ঢাকা: কানাডিয়ান উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সফররত কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার হারজিৎ এস সজ্জন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এগ্রো-প্রসেসিং শিল্পসহ যেকোনো সেক্টরে কানাডিয়ান বিনিয়োগকারীরা এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে।
তিনি বলেন, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তার সরকার প্রক্রিয়াতকৃত খাদ্য রপ্তানি করতে এগ্রো-প্র্রসেসিং শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে।
আয়তনে ছোট বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় মানুষের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত খাদ্য দিয়ে অন্য দেশকে সহায়তা করার জন্য সরকার ছোট জায়গায় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, অধিক উৎপাদনশীল বিভিন্ন ফসলের জাত উন্নয়নে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা খুবই সফল।
শেখ হাসিনা বলেন, একসময় দেশের বড় একটা অংশ অনাবাদি থাকতো, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে। লবণাক্ত সহিষ্ণু, খরা-সহিষ্ণু এবং জলমগ্ন সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেগুলো চাষের আওতায় আনা হয়েছে।
সফররত কানাডিয়ান মন্ত্রী বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে কাজ করতে চায়, বিশেষ করে খাদ্য সংরক্ষণ উন্নয়নে।
বাংলাদেশে কৃষি এবং শিক্ষা উন্নয়নের প্রশংসা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বড় পরিসরে কৃষি খামার গড়ে তোলার প্রশংসা করেন কানাডিয়ান মন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কল্যাণকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সার, সেচ, কৃষি বীজ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভুর্তকিসহ এবং অন্য অনেক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয় কর্মসূচি চালু করেছে। কৃষকরা তাদের টাকা সঞ্চয় করতে পারছেন এবং সেখান থেকে ধারও নিতে পারেন।
সেচ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতি সংরক্ষণে সরকার ভূ-গর্ভস্ত পানির পরিবর্তে বৃষ্টির পানি এবং ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের এসব নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে পাঠাতে কানাডার সহযোগিতা চান।
কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আবাসনের জন্য নোয়াখালীর ভাষানচরে স্থানান্তরের জন্য চরটির আরও উন্নয়নে কানাডার সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, অপেক্ষাকৃত ভালো জীবনমান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে ভাষানচরকে উন্নত করেছে। একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গাকে এরই মধ্যে সেখানে স্থানান্তর করেছে।
তিনি বলেন, অধিকতর ভালো জীবনমান দিতে ভাষানচরের আরও এলাকা উন্নত করা গেলে কক্সবাজার থেকে সেখানে আরও রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা যাবে। এক্ষেত্রে দাতাদের কাছ থেকে সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী।
অত্যাধিক ঘনবসতিপূর্ণ কক্সবাজার ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা মানব পাচার, মাদক চোরাচালান এবং অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে সেখানকার নারী-শিশুদের জন্য। তারা যদি ভাষানচরে যায় তবে তারা সুন্দর জীবন পাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ মূলত অভিযোজন এবং প্রশমনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুযোগের সময় সরকার জানমালের ক্ষতি কমানোতে বেশি মনযোগ দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উপকূলে সবুজ বেস্টনি, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ঘুর্ণিঝড় সহিষ্ণু বাড়ি নির্মাণ করার কথা উল্লেখ করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার লাইলি নিকোলস।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এমইউএম/জেএইচ