কলকাতা: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা। বিকেলে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি।
কেমন ছিল সেদিনের কলকাতা, যেদিন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন নিয়াজি? সেদিনের কলকাতার পরিস্থিতি বিষয়ে সন্ধানে নেমেছিল বাংলানিউজ।
সে সময় যারা তরুণ ছিলেন, আজ তাদের অনেকেই বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রায় সবাই বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। এদের মধ্যে অনেকের বয়স ৮০ পেরিয়েছে। কারও কাছে সেই স্মৃতি স্পষ্ট, কারও কাছে আবার কিছুটা ধূসর।
তারা বাংলানিউজকে জানান, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর কলকাতায় পৌঁছালে, মুহূর্তে গোটা কলকাতা ফেটে পড়ে বিজয় উৎসবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পতাকা আর আবির নিয়ে পথে নেমে যান সাধারণ মানুষ। সেদিন আবিরে রাঙা হয়ে গিয়েছিল কলকাতার প্রায় সব সড়ক ও অলিগলি। উল্লাস আর আনন্দে পাড়ায় পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল। আকাশবাণীতে খবর প্রচার হতেই, শাঁখে আর উলুধ্বনিতে ফেটে পড়ে কলকাতা।
সে সময় কলকাতার বিজয়গড়, আজাদগড় থেকে শুরু করে উত্তর কলকাতার দমদম, বিধান নগরের রিফিউজি কলোনিতে ছিল আনন্দাশ্রুর বন্যা। এসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল পরেরদিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বরের পত্রিকায়। বাংলানিউজ সে সময়কার কয়েকটি পত্রিকা খুঁজে বের করেছে।
১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। যুগান্তর পত্রিকায় নামের স্থানে বড় করে ছাপা হয়েছিল প্রধান শিরোনাম, ‘নিয়াজির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’। এর নিচে ডান দিকের কোনে ছাপা হয় পত্রিকার নাম। সংবাদপত্রে নামের জায়গায় শিরোনাম ছাপা হওয়া বিরল ঘটনা। এ থেকেই বোঝা যায়, কলকাতার মানুষ এ ঘটনা নিয়ে কতোটা উত্তেজিত ছিল।
মনে রাখতে হবে, সে সময় কলকাতায় ‘ব্ল্যাক আউট’ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, যেকোনো সময় পাকিস্তানের বোমারু প্লেন আক্রমণ করতে পারতো কলকাতায়। যুদ্ধ জয়ের ঘোষণার পরই কলকাতা থেকে ‘ব্ল্যাক আউট’ প্রত্যাহার করা হয়।
সে সময় কলকাতায় ছিলেন এমন ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সেদিন (১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১) সন্ধ্যায় অনেক দিন পর কলকাতার রাস্তার আলো জ্বলেছিল। আকাশে ছিলো আতশবাজির খেলা। কলকাতার অলিগলিসহ প্রায় সব রাস্তায় ছোট ছোট মিছিল বেড়িয়েছিল। তাদের কণ্ঠে ছিল শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে বরণ করে নেওয়ার উজ্জীবিত স্লোগান।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
ভিএস/আরএম
** 'খচ্চরের পিঠে চড়ে পথ পেরিয়েছিলাম, বাকি পথ হেঁটে'
** সব হুমকি উড়িয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় ভারত
** পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় ছিল রাজধানী স্থানান্তরের খবর
**‘শুধু বুঝতে পেরেছিলাম, বড়ো কিছু ঘটতে চলছে’
** শিশুটি দৌড়াচ্ছিল আর বলছিল-‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’
** সেই গানের ইতিহাস: শোনো, একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের...
** ‘সেদিন ছিল আমাদেরও বিজয়ের দিন’