ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঈদের তৃতীয় দিনও চামড়া কিনছেন লালবাগের পোস্তায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৩
ঈদের তৃতীয় দিনও চামড়া কিনছেন লালবাগের পোস্তায়

ঢাকা: ঈদের তৃতীয় দিনও বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া আসছে লালবাগের পোস্তায়। এদিন দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কোরবানির পশুর চামড়া পোস্তায় আসছে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কেনা চামড়া লালবাগের পোস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। আড়তদাররা দুপুর থেকেই এসব চামড়া কেনা শুরু করেছে। যা চলবে আগামী এক মাস। তবে পোস্তায় ফড়িয়া কমলেও কয়েকগুণ বেড়েছে মাদ্রাসার লোকজনের আনা গোনা।

শনিবার (০১ জুলাই) দুপুরে লালবাগের পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, লালবাগের পোস্তায় দুপুর থেকেই তৃতীয় দিনও কোরবানির পশুর চামড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসছেন। আর আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের অলিগলি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন। তবে ঈদের দুই দিন যেভাবে চামড়া এসেছিল তৃতীয় দিন সেভাবে চামড়া আসে না। কেননা তৃতীয় দিন কোরবানি কম হয়। তাই চামড়াও আসে কম। পোস্তায় চামড়া আসার পরে প্রথমে লবণজাত করা হবে। ১০ থেকে ১৫ দিন পরে এসব চামড়া সাভারের ট্যানারিগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  

এ বিষয়ে ছমির হানিফ অ্যান্ড সন্সের মালিক হাজী মো. ছমির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আজকে যেসব গরু কোরবানি হয়েছে সেগুলোর চামড়া আসতে শুরু করেছে। ঈদের তৃতীয় দিন কোরবানি কম হয়, তাই চামড়াও কম আসে। তবে এবছর ভালো চামড়া এসেছে। আমাদের কাছে আসা চামড়া ফেরত দেইনি। এবছর চামড়া দাম ভালো। এবছর ব্যবসায়ীরা সঠিক সময়ে চামড়া আমাদের কাছে নিয়ে আসায় কোনো চামড়া নষ্ট হচ্ছে না। গত দুই দিন পোস্তায় কোনো চামড়া ফেরত বা ফেলে দেওয়া হয়নি। ফড়িয়ারাও ভালো দামও পেয়েছে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের তৃতীয় দিন কোরবানি কম হয় তাই চামড়াও কম। এদিকে ছোট চামড়ার দাম ৪৫০ টাকা, মাঝারি চামড়ার দাম ৭৫০ থেকে  ৮৫০ টাকা। আর বড় চামড়ার দাম ৮৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার দাম ভালো পেয়েছি।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের তৃতীয় দিনও ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশের কিছু এলাকায় পশু কোরবানি হয়। সে চামড়াটাও আজ দুপুর থেকে আসতে শুরু করেছে। শনিবার দুপুর থেকেই পোস্তার ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া যত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে আনবেন তত ভালো। আমরা আগেও বলেছি চামড়া কেনার সময় যেন ভেবে চিন্তে কেনে। চামড়ার মান বুঝে আমরা দাম দেব।

এদিকে ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সারা দেশে খাসির চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে গতবছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এবছর কোরবানির পশুর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম গতবছরের চেয়ে তিন টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খাসি ও বরকির চামড়ায় দাম গতবারের মতোই রাখা হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির চামড়ার দাম গতবছরের দামই রাখা হয়েছে।  

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা যদি ইচ্ছা করে দাম কমানোর জন্য গেইম খেলে তাহলে আমরা চামড়া বিদেশে রপ্তানির অনুমতি দেবো। চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা চাই না সেটা হোক। এ বছরও আমাদের ঘোষণাটি হলো কারসাজির মাধ্যমে দাম কম নেওয়া, দেওয়া বা চামড়া না নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেবো।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি যা গতবছরের চেয়ে চার লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং দুই হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আট লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে চার লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে চার লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা এক কোটি তিন লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসেবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এ চামড়ার ৬০ শতাংশের বেশি সরবরাহ মেলে কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, দুই দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং এক দশমিক দুই শতাংশ ভেড়ার চামড়া।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৩
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।