ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঈদে রেশম পণ্যের আভিজাত্য মন কাড়ছে সবার

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
ঈদে রেশম পণ্যের আভিজাত্য মন কাড়ছে সবার

রাজশাহী: যুগ পাল্টাচ্ছে। পাল্টাচ্ছে মানুষের ফ্যাশন ও অভিরুচি।

কিন্তু কিছু পছন্দ চিরঞ্জীব হয়ে থাকে সব সময়ের জন্যই। তেমনই একটি পণ্য রেশম। সময়ের বিবর্তনে রেশমের সেই জৌলুশ নেই ঠিকই। তবে ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে এখনও অনন্য রেশমি পোশাক। আজও তাই ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই সমান আকর্ষণ বহন করছে রেশমি পোশাক। আর রাজশাহী ও রেশম যেন একই সুতায় গাঁথা। একটির জন্য পরিচিত হয় অন্যটি। তাই আমের জন্য যেমন খ্যাত রাজশাহী, তেমনি রেশমের জন্যও।

গোটা দেশে রাজশাহী আজও তাই রেশম নগর বলেই পরিচিত হয়। অর্থাৎ রেশমের নাম নিলেই রাজশাহীর নাম ওঠে। আর রাজশাহীর নাম নিলেই ওঠে রেশমের নাম। যেন একে অপরের এক পরিপূরক পরিচিতি বহন করছে যুগ থেকেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচি ও ফ্যাশন নিত্য নতুনই বদলাচ্ছে। কিন্তু এই মর্ডান ফ্যাশনের ভিড়েও অমলিন রেশমের ঐতিহ্য। সহস্র পণ্যের মাঝেও বাঙলা ও বাঙালি সংস্কৃতিতে রেশমের আভিজাত্য রয়েছে অটুট। সারাবছর তো বটেই ঈদ মৌসুমেও তাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে এই রেশমি পণ্য।

রেশমি পোশাক পোশাক ছাড়া রাজশাহীর মানুষের ঈদ আনন্দ প্রতি বছর যেন অপরিপূর্ণই হয়ে থাকে। অনেক ধরনের পোশাক কেনাকাটার তালিকায় থাকলেও একটি হলেও রেশম পোশাক থাকবেই। হোক পাঞ্জাবি, শাড়ি কিংবা রেশম কাপড়ে তৈরি থ্রিপিস এবং অন্য কোনো পোশাক। ঈদের পোশাকে রেশমের রেশমি স্পর্শ যেন চাই-ই চাই। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদ। শেষ মুহূর্তে তাই জমে উঠেছে রাজশাহীর রেশম বাজার।

ঈদুল ফিতর যতই ঘনিয়ে আসছে। ততই বাড়ছে বেচা-কেনা। ঈদের কেনা-কাটা সারতে বিসিক নগরীর সিল্ক শো-রুমগুলোতে এখন সকাল হলেই ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। ভিড় থাকছে গভীর রাত পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরো বছরই কেনা-কাটা হয়। তবে দুই ঈদে বেচা-কেনা সবচেয়ে বেশি হয়। যে কারণে এই সময় তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

আর ঈদ মৌসুমে তাদের প্রস্তুতিও বেশি থাকে। দুই ঈদে তারা ক্রেতাদের পোশাকে বৈচিত্র্য আনতে নতুন কিছু দেওয়ার প্রয়াস চালান।  এবারও সাধ্যমত কিছু স্বতন্ত্র ডিজাইন নিয়ে এসেছেন রুচিশীল ক্রেতাদের জন্য।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, রেশমের হ্যান্ড প্রিন্ট ও আর্ট প্রিন্টের ডিজাইনে বেশকিছু ভ্যারাইটি থাকছে এবার। আর নতুন নতুন ডিজাইনগুলোতেই ক্রেতারা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন। কেবল রাজশাহীর মানুষ নয় তাদের শো-রুম থেকে পাইকাররাও পোশাক নিয়ে যাচ্ছেন। যারা ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে আকর্ষণীয় নাম দিয়ে সেগুলো বিক্রি করছেন। বিসিকের এই সিল্ক শো-রুমগুলোতে রেশমের তৈরি পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শাড়ি, ওড়না, শার্ট বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।

রাজশাহীর বিসিক শিল্প নগরীর সব চেয়ে বড় ফ্যাক্টরি এবং শো-রুমের নাম হচ্ছে- ‘সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেড’। তাই ঈদে সব শ্রেণির ক্রেতাদের আগ্রহের মূল কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় এই প্রতিষ্ঠানের শো-রুম। নতুনত্ব তৈরিতে সবার শীর্ষেই থাকেন তারা।

এখানে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন- আফরোজা খানম নামের এক গৃহিণী।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মধ্য রমজান থেকে কেনাকাটা শুরু করেছেন। অনেক কিছুই কিনেছেন। কিন্তু রেশমী শাড়ি ছাড়া কী হয়? তাই শাড়ি কিনতে এসেছেন।

সেসঙ্গে স্বামীর জন্য পাঞ্জাবিও নেবেন। শেষ সময় বলে ভিড় বেশি। তাই ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই নতুন নতুন কালেকশন থেকে স্বতন্ত্র শাড়িটি কিনতে চান বলেও জানান আফরোজা খানম।

আরেক তরুণী ফারহানা শিল্পী জানান, সিল্কের পণ্যের আভিজাত্যই আলাদা। তাই প্রতি বছর ঈদেই তিনি অন্য থ্রি-পিসের সঙ্গে একটি হলেও রেশমের থ্রি-পিস কেনেন। সেই ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম হচ্ছে না এবার। আর এ বছর অনেক সুন্দর সুন্দর কালেকশন এসেছে। সবগুলোই তার কাছে ভালো লাগছে।

কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তবে গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার সিল্ক পণ্যের দাম কিছুটা বেশি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

কথা হয়, সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের শো-রুম ম্যানেজার সাইদুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে শেষ মুহূর্তে তাদের শো-রুম জমে উঠেছে। রমজানের শুরু থেকে বিক্রি শুরু হলেও এখনই ভিড় বেশি। সকাল থেকেই শো-রুমে ক্রেতা সমাগম ঘটছে। আর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ক্রেতারাও আসছেন।

রেশম পোশাকের দাম প্রশ্নে- সাইদুর রহমান বলেন, তাদের শো-রুমে রেশম ও মসলিনের পাঞ্জাবি ও শাড়ির বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের পাঞ্জাবি ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। সিল্কের থ্রিপিস ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার এর ওপরেও রয়েছে। আর শাড়ি ২ হাজার ৫৫০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা এবং তার ওপরেও রয়েছে। সিল্ক ছাড়াও সুতির পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। মসলিন সিল্ক রয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে।

আর মটকা সিল্ক রয়েছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। সিল্কের শার্ট রয়েছে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকার মধ্যে। ফুলহাতা ও হাফহাতা ডিজাইনের বিভিন্ন রঙের ফতুয়া রয়েছে সাড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। সুতি শার্ট রয়েছে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। কাটোয়ার ডিজাইনের শাড়ি, সফট সিল্ক শাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।  

এন্ডি সিল্ক রয়েছে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়। বলাকা সিল্ক রয়েছে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়। র-মসলিন রয়েছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। বলাকা স্টিজ শাড়ি রয়েছে ৬ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া রয়েছে পার্টি ড্রেস, কন্ট্রাস্ট থান শাড়ি, সুুতি পোশাক, স্যান্ডেল ও জুতাসহ বাহারি সব পণ্যের সমারোহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
এসএস/এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।