল। এই অর্থের মূল উৎস ছিল এই পাচারকারীরা এমনটাই ধারণা গোয়েন্দাদের।
আর ঠিক সে কারণেই এই নগদ অর্থের পুরো চক্রটির সন্ধান করছেন তদন্তকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪