ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতের বন-মানব (২)

যুক্তরাষ্ট্রে গাছ লাগানো শেখাবেন ভারতের ‘ফরেস্ট ম্যান’

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রে গাছ লাগানো শেখাবেন ভারতের ‘ফরেস্ট ম্যান’

আগরতলা (ত্রিপুরা): ভারতের ফরেস্ট ম্যান বা বন-মানবের কৃতিত্ব ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। এরই মধ্যে ১০ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকোবাসীকে গাছ লাগানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ডাক পেয়েছেন যাদব পায়েঙ্গ।

শুধু গাছ লাগিয়েই যাদব পায়েঙ্গ  তার দায়িত্ব শেষ করে দিতে চান না। তিনি জানান, দেশ-বিদেশে তাকে এখন ডাকা হচ্ছে। এসব সেমিনারে গিয়ে বিশেজ্ঞদের মুখে শুনেছেন যে হারে গোটা বিশ্ব থেকে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে তার পরিণাম ভয়াবহ হতে যাচ্ছে। যদি এভাবে গাছ কেটে ফেলা হয় তবে আগামী ২০৫০ সালে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে। তাই এ বিষয়ে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে সচেতন করতে হবে।  

তার মতো সবাইকেই গাছ লাগানোর জন্য এগিয়ে আসতে হবে, যদি আগামী দিনের পৃথিবীতে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখতে হয়। গাছ লাগানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, মানুষকে বেঁচে থাকার স্বার্থের জন্য গাছ লাগাতে হবে। তাই এখন তিনি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছেন। দেশ-বিদেশে যেখানেই যাচ্ছেন সবার প্রতি আহ্বান বেশি করে গাছ লাগান এবং পৃথিবীকে সুস্থ ও নির্মল রাখুন।  

তিনি দাবি করেছেন, প্রাক-প্রাথমিক স্কুল স্তরে পরিবেশ শিক্ষার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে। একেবারে ছোটবেলা থেকে ছাত্ররছাত্রীরা যদি পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে পড়াশোনা করে তাহলে তারা পরিবেশকে ভালোবাসতে শিখবে। শুধু পাঠ্যপুস্তকে নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের হাতে গাছ লাগাতে হবে এবং তা যত্নসহকারে বড় করতে হবে, তবে তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নিজেরা তৈরি করতে পারবে। এজন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না।  

সমগ্র আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে বিস্তীর্ণ এলাকা খালি পড়ে রয়েছে এই জায়গাগুলিতে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। যখনই সরকারি আধিকারিক বা মন্ত্রী তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তখন তিনি তাদের বেশি করে বনায়়ন করার আহ্বান জানান। আসামম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বনমন্ত্রী এমনকী ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরে সঙ্গে যখনই সাক্ষাৎ হয়েছে তখনই তিনি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ব্যাপক বনায়নের।  

বর্তমানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করলে তাদের বেশিরভাগই অভিমত থাকে যে তারা ডাক্তার হতে চায় অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু কেউ পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনা করতে এতটা আগ্রহী নয়, তার কারণ তাদের ছোটবেলা থেকে পরিবেশের বিষয়ে পড়ানো হয় না।  

তিনি আরো জানান, তার এই বাগান গড়ে তোলার কথা প্রকাশ্যে আসার পর তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উন্নত দেশগুলিতে গিয়ে তিনি একটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন সেটি হলো ওইসব দেশগুলিতে গাছপালার প্রাচুর্য না থাকলেও ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বৈজ্ঞানিক নাম জানে। অথচ আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা রয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থীরা এসবের বিষয়ে কোনো কিছু জানে না। তাই শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ক জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।  

সম্প্রতি তার কাছে আমন্ত্রণ এসেছে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকোতে গাছ লাগানো শেখানোর জন্য। সেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন এক লাখ গাছের চারা লাগাবেন এবং প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রতি বছর তিন মাস পর পর তিনি সেদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন নবপ্রজন্মকে। এজন্য মেক্সিকো সরকারের তরফে তাকে ১০ বছরের জন্য ভিসা দিয়েছে।  

একই সঙ্গে তিনি আসামে উৎপাদিত সুপারি ও নারিকেল সেদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে বলে জানান বাংলানিউজকে।  

চলবে...

আরও পড়ুন...
** ভারতের বন-মানব (১): ৪৩ বছরে একাই বালুতটকে বানিয়েছেন ঘন জঙ্গল

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২১
এসসিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।