ঢাকা: বাণিজ্য মেলার প্রথম চারদিন নাগরদোলায় উঠতে একজন দর্শনার্থীকে ৬০ টাকার টিকিট কাটতে হতো। বিনিময়ে তাকে ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত রাইডে ভ্রমণ করানো হতো।
কিন্তু মেলার ৬ষ্ঠ দিন শুক্রবারে (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে) এসে সেই একই টিকিট কাটতে হচ্ছে ৪০ টাকা বেশিতে, ১০০ টাকায়। এমনকি সময় কমিয়ে তাকে মাত্র ১০-১৫ চক্কর ঘুরিয়েই নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।
শুধু নাগরদোলাতেই নয়, বাণিজ্য মেলার বাকি ৮টি রাইডের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই চিত্র।
যে টিকিটের মূল্য ছিল ৬০ টাকা, তা এদিন ৪০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা! আর যে টিকিটের মূল্য ছিল ৮০ টাকা, ছুটির দিনে এসে সেই একই টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। পাশাপাশি রাইডের সময়ও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের।
২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিন শিশুদের বিনোদনকেন্দ্র ঘুরে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে চড়া মূল্যে টিকিট বিক্রির এমন চিত্র উঠে এসেছে।
মেলায় নাগরদোলার টিকিট বিক্রি করছেন ফজলুল হক (৫৫) নামের এক ব্যক্তি। মেলার পাশেই ৮ নম্বর সেক্টরে তার বাসা। টিকিটের কোনো নির্দিষ্ট মূল্য আছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কাকা কি কমু আপনারে, মেলা শুরুর প্রথম কয়দিন লোক ছিল না। তখন তেমন ব্যবসা হয় নাই। হারাদিনই বইয়া থাকতাম। তখন নাগরদোলার টিকিটের দাম রাখতাম ৬০ টাকা করে। তবে আজইকা একটু লাভ করতে পারমু। সাপ্তাহিক ছুটির দিন, লোকও বেশি। তাই ১০০ টাকায় টিকিট বেচতেছি। ’
বাণিজ্য মেলায় প্রতিবারই শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকে নানা আয়োজন। এবারও এর ব্যতিক্রম নেই। শিশুদের বিনোদনের জন্য এবারের মেলায় রয়েছে নাগরদোলা, মিনি রেলগাড়ি এবং ওয়াটার রাইডসহ মোট ৯ ধরনের রাইড। সঙ্গে রয়েছে শিশুদের ভৌতিক বিনোদনের জন্য ভূতের বাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাণিজ্য মেলায় চাইলে যে কেউ ১০০ টাকায় নাগরদোলায় চড়তে পারবেন। ১৫০ টাকায় ১০ মিনিটের জন্য ওয়াটার রাইড উপভোগ করা যাবে। ভূতের বাড়িতে ১০ মিনিটের জন্য ঘুরতে পারবেন ১০০ টাকায়। ১০ মিনিটের জন্য স্লিপার রাইডে চড়তে পারবেন ১৫০ টাকায়।
তবে সরেজমিনে বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের বিনোদনের জন্য ব্যবস্থা করা রাইডগুলোর কোনোটারই মূল্য তালিকা নেই। এমনকি দর্শনার্থীদের কাউন্টার থেকে যে টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তাতেও কোনো মূল্য লেখা নেই। শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রের সবগুলো রাইডের জন্য টিকিটের মনগড়া মূল্য রাখাছেন রাইডের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। এমনকি সময়ও নির্ধারণ করা নেই। দায়িত্বে এসব কর্মীদের বেশিরভাগই স্থানীয় বাসিন্দা।
আম্মু ট্রেনে উঠবো, ট্রেনে উঠবো বলেই থমকে দাঁড়ালো শিশু আবির নূর নোমান (৭)। মূলত মিনি এই ট্রেন দেখে শিশু আবিরের এই বায়না। বাবা-মা দুজনেই কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ছেলের বায়নার কাছে। অবশেষে ছেলের চাওয়া পূরণ করতে হলো তাদের। ট্রেনে উঠেই আনন্দে লাফালাফি শুরু হয় শিশুটির।
মেলায় শিশুদের জন্য রয়েছে ৬ বগি বিশিষ্ট এই মিনি রেলগাড়ি রাইড। মাত্র বিশ মিটারের মত যায়গা ১৯ বার চক্কর দিতে আপনাকে গুণতে হবে ৮০ টাকা। যার ভাড়া সাধারণ ট্রেনের থেকে কয়েক গুন বেশি। তবুও শিশুদের আনন্দ-বিনোদন দিতে অভিবাবকরা তাদের সন্তানদের এই মিনি রেলগাড়িতে ভ্রমণ করাচ্ছেন।
এদিকে, রাইডগুলো মূলত শিশুদের জন্য হলেও চাইলে সঙ্গে উঠতে পারবেন অভিবাবকরাও। এমনটাই জানান মিনি রেলগাড়ি রাইডের দায়িত্বে থাকা টিকিট বিক্রেতা রানা হামিদ ফারহান।
এভাবে প্রতিদিনই মেলায় আসা শিশু-কিশোরদের বায়না পূরণ করতে হচ্ছে মা-বাবাদের। এসব রাইডে চড়ার মূল্য বেশি হওয়াতে অধিকাংশ অভিভাবকের আপত্তি থাকলেও সন্তানের আবদার মেটাতে তারা এগুলোতে ওঠাচ্ছেন। অনেকে আবার কেবল বাচ্চাদের বিনোদনের জন্যই এসব রাইডে চড়াচ্ছেন। তবে দায়িত্বে থাকা লোকজন শিশুদের কম সময় ঘুরানো এবং রাইডের অতিরিক্ত মূল্য রাখছেন বলেই অভিযোগ বেশিরভাগ অভিভাবকের।
তবে টিকিট বিক্রয় কর্মীদের বেশিরভাগের ভাষ্য, প্রতিদিন তাদের যে দাম বলে দেওয়া হয়, তারা গ্রাহকদের থেকে সেই দামই রাখছেন। তাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো মূল্য তালিকা বা টিকিট নেই।
বাণিজ্য মেলায় শিশুদের বিনোদনের মূল্য কত? জানতে চাইলে মেলা পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী (ইপিবির সচিব) বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের জন্য যারা রাইডের ব্যবস্থা করেছেন, তাদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে একটা মূল্য দেয়া হয়। তবে তাতে আমরা কোনো সম্মতি দেইনি। মোট কথা, দাম এখনো নির্ধারণ করিনি। দাম বেশি মনে হচ্ছে দেখে, আমরা আগামী রোববার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় তাদের সঙ্গে মিটিং রেখেছি। আমরা চাচ্ছি, আমাদের মেলা কমিটি সরাসরি রাইডগুলো দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে যে, কোন রাইডের দাম এবং রাইডের সময়ের স্লট কত হওয়া উচিৎ। পরবর্তীতে দামের বেশ কম হলে কেউ অভিযোগ করলে ভোক্তা অধিদফতর ব্যবস্থা নেবেন।
রোববারের (৮ জানুয়ারি) পর দাম ফিক্সড হয়ে যাবে বলে জানান ইপিবির এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৩
ইএসএস/এনএস