ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ‘কোটিপতি’ প্রার্থীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ‘কোটিপতি’ প্রার্থীরা

কলকাতা:পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচনের প্রচারের অন্যতম বিষয় উন্নয়ন। রাজ্যের মানুষের পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে বা কতটা হওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু সেটা হয়নি তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।

প্রচারের ময়দানে গ্রীষ্মের গরমকে ছাপিয়ে যাচ্ছে নেতাদের বক্তব্য।

 

সমস্ত রাজনৈতিক দলই জনগণকে বোঝাবার চেষ্টা করছেন তারা কতটা জনগণের সেবা করার জন্য উন্মুখ। রাজনৈতিক প্রার্থীরা কেউ নিজেকে জনগণের সেবক, কেউ সমাজসেবী আবার কেউ নিজেকে জনগণের পূজারী বলে প্রচার করছেন।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতারাই আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের উন্নতিতে কাজ করবেন। রাজ্যে শিল্প-কৃষির উন্নতি ঘটিয়ে রাজ্যের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাবেন। কিন্তু ভোটের প্রচারে নেতাদের সঙ্গী হবার ফলে আড়ালে আবডালে এই জনগণের কিছু কথাও কানে আসছে।

বাড়িতে বাড়িতে নেতারা হাতজোড় করে ভোট ভিক্ষা করলেও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই ভিক্ষুকদের মত নয়। বরং বলা চলে বেশ কিছু নেতা রাজনীতিতে এসে সাধারণ বা দরিদ্র অবস্থা থেকে প্রায় রাজা-উজিরে পরিণত হয়েছেন।

ভোটের দিন ঘোষণার আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী একটি জেলা সফরে গিয়ে সেখানকার এক স্থানীয় নেতার বাড়ি দেখে চমকে যান। ঐ জেলা জুড়ে জমি আন্দোলনের সময় সেই নেতা থাকতেন একটি সাধারণ একতলা বাড়িতে। মাত্র ৫-৬ বছরে সেই বাড়ি পরিণত হয়েছে প্রায় রাজপ্রাসাদে। ধমকের সুরে সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করেছিলেন ঐ নেতাসহ দলের অন্য নেতাদেরও। কিন্তু ভোটের প্রার্থীদের সম্পত্তিতে নজর রাখলে বোঝা যায় ঐ নেতা একাই অর্থবান হননি। রাজনীতির যাদু কাঠির ছোঁয়ায় অনেকেই আজ দরিদ্র থেকে কোটিপতি।

প্রথম দু’দফার ভোটে সামিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের পেশ করা হলফনামা পর্যালোচনা করে একটি তুলনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নাগরিক সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ ’ নামের একটি সংগঠন। এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে , পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের প্রার্থীদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ দেড় কোটি টাকারও বেশি। তবে শুধু শাসক দলই নয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ ’-এর পেশ করা তথ্য অনুযায়ী কোটিপতি প্রার্থীর দৌড়ে তৃণমূলের পরেই রয়েছে বিজেপি। ৩১ কেন্দ্রে তাদের ৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে চার জন কোটিপতি। কংগ্রেসের তিন জন এবং এক নির্দল প্রার্থীও কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বলে উঠে এসেছে হলফনামায়।

ভারতের জনগণের গড় আয়ের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব ২০১৩ সালের হিসেব অনুযায়ী বছরে একজন ভারতীয়র গড় আয় ১ হাজার ৪ শ ৯৮ ডলার। ভারতের মিনিস্ট্রি অফ স্ট্যাটিস্টিক্স অ্যান্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন-এর তরফে প্রকাশ করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ১ হাজার ৫৩২ ডলার।

এই ধরনের গড় রোজগারের রাজ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের রোজগারের দিকে একটু নজর বোলানো যাক। চাঞ্চল্যকর বিষয় উঠে এসেছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে। প্রথম দু’দফায় রাজ্যের যে সব কেন্দ্রে ভোট হতে যাচ্ছে, সেই ৩১ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীদের প্রায় অর্ধেকই কোটিপতি।

শুধু তাই নয় দ্বিতীয় দফার ভোটে শাসক দলের ২০ জন প্রার্থীর মধ্যেও ১১ জনের সম্পত্তি কোটি টাকার বেশি। এর পরেই আছে বিজেপি। যদিও ব্যবসায়ী অধ্যুষিত দল বলে বিজেপিকে কটাক্ষ করে বিরোধীরা। সেই বিজেপি’র প্রথম দফায় নির্বাচন হবে এমন ৩১ কেন্দ্রে তাদের ৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে চার জন কোটিপতি। তবে ৩১ জনেরই গড় সম্পত্তি ৩১ লক্ষ টাকার বেশি বলে তথ্য প্রকাশ করেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ ’ ।

কংগ্রেসের তিনজন এবং এক নির্দল প্রার্থীও কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বলে উঠে এসেছে হলফনামায়।

তবে কোটিপতিদের তালিকায় পিছিয়ে আছে বাম দলের প্রার্থীরা, অন্তত নির্বাচন কমিশনের হলফ নামার ভিত্তিতে। সিপিএম প্রার্থীদের গড় সম্পত্তি ১৯ .৮৬ লক্ষ রুপি। তবে গরীব প্রার্থীও আছেন। দু’দফার ভোটে এসইউসি এবং বিএসপির কয়েক জন প্রার্থীর সম্পত্তির মূল্য মাত্র ৫০০ থেকে ৯৭৫ টাকা।

তবে আরও একটি তথ্য অবাক করে দিতে পারে। যখন ভারত সরকার জনগণের আয়কর প্রদানের বিষয়টি যথেষ্ট কড়াভাবে নজরদারি করছেন তখন বিপুল সম্পত্তি সত্ত্বেও অনেকে আয়কর রিটার্নও জমা দেননি৷ প্রথম দফার মোট ১৩৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৫ জনই আয়কর রিটার্ন জমা দেননি৷ তাঁদের মধ্যে ২১ জন প্রার্থীর সম্পত্তি ১০ লক্ষ টাকারও বেশি।

কোটিপতি প্রার্থীদের সঙ্গে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ ’ ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত প্রার্থীদের তালিকাও প্রকাশ করেছেন। প্রথম দফায় ১৩৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর ধারায় মামলা ঝুলে রয়েছে। এই তথ্য প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলের ধারণা অর্থবান এবং অভিযুক্ত প্রার্থীদের ভোটে দাঁড়ানোর প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন এর ফলে একদিকে যেমন ‘ভিআইপি কালচার’ বাড়বে তেমনই বাড়বে জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের দূরত্ব। যার ফল হিসেবে বাড়তে পারে দুর্নীতি, ভারতের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যেটি একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, ৩১ মার্চ , ২০১৬
ভি.এস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।