ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বাংলাদেশের ‘সংলাপ’ পদ্ধতিতে খুশি ভারত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
বাংলাদেশের ‘সংলাপ’ পদ্ধতিতে খুশি ভারত গণভবনে সংলাপ

সংলাপ। ডায়লগ। এটা গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত। সুস্থতার সংকেত। অথচ ক্ষমতায় আসার পর শাসকদল সেই শর্ত আর মানতে চান না। এমনকি অনেক দল সামান্য সম্মানটুকু দেখায় না। তখন দলগুলি পরস্পর শত্রু ছাড়া আর কিছু নয়! নিজেদের ঘেরা-বেড়া ভেঙে বেরোতে চান না দলের নেতারা। 

সম্প্রতি বাংলাদেশে শাসকদল ও বিরোধী ঐক্যফ্রন্ট সেই ঘেরা-বেড়া ভাঙলেন। বিরোধীরাও বাস্তবসম্মত সহযোগিতা দেখালেন।

শাসক জোটের সঙ্গে বিরোধীজোটের সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা ঘটলো একাধিকবার। একসঙ্গে বসে চললো খাওয়া-দাওয়া। সব না হলেও বিরোধীদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হলো। বিষয়টি বেশ ভালো চোখে নিয়েছেন ভারতের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ। সম্ভবত বাংলাদেশেও। এমনকি বহু দেশ এটাকে সঠিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখেছেন।

এই প্রতিবেশী দেশও স্মরণকালে মধ্যে মধ্যে এমনটি দেখা বা আগে শোনা যায়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অন্যরকম সৌজন্যের রাজনীতি দেখালেন শেখ হাসিনা। এ ধরনের সহনশীল রাজনীতি ভারতে মানুষকেও স্পর্শ করেছে। তা দেখে ভারতে অনেকেই খুশি। তাই বাংলাদেশের নির্বাচনের কোনো উত্তাপ আর এখন তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক চালে অনেকটা কুপোকাত বিরোধীশিবির। যার মধ্যে অন্যতম ‘সংলাপ’। বিরোধী ঐক্যমঞ্চ বা ফ্রন্ট যেভাবে একটার পর একটা অভিযোগ তুলেও শাসকদলকে বেকায়দায় ফেলতে পারেনি, তেমনি কোনো রূপ অসন্তোষ প্রকাশ করতেও পারেনি।

ভারতের মানুষ চান এখানেও সরকার ও বিরোধীজোটের মধ্যে এ ধরনের সংলাপ বা আলাপ-আলোচনা হোক। পশ্চিমবাংলায় মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তার চিরশত্রু বামফ্রন্ট নেতাদের রাইটার্স বিল্ডিংয়ে (তৎকালীন প্রশাসনিক ভবন) ডেকে ফিশফ্রাই খাইয়েছিলেন। ব্যাপারটা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। যে সরকারের সাড়ে ৩৪ বছরের প্রধান টার্গেট ছিল মমতার রাজনীতিকে নসাৎ করা। সেই বিরোধীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় ফিশফ্রাই খাইয়েছিলো মমতার সরকার। অথচ মারধর, অত্যাচার, কর্মী খুন সবকিছুতেই মমতার উপর আঘাত হেনেছিল বাম শাসক। সেই মমতা ক্ষমতায় বসে সম্পূর্ণ মানবিক ও রাজনৈতিক সৌজন্যে দেখিয়েছিলেন। যার জন্য মমতা থেকে তার নাম হয়ে যায় ‘দিদি’। কারণ ভারতের রাজনীতিতে এটা বড় একটা দেখা যায় না। ভারতের জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনকালীন সময় পরস্পর তেমন সৌজন্য দেখান না।  

হাসিনা পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। তার বাবার নামে এখনো দু’দেশের মানুষ শ্রদ্ধাবনত হন। তার যোগ্য কন্যা হাসিনা। এটা সবাই জানেন। এমন একজন রাজনীতিবিদ যিনি বিরোধীদের উপর যে রাজনৈতিক সহনশীলতা দেখালেন তেমনটি তো আগে আর কেউ দেখাননি। তাই এবারও ভোটে হাসিনার পুনরায় ফিরে আসবেন বলেই আশা দেখছেন অনেকে। তবে এবার বিরোধীরাও আশা ছাড়ছেন না। তাদের অংক হাসিনা সরকারে থাকার ফলে তার বিরুদ্ধে যে ‘অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি’ রয়েছে সেটা তার ভোটব্যাংকে ধস নামাতে পারে।  

সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ফিরে আসা বেশ অনিশ্চিতও হতে পারে। তাই নির্বাচনের ফল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে এটুকু বলা যায় আওয়ামী লীগের মহাজোট ক্ষমতার পথে অনেকটাই এগিয়ে। তাছাড়া হাসিনার আমলে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বেশ শক্ত হাতে সামলেছে প্রশাসন। সন্ত্রাসবাদীরা সে দেশ ছেড়ে পশ্চিমবাংলায় লুকোতে বাধ্য হয়েছে। তবে ভারতের গোয়েন্দারাও সতর্ক এ বিষয়ে। চলছে জোর তল্লাশি। যাতে এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে তারা।  

এই হাসিনার আমলেই বাংলাদেশের অর্থসামাজিক উন্নয়নের গ্রাফ অনেকটাই ঊর্ধ্বে। ফলে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের মাথা উঁচু হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এবারের একাদশ নির্বাচনের পর সবদিক থেকে বাংলাদেশ ফের জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে বলেই আশাবাদী।

সুকুমার দেবনাথসুকুমার দেবনাথ, অতিথি লেখক

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।