বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) কলকাতায় সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে চলমান কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্ত বাংলাদেশীরা হলেন- কবি ও বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার এবং কবি আশরাফ আহমদ।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের উপ-দূতালয় প্রধান শেখ জামাল ও প্রথম সচিব (গণমাধ্যম) ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল।
সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে কবি জুয়েল মাজহার বলেন, নিজেকে কবি বলার স্পর্ধা আমার নেই। কবিতার মতো দুর্বোধ্য কাজে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল না আমার। চার দশক ধরে কবিতার নামে ছাইপাশ লিখছি, তা অন্য কারো কাছে মূল্যায়িত হয়েছে। তাদেরকে ধন্যবাদ।
‘আমি বিলাসিতার জন্য কবিতা লিখি না। আমি-তুমি-সে’র মতো গদগদ প্রেমের কবিতাও লিখি না। পূর্বসূরীদের অতিক্রম করতে চাই না। আমি শুধু আমার নিজের বাবুই পাখির বাসা নির্মাণ করতে চেয়েছি। নিজের মতো ভাষা ও চারিত্র্য নির্মাণ করতে চেয়েছি। জানি না কতটুকু পেরেছি। ’
বাংলাদেশ থেকে সম্মাননাপ্রাপ্ত আরেক কবি আশরাফ আহমদ বলেন, আলো থেকে দূরে থাকায় আমাকে দেখা যায় না। চার দশক ধরে কবিতা লিখছি, কিন্তু এটাই আমার প্রথম পুরস্কার। তাও কলকাতা থেকে৷
পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক অভিজিৎ সেন বলেন, আমার লেখা খুব বেশি লোকে পড়ে না, অস্বস্তি হয়। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা পড়েন। পাশে বসে সাহস যোগান। যারা পড়েছেন, যারা পড়েননি- সবাইকে অনুরোধ পড়ার জন্য।
অনুষ্ঠানে জুয়েল মাজহারের কবিতা সম্পর্কে সৌমনা দাশগুপ্ত বলেন, ফেসবুকেই প্রথম তার কবিতা পড়ি। এরপর তার নির্বাচিত কবিতার বইটি হাতে আসে। কবিকে আসলে তার কবিতার মাধ্যমে চেনা যায়। বহুমাত্রিকতা ও ধ্রুপদী স্বাদ রয়েছে জুয়েল মাজহারের কবিতায়। বাস্তবতা ও পরাবাস্তবতা সেখানে হাতে হাত ধরে চলে। কবিতায় তিনি শুধু নিজের অনুভূতির কথা বলেন না, সব পাঠকের কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঐহিকের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য চিত্রালী ভট্টাচার্য বলেন, নানা ঘাতপ্রতিঘাতে থেমে না থেকে একের পর এক কাজ করে চলছে ঐহিক। যা খুশি লিখতে পারার নাম ঐহিক। ভারত ও বাংলাদেশকে নিয়ে একসাথে পথ চলছে এ পত্রিকা।
৩০ বছর ধরে পথ চলছে ঐহিক। বাংলাদেশেও ঐহিকের কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশ অংশের সম্পাদক মেঘ অদিতি বলেন, ঐহিকের ত্রিশ বছর, ঐহিক বাংলাদেশের তিন বছর, এছাড়া অনলাইনেও সক্রিয় ঐহিক। এ পত্রিকায় প্রতি পাঠকের জন্যই ভিন্ন ভিন্ন বিষয় রয়েছে।
ঐহিক অনলাইন সম্পর্কে সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য অগ্নিজিৎ বলেন, হার্ডকপিতে বছরে একবার প্রকাশ পেলেও অনলাইনে প্রতিনিয়ত আপডেট হয় আমাদের পত্রিকা। নতুন নতুন নানা বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ঐহিক সম্পাদক তমাল রায় বলেন, ১৯৯০ সালে ঐহিকের যাত্রা শুরু। এবারে ত্রিশ বছরে পড়লো। এই ত্রিশ বছরে আমরা অনেক অপ্রচলিত বিষয় নিয়ে সংখ্যা প্রকাশ করেছি। সামনের দিনগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি কালীকৃষ্ণ গুহ, একরাম আলি, জহর সেন মজুমদার, মৃদুল দাশগুপ্ত, সুব্রত সরকার, উমাপদ কর, চৈতালি চট্টোপাধ্যায়, সমরজিৎ সিংহ, স্বপন রায়, অতনু বন্দোপ্যাধ্যায়, তৃপ্তি সান্ত্রা, ঔপন্যাসিক অমর মিত্র, বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, মশিউল আলম, কবি আয়েশা ঝর্ণা, শিমুল সালাহউদ্দিন, ফারহানা রহমান, তিতাস চৌধুরী, ফরিদ ছিফাতুল্লাহ প্রমুখ।
এদিকে একই অনুষ্ঠানে মোড়ক উন্মোচন করা হয় ২০২০ সালে ঐহিক প্রকাশিত সব বইয়ের। বইগুলো হলো- নভেরা হোসেনের জলে ডোবা চাঁদ, মাসুদার রহমানের চাঁদের বই, প্রবীর রায়ের জরুরি বৈঠক, মৃন্ময় চক্রবর্তীর পুতুলগুলি পোড়ামাটির, দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়ের শিরোনামে মেয়েটি ছিল, শতাব্দী দাশের অ-নান্দনিক গল্প সংকলন এবং বহতা অংশুমালীর ঠুং শব্দ হলেই কবিতা।
আরও পড়ুন::
পশ্চিমবঙ্গের ‘ঐহিক মৈত্রী সম্মাননা’ পেলেন কবি জুয়েল মাজহার
বাংলানিউজ অফিসে পশ্চিমবঙ্গের ‘ঐহিক’ দলের সাহিত্য-বৈঠকি
যেভাবে সাহিত্যপত্রিকা ‘ঐহিক’র আত্মপ্রকাশ
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২০
ডিএন/এইচজে