ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে ফের রাজনৈতিক উত্তাপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৫
পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে ফের রাজনৈতিক উত্তাপ

কলকাতা: তীব্র গরম থেকে মুক্তি পেতে ছুটিতে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সঙ্গে দার্জিলিংমুখী হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।



অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকেই মনে করছেন, সোমবারের (০৮ জুন) পর দার্জিলিংয়ে অশান্তি বাড়তে পারে।

এরই মধ্যে ভ্রমণ বাতিল করে কলকাতায় ফিরে এসেছেন অনেক পর্যটক। অখিল ভারতীয় গোর্খা নেতা মদন তামাং হত্যা মামলায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ২৩ নেতার জামিন আবেদন খারিজ হয়ে গেলে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।      

ভ্রমণ বাতিল করে ফিরে আসা পর্যটক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, গত সপ্তাহে মদন তামাং হত্যা মামলায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রথম সারির ২৩ জন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সিবিআই। এরপর থেকেই ভেতরে ভেতরে উত্তপ্ত হচ্ছিল দার্জিলিং। গত দু’দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যটকদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয় বলে মনে করেন তিনি। আর এ কারণেই তিনি কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।  

২০১০ সালে পাহাড়ে ‘অখিল ভারতীয় গোর্খা দল’র সভাপতি মদন তামাং দার্জিলিংয়ের রাস্তায় প্রকাশ্যে খুন হন। এ ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুংসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সিবিআই।

ইতোমধ্যে এই ২৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। সোমবার উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করবেন গোর্খা নেতারা। জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে পাহাড়ে আবার দেখা দিতে পারে অশান্তির কালো মেঘ।

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, গোর্খা জনমুক্তি নেতারা গ্রেফতার হলে আবারও শুরু হবে অশান্তি এবং তীব্র আন্দোলন। আবার অশান্ত হবে দার্জিলিং। সোমবার আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে গোর্খা নেতাদের ভবিষ্যৎ ও দার্জিলিংয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

এ পরিস্থিতিতে অনেক পর্যটক পাহাড় থেকে সমতলে ফিরে এসেছেন। বাকিরাও ফিরে আসার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। পর্যটনের এ ভরা মৌসুমে নতুন করে বাড়তে থাকা রাজনৈতিক উত্তাপ পর্যটন ব্যবসায় যথেষ্ঠ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন দার্জিলিংয়ের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

রোববার (০৭ জুন) থেকেই দার্জিলিং জেলায় অঘোষিত বন্ধের রূপ নিয়েছে। কোনো দলের পক্ষ থেকে বন্ধ ডাকা না হলেও, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের সমর্থনে পোস্টার টাঙানো হয়েছে পাহাড় জুড়ে।

এদিন পাহাড়ের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। অনেক আবাসিক হোটেলে নতুন করে বোর্ডারদের ভাড়া দেওয়া হয়নি। এছাড়া হোটেলে আগে থেকে থাকা বোর্ডারদের নিরাপদ যায়গায় চলে যেতে বলেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উত্তপ্ত ছিল পাহাড়। এখানে আলাদা রাজ্যের দাবি ছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দু’টি বছর সরকারের মাথা ব্যথার কারণ। পাহাড়ের আন্দোলনের ফলেই বামফ্রন্টের শক্ত ঘাঁটি উত্তরবঙ্গ থেকে প্রায় বিলীন হয়ে গিয়েছিল দলটি।

সে সময় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাশে ছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর থেকে আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরাসরি ভিন্নমত প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের ম‍ুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দূরত্ব বাড়তে থাকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও রাজ্যের শাসক দলের।

এদিকে, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। ভারতে তেলেঙ্গানা আলাদা রাজ্যের স্বীকৃতি পেলে পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবি নতুন করে জোর পায়। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৫
ভিএস/এসএন/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।