ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থাসমূহের সমন্বয় অপরিহার্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থাসমূহের সমন্বয় অপরিহার্য

ঢাকা: বাজারের স্থিতিশীলতা আনয়নে বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থার সমন্বয় অপরিহার্য বলে মনে করছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার।

প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যকার সমন্বয় সুসংহতকরণ” শীর্ষক স্টেকহোল্ডার আলোচনা সভায় তিনি এ মত দেন।

বুধবার (২৩ আগস্ট) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

সভায় স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, স্থানীয় উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর আমাদের অর্থনীতির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। কারণ, বাজারের অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্যোক্তারা যেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তেমনই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও মানের হ্রাসের ফলে ভোক্তারা মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হন।  

তিনি ব্যবসায়ীদের হয়রানিমুক্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা, ভোক্তা অধিকার সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোরারোপ করেন। ব্যারিস্টার সাত্তার ভ্যাট রিটার্ন প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন ও অটোমেটেড হওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসে যৌক্তিক হারে ভ্যাট কমানোর আহ্বান জানান।

এ ছাড়া কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দ্রুতকরণ, বিএসটিআইয়ের সক্ষমতা বাড়ানো এবং এনবিআর, ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নে বেসরকারি খাত এবং সরকারি সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় একান্ত আবশ্যক, বিশেষ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম অধিদপ্তরের কার্যক্রমের সমন্বয় বিশেষভাবে প্রয়োজন।      

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং অন্যান্য খাতেও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে।

দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সহায়ক নীতিমালা নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ব্যবসায়িক কাজে প্রয়োজনীয় ‘স্যাম্পল’ ছাড়করণে যদি সময় বেশি লাগে, তাহলে ব্যবসা চলে যাবে ভিয়েতনামসহ প্রতিযোগী অন্যান্য দেশসমূহে, তাই এক্ষেত্রে সহজীকরণের কোনো বিকল্প নেই।

উত্তর সিটি মেয়র আরও বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সমূহ দ্রুত সংস্কার একান্ত আবশ্যক।

তিনি আরও বলেন, যারা ব্যবসা পরিচালনা অসাধু পন্থা অবলম্বন করছেন, তাদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।  

মেয়র আতিক সিটি করপোরেশনে সব সেবা দ্রুত সময়ে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপস চালু করা হয়েছে বলে জানান এবং নগরবাসীকে তা ব্যবহারের আহ্বান জানান।

উত্তর সিটি করপোরেশনের আতওতাভুক্ত অঞ্চলের জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি সেবা অনলাইনে আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যেটি উদ্যোক্তাদের সময় ও ব্যয় কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

তিনি জানান, উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশান-২ এর ট্রাফিক সিনগ্যালগুলো ‘এআই’-এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জায়গায় তা বাস্তবায়ন করা হবে।

মেয়র বলেন, ইলেকট্রনিক বাস সার্ভিস চালুকরণে লক্ষ্যে বাস আমদানি ও রুট পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

বিশেষ অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তেল-চিনিসহ বেশ কিছু নিত্য পণ্যের স্থানীয় চাহিদা আমরা আমদানির মাধ্যমে মেটাই। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে দেশীয় বাজারে পণ্যের মূল্যে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে স্থানীয় বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার কারণেও আমাদের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে ভোক্তারা মূল্যস্ফীতির শিকার হচ্ছেন।

বাণিজ্য সচিব বলেন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সরকারের কিছু নীতিমালা ও নিয়ম রয়েছে। এগুলোর ব্যবহারে উদ্যোক্তারা আরও বেশি হারে সচেতন হলে হয়রানিসহ অনেক ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।  

তিনি বলেন, পাইকারি পর্যায়ে ‘ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেম’ প্রবর্তন এবং ‘পাকা রশিদ’ দেওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে।

বাণিজ্য সচিব আরও জানান, দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে আমদানি পর্যায়ে শুল্কারোপ করছে, যা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশের অবকাঠামোসহ উন্নয়ন খাতে ব্যয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে গ্যাপ রয়েছে, যেটি নিরসন করা দরকার।  

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অবদান প্রায় ৮২ শতাংশ। বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়ক নীতি সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার বদ্ধপরিকর।   

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রশাসনিক জটিলতা, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশের অনুপস্থিতির কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে আমাদের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচলনায় নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে দেশের ব্যবসায়ীরা সৎভাবে ও সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায় এবং এ জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের মানসিকতার পরিবর্তন।

ফেডারেশন সভাপতি জানান, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসে সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং আগামীতে বাংলাদেশকে একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় জরুরি।

ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মনঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যকার ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি বিজনেস এনভায়রনমেন্ট’ নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান বলেন, এ অধিদপ্তর থেকে কোনো দোকান পরিদর্শন করা হলে মূলত ২৫টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে অনলাইনেই কলকারখানা অধিদপ্তরের লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইন্দোনেশিয়া-বাংলাদেশের মধ্যকার একটি পিটিএ সই প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং জাপানের সঙ্গে ‘ইকোনেমিক পার্টনারশিপ’ চুক্তি সই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, অসাধু চক্রের কারণে আমাদের সৎ ও সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, যা রোধে সবার যৌথ ও সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য।       

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালীসহ খাত-ভিত্তিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা আলোচনা সভায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
এমকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।