ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

তিন দশকে বাজারে বড় রূপান্তর

অলংকার থেকে যেভাবে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ স্বর্ণ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
অলংকার থেকে যেভাবে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ স্বর্ণ

১৯৯০ সালের শুরুর দিকে, তখনো সোনার বাজারে মূল চালিকাশক্তি ছিল ভোক্তার চাহিদা। বিশেষ করে ১৯৯২ থেকে ২০০২ পর্যন্ত সময়ে সোনার বেশির ভাগ চাহিদা ছিলো অলংকার ও প্রযুক্তি খাতের উপকরণ হিসেবে।

এর পরই চিত্রটি বদলে যেতে থাকে। গত এক দশকে সোনার বার্ষিক চাহিদার ৪৪ শতাংশ ছিল অলংকার ও প্রযুক্তি খাতে। বাকি চাহিদা তৈরি হয় ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে। গত তিন দশকে সোনার বাজারে যে রূপান্তর ঘটেছে এ নিয়ে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডাব্লিউজিসি) ‘৩০ ইয়ারস অব গোল্ড ডিমান্ড ট্রেন্ডস’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সঞ্চিত সম্পদ হিসেবে সোনার বাজারের ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের। কিন্তু বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় আবশ্যকীয় সম্পদ হিসেবে সোনার অবস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গত ৩০ বছরে। সে কারণে বেড়েছে দামও। ১৯৯২ সালে সোনার দাম ছিল প্রতি আউন্স প্রায় ৩৩০ ডলার। আর ২০২২ সালে এসে সোনার মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স এক হাজার ৮১৪ ডলার। বার্ষিক গড়ে ৫.৮ শতাংশ রিটার্নের মধ্য দিয়ে সোনা আর্থিক গুরুত্বে নগদ অর্থ, বন্ড ও পণ্যকে অতিক্রম করেছে। ১৯৯২ সালে যেখানে সোনার বার্ষিক উৎপাদন ছিল দুই হাজার ২৭০ টন, ২০২২ সাল শেষে তা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬১২ টনে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনা যেভাবে মূল্যবান হয়ে উঠেছে তা একটি কারণে হয়নি। বরং এর পেছনে বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান। একটি কারণ হলে গত ৩০ বছরে সোনা এত টেকসই হতো না।

কিটকো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডাব্লিউজিসির বৈশ্বিক গবেষণা প্রধান জন কার্লোস আর্টিগাস বলেন, ‘গত ৩০ বছরে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে স্থিতিশীল মূল্যবান সম্পদ হিসেবে যুক্ত হয়েছে সোনা। প্রাতিষ্ঠানিক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে সোনার চাহিদায় যে রূপান্তর ঘটেছে, তাতে মনে হচ্ছে সোনা যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরো মূল্যবান। ’ তিনি বলেন, ‘অর্থবাজারে সোনার ভূমিকা নাটকীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ২০০৩ সালে, যখন সোনা সমর্থিত এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড তহবিল বা গোল্ড ইটিএফ চালু করা হলো। এতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সোনা ক্রয় সহজ হয়ে গেল। বিনিয়োগকারীরা এখন সেভাবেই সোনা কিনতে পারছেন, যেভাবে স্টক কিনতে পারেন। ’

ডাব্লিউজিসি জানায়, গত ৩০ বছরে এশিয়ার যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তা সোনার বাজারে চাহিদা বাড়িয়েছে। বর্তমানে সোনার চাহিদায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে এশিয়া অঞ্চল। তিন দশক আগে বিশ্বের মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশ ছিল এশিয়ায়, বর্তমানে চাহিদার ৬০ শতাংশই এ অঞ্চলে। চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এ চিত্র বদলাতে ভূমিকা রেখেছে। চীন বর্তমানে সোনার সবচেয়ে বড় ভোক্তা ও উৎপাদক দেশ।

ডাব্লিউজিসির মতে, গত তিন দশকে সোনার বাজার বিকাশে আরেকটি বড় কারণ ছিল মূল্যবান মুদ্রা ধাতু হয়ে ওঠা। দুই দশকে সোনার বড় বিক্রেতা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সময়ে দাম সর্বনিম্ন হওয়ায় ব্যাপকভাবে সোনা বিক্রি করে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। ২০০০ সালের শুরুতে ব্যাংক অব কানাডাও বিপুল সোনা বিক্রি করে। কিন্তু গত এক দশকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়ে উঠেছে সোনার নিট ক্রেতা। ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা ক্রয় করে এক হাজার ১৩৬ টন, যা ১৯৬৭ সালের পর সবচেয়ে বড় ক্রয়।

অর্থনৈতিক সংকট আর মূল্যস্ফীতির বিপরীতে সোনার মজুদ বাড়িয়ে চলেছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালে বিশ্বে সোনার চাহিদা ১৮ শতাংশ বেড়ে হয় চার হাজার ৭৪০.৭ টন, যা ২০১১ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে এক-পঞ্চমাংশ।

বর্তমানে গোটা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনার মজুদ সবচেয়ে বেশি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে। দেশটিতে মজুদকৃত সোনার পরিমাণ আট হাজার ১৩৩ টন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এর পরিমাণ তিন হাজার ৩৫৫ টন।

আর্টিগাস বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক সোনার চাহিদার ১০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর। সংকটে সোনার পারফরম্যান্স অত্যন্ত ভালো। বিশেষ করে সঞ্চিত মূল্যবান ধাতু হিসেবে সোনার ভূমিকা দীর্ঘমেয়াদি। এসব কারণেই সোনার বাজার বিকশিত হতে থাকবে। ’

সূত্র : কিটকো নিউজ, ডাব্লিউজিসি, রয়টার্স

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।