ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমদানির আভাস

পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরায় কমেনি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরায় কমেনি

ঢাকা: লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে আমদানি করা হবে—এমন খবরে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা কমে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা এবং খুচরা বাজারে আগের দামেই ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্চ থেকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে, ফলে দাম বেড়েছে। উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত মাস পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এ মাসে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। তবে গত দুই দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার কমতির দিকে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা হবে—এমন আভাস পাওয়া যাওয়ায় দাম কমেছে।

প্রসঙ্গত, কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকার গত ১৫ মার্চ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র বন্ধ করে দেয়। ফলে এখন চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজে।

রোববার (২১ মে) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে পাইকারিতে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকায়। অথচ দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। আর গত ঈদের আগে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২২ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। তবে শ্যামবাজারের কিছু আড়তে আমদানি করা পেঁয়াজ দেখা গেছে। গত শনিবার থেকে রাতে অবৈধভাবে ভারতের কিছু পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকারি বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের দাম কামলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আগের দামেই ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর ঈদের আগে খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

রোববার সকালে সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানি হবে কিনা সেটা আগামী দুই একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দ্রুত ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৪৫ টাকার বেশি পেঁয়াজের দাম হওয়া উচিত না। পেঁয়াজ আমদানি করা হলে ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে।

এ বিষয়ে সুত্রাপুর বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলরাম পোদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, গত এক মাস ধরেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে আমাদের কেনাই বেশি পড়ছে। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাবে পড়েছে। মাল কিনতে গেলে বড় ব্যবসায়ীরা বলে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ, তাই দাম বাড়তি। এখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা কী করবো, আমাদের তো বেশি দামে কেনা। সেটা শেষ না হলে কম দামে পেঁয়াজ দেওয়া যাবে না।

সুত্রাপুরে বাজার করতে আসা হারুন রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার আমদানি করবে সেই ঘোষণায় পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি। বাজারে ৮০ টাকার নিচে পেঁয়াজ নেই। আজকে বাজারে কিছু ভারতের পেঁয়াজ দেখা যাচ্ছে। তবে সে পেঁয়াজেরও দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বলছে, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ নেই বলে দাম বেড়েছে।

শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রাজিব বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার বলেন, বর্তমানে বেশি দামের আশায় পেঁয়াজের দেশি মাহাজনরা বা পেঁয়াজের বড় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছে। তারা বাজারে পেঁয়াজ ছাড়ছে ধীর গতিতে। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি পড়েছে। সরকারের উচিত হবে দ্রুত আমদানির অনুমতি দিয়ে দেওয়া।

তবে গত শনিবার থেকে পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। কারণ বাণিজ্যমন্ত্রী যেই বলেছেন, প্রয়োজনে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা হবে। তখন থেকেই বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা করে কমেছে। আমদানির অনুমতি দিলে সেটা কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে যাবে বলে বলে জানান তিনি।

রাজিব বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার আরও বলেন, বর্তমানে আমরা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫৬ থেকে ৬২ টাকা দরে। খুচরা বাজারে কত করে বিক্রি হচ্ছে সেটা জানি না। তবে গত দুই দিন ধরে শ্যামবাজারে ভারতের পেঁয়াজ ঢুকছে। সেটা খুবই সামান্য। হিলিবন্দর দিয়ে রাতে কিছু পেঁয়াজ ঢুকছে, সে খবর পেয়েছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়, তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে কেজিতে ৮০ টাকায় ঠেকেছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, বৃহস্পতিবারও খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আজও একই দাম চলছে বাজারে। টিসিবির বাজার পর্যালোচনার তথ্য মতে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১২১.৪৩ শতাংশ। গত বছর এই সময় বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৮ থেকে ৫০ টাকায় অর্থাৎ এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭৬.১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।