ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার পূজার থিম এখন বিশ্বের বিভিন্ন সংগ্রহশালায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১১
কলকাতার পূজার থিম এখন বিশ্বের বিভিন্ন সংগ্রহশালায়

কলকাতা: দুর্গা পূজা শেষ। কলকাতার বাছাই করা বেশ কিছু থিমের মণ্ডপ ও দুর্গাপ্রতিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংগ্রহশালায় স্থান পাচ্ছে এবার।



আর মূল্যবান কাঠের তৈরি বেশ কয়েককটি প্রতিমা বিদেশে না পাঠিয়ে মহানগরীতেই সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কলকাতার থিম পূজার বাজারে এ বার প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জার উপকরণে ছিল চটকদারির যুদ্ধ। এক পূজায় যদি মেহগনি কাঠের প্রতিমা গড়েছে, তো অন্য পূজায় ছিল ফাইবারের ৫২ ফুট উঁচু প্রতিমা। এ যদি মণ্ডপে তুলে আনে কাশ্মীর, তো অন্য জনের বাজি উত্তরবঙ্গের আদিবাসী যন্ত্র ‘বানাম’।

কিন্তু এবার ঘটে গেছে এক অভিনব ঘটনা। দশমী পেরিয়ে যাওয়ার পরে বেশ কয়েকটি শিল্পকর্ম ঘিরে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছে শিল্প সংগ্রাহকদের মধ্যে।   বেশ কিছু থিমের মন্ডপ আবার বিক্রি হয়ে গিয়েছে কালী এবং জগদ্ধাত্রী পূজার উদ্যোক্তাদের কাছে।

নাকতলা উদয়ন সংঘে এ বার মেহগনি কাঠ ও পিতল দিয়ে বহু মূল্যবান প্রতিমা তৈরি করে ছিলেন ভবতোষ সুতার।

পূজা-কমিটির সম্পাদক বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত বলেন, ‘দশমীর পরে সেই প্রতিমা নিয়ে কী করা হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। ’

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, এই মূল্যবান প্রতিমাটি স্থান পেতে পারে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সংগ্রহশালায়। আর মন্ডপ সজ্জায় ব্যবহৃত দু’টি চক্র  দেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুলিশের সংগ্রহশালায়।

অন্যদিকে, বাবুবাগানের ম-পে শোভা পাচ্ছিল যে সব আঁকা ছবি ও ভাস্কর্য, তার বেশ কয়েকটি চলে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। পূজা কমিটির কর্মকর্তা সুমন চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, তাদের ম-পের শিল্পী রূপচাঁদ কুন্ডুর আঁকা ছবি ও ভাস্কর্যগুলির মধ্যে চারটি কিনে নিয়েছেন সান ফ্রান্সিসকোর অরিজিৎ সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী ভেরোনিকা। আর বাকিগুলি স্থান পেতে চলেছে দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আর্ট গ্যালারিতে।

দক্ষিণ কলকাতার বেহালার বড়িশায় এ বার অন্ধ্রপ্রদেশের শিল্পীরা তৈরি করেছিলেন নিমকাঠের তৈরি প্রতিমা।

জানা গেছে, স্থানীয় এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন সেটি। শুধু প্রতিমা নয়, তিনি কিনে নিয়েছেন ম-পের কাজে ব্যবহৃত নানা আকৃতির আদিবাসী বাদ্যযন্ত্র বানামগুলিকে।

নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘের মন্ডপের এবারের থিম ছিল ‘কাশ্মীর’। এই মন্ডপে ব্যবহৃত নানা কাশ্মীরি সামগ্রীর জন্য ক্রেতার লাইন পড়ে গিয়েছে। কাঠের উপরে ফুলতোলা কাজ এবং তামার উপরে ফুটিয়ে তোলা শিল্পগুলি কিনতেই আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। মেহগনি কাঠের তৈরি বিশাল দরজাটি কেনার ব্যাপারে ক্রেতাদের অনেকেই আগ্রহী বলে উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে।
 
সল্টলেকের এফডি ব্লকের ৫২ ফুট উঁচু ফাইবার প্রতিমা অবশ্য এখনও ম-পেই রয়েছে।

পূজা কমিটির সভাপতি প্রদীপ সেনগুপ্ত জানান, ২০ অক্টোবরের পরে ম-পটি খোলা হবে। এই প্রতিমাটি ওই পার্কের মধ্যে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার দাবি উঠেছে । তবে, কোনও শিল্পানুরাগী চাইলে তার কাছেও প্রতিমাটি দিতে আগ্রহী উদ্যোক্তারা।

নলিন সরকার স্ট্রিটের ফাইবার প্রতিমাটি আপাতত রাখা হয়েছে, শিল্পী সনাতন দিন্দার স্টুডিওতে। সনাতন বলেন, ‘বিক্রি নয়, প্রতিমাটি আমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব। ’

এই পূজার সম্পাদক সোমক সাহা জানান, মন্ডপের একটি বিরাট নৌকো নিয়ে গেছেন বলাগড়ের থেকে আসা এক কারিগর।

উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি সার্বজনীনের প্রতিমা চলে যাচ্ছে সুদূর অস্ট্রেলিয়ার এক সংগ্রহশালায়।
 
হরিদেবপুর অজেয় সংহতির মন্ডপ তৈরি হয়েছিল প্রায় ১২ হাজার কাজললতা দিয়ে। কিন্তু এই মন্ডপের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও কিছু ঠিক করে উঠতে পারেননি কর্মকর্তারা।

ক্লাব-কর্তা সুজিত মৌলিক বলেন, ‘কেউ কিনতে আগ্রহী হলে বিক্রি করব। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। ’

সব মিলিয়ে কলকাতার পূজা এখন সাবেকিআনা ছড়িয়ে শিল্পে পরিণত। আর এই শিল্প পশ্চিমবঙ্গে এক নতুন অভিনব শিল্পায়নের পথ দেখাতে পারে বলে মনে করছে রাজ্যের শিল্পমহল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।