ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নতুন দরিদ্র: বিআইডিএস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নতুন দরিদ্র: বিআইডিএস

ঢাকা: মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ শতাংশই নতুন দরিদ্র বলে তথ্য প্রকাশ করেছে সরকারের উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।

বিআইডিএস বলছে, এই নতুন দরিদ্ররা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে।

সংকটে থাকা এই শ্রেণির ওপর খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিআইডিএসের রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এই সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

বিনায়ক সেন বলেন, করোনা পরবর্তী সময় দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। যাদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তারা তা ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস আত্তীকরণ দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, মোট দরিদ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন দরিদ্র। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে। সংকটে থাকা এই শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, লকডাউনের সময়টা বাদ দিলে করোনার সময়ই শুধুমাত্র ঢাকা শহরে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ এ দারিদ্র্য কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময়ে অতি দারিদ্র্য কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।  

এই দারিদ্র্য কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তা। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ কিছু না কিছু করেছে।

২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এই গবেষণা করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর তা বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়।

২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করত। করোনার পর অর্থাৎ ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। করোনার আগে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের ব্যাংক হিসাব ছিল। পরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

অন্যদিকে অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে এসব পরিবারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করত। করোনার পর সেটি বেড়ে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। এই ধরনের অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়েনি।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আগে মানুষ এত গরিব ছিল যে তখন বৈষম্য নিয়ে চিন্তা ছিল না। একবেলা খেয়ে অন্য বেলায় খেয়েছে কি না সেটি বড় কথা ছিল।  এখন সবাই তিন বেলা খেতে পারে। এ কারণে বৈষম্য নিয়ে কথা আসছে। সম্পদ যখন সৃষ্টি হয় তখন বৈষম্য অবধারিত। বৈষম্য প্রশমনে আমরা কাজ করছি।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার সময় দারিদ্র্য বেড়েছিল, এটা ঠিক। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগে কমানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানা বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনি।

আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, সার এবং অপরিশোধিত তেলের দাম। যার প্রভাব পড়েছে দেশে। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জাতীয় কল্যাণ ২ শতাংশ কম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কৃষি খাত। ভর্তুকি সার বিক্রি উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু এর চেয়ে সঠিক পন্থা ছিল দারিদ্র্য কমানোর জন্য নগদ অর্থ দেওয়া।  

২০২২ সালের প্রথম দিকে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়তে থাকে। শুধুমাত্র ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাড়ানো হয়েছিল। তবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরে ২০২২ সালে জুলাইয়ে এ হার আরও বাড়ে। বিভিন্ন সারের দামও ব্যাপক বেড়ে যায়। কিন্তু দেশে দাম কম ছিল ভর্তুকির ফলে। ফলে সরকারের ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি হয়। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে খাবারের দাম ধীরে ধীরে বেড়েছে। চাল, গম, ভুট্টা এবং ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক মূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু ২০২২ সালের মে থেকে এ পণ্যগুলোর দাম কমলেও দেশীয় বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন হয়েছে।

আরেক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও তা এখনও কাঙ্ক্ষিত নয়। নারীরা গৃহস্থালির কাজে বেশি যুক্ত থাকায় তাদের অন্যক্ষেত্রে দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না। ফলে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
এসএমএকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।