ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

দ. এশিয়ার বড় ইকোনোমিক জোন হতে যাচ্ছে পায়রা বন্দর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
দ. এশিয়ার বড় ইকোনোমিক জোন হতে যাচ্ছে পায়রা বন্দর

ঢাকা: পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হলে দক্ষিণ এশিয়ার বড় ইকোনোমিক জোন হবে দেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর পায়রা। অন্যান্য বন্দর থেকে এখানে ব্যয় সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ কম হবে।

তাই দেশের প্রথম স্মার্ট ও গভীরতম এই সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বিআইডব্লিউটিএ মিলনায়তনে পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এই সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে একটি কার্যকর বন্দর করতে বিভিন্ন সমস্যা ও পরামর্শ তুলে ধরেন। জবাবে কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।  

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ বন্দরে এখন পর্যন্ত ২৯৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ হ্যান্ডেলিং করে মোট ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। দক্ষিণের পটুয়াখালির রাবনাবাদে অবস্থিত এই বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে চার হাজার ৫১৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আগামী মে মাসের মধ্যে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে জানান বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল।

বন্দর নির্মাণে এক দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ( ১৬০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করার কথা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রথম টার্মিনালের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মে মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। যেখানে থাকছে চারটি জেটি।

আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে এই বন্দরের চ্যানেলটি দেশের গভীরতম চ্যানেলে পরিণত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৫ মার্চের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিকটনের জাহাজ চ্যানেলে প্রবেশ করবে। চ্যানেলের গভীরতা বাড়াতে বিআইডব্লিউটিএ কাজ করছে। আগামী মাস থেকে ২০০-২২৫ মিটারের জাহাজ প্রতিদিন বন্দরে আসবে।
 
তিনি বলেন, এ বন্দর থেকে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত সহজ হবে। কম সময়ে যাতায়াত, অল্প ব্যয়, যানজটমুক্ত স্মার্ট সার্ভিস পাবেন সাবাই। তাহলে তো বন্দর ব্যবহার না করার কোন কারণ নেই। তাছাড়া দেশের প্রায় ৭০ ভাগ ফ্যাক্টরি ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায়। পায়রা বন্দর যদি ঢাকার সবচেয়ে কাছাকাছি হয় তাহলে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সবাই এই বন্দর ব্যবহার করবেন।

আড়াই হাজার বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর নির্মাণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগমী ১৫ বছরের মধ্যে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসকে অতিক্রম করতে চাই। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পায়রা বন্দরে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিচ্ছে।

বন্দরের উন্নয়নে ৪০০ মেগাওয়াটের সোলার প্ল্যাট নির্মাণের কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চ্যানেলে পলি নিয়ে আপনারা কেউ ভাববেন না। এটা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। জেটি ও টার্মিনালের পাশে ১৭ থেকে ১৮ মিটার গভীরতা থাকবে।

শিল্পায়নের জন্য প্রকল্পে দেড় হাজার একর জমি রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আড়াই বছরের মধ্যে আন্ধারমানিক নদীতে সেতু নির্মাণ করা হবে। অর্থাৎ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পায়রা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। ইতোমধ্যে অনেক দেশি-বিদেশি শিপ হ্যান্ডেলিং করা হয়েছে। আগামী এক বছরে বন্দরের আয় বাড়বে ১০ গুণ। বন্দর ঘিরে দ্রুত বিমানবন্দর নির্মাণ করা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নৌ-সড়ক-রেলসহ আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য এই বন্দর সহজ পথ দেখাবে।  

লাইটার জাহাজের জন্য সেভ জোন করার কথা জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, বন্দর পরিচালনায় পরামর্শক কমিটিসহ এক বছরের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসবে।    

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ক্যাপ্টেন জাহিদ হোসেন। বন্দরের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ক্যাপ্টেন শফিকুর রহমান, বন্দরের প্রধান হাউড্রোগ্রাফার কমান্ডার মাহমুদুল হাসান খান ও বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক আতিকুল ইসলাম।  

টার্মিনালের অনেক সুযোগ সুবিধার বিষয় অনুষ্ঠানে পরিষ্কার করা হয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল আলী শিমুল পণ্য আমদানি-রপ্তানি কাজে বন্দর ব্যবহারে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।  

বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল অ্যাসোসিয়েনের সভাপতি শেখ মাহফুজ হামিদ বলেন, মাদার ল্যান্ড অপারেশন (এমএলও) সংগঠনের লোকদের আন্তরিকতা ছাড়া বন্দরে কন্টেইনার আসবে না। তাই সংগঠনের লোকদের বন্দরের সুযোগ সুবিধা বোঝাতে হবে। বিপিসিকে বন্দরে তেল টার্মিনাল করারও পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক বলেন, নানা কারণে পায়রার চেয়ে মোংলা বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সহজ। মালিকরা মোংলাকে প্রাধান্য দেন- এই ভুল ভাঙতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের অত্যাচারে একেবারেই অতিষ্ঠ। আরেক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ মুহাম্মদ বখতিয়ার ব্যবসা বান্ধব ও দূষণমুক্ত বন্দর তৈরির পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ ট্রেড ফর অর্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমন হাওলাদার বলেন, ভোগান্তি কমাতে বন্দরে দ্রুত কাস্টমস্‌ হাউজ নির্মাণ, ডেডিকেটেড অনলাইন ব্যবস্থা, ইপিজেড নির্মাণ, পর্যাপ্ত কন্টেইনার রাখা, ডিজি কন্টেইনার কর্গো হ্যান্ডেলিংয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, লাইটার জাহাজ যেন দ্রুত সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বন্দরে আসতে পারে সে ব্যবসস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
টিএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।