ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক বিক্রিতে ভাটা

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক বিক্রিতে ভাটা

নীলফামারী: সরকার পতনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর চলমান অবরোধ আর হরতালে বিদেশ নির্ভর ঝুট কাপড়ের ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে।  

স্থানীয়ভাবে পাইকাররা আসছেন না।

তাই বেচাকেনাও কম। বাইরেও পাঠানো যাচ্ছে না এখানে বানানো জ্যাকেট, প্যান্ট, ট্রাউজারসহ শীতের বিভিন্ন পোশাক। সব মিলিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কয়েকশ জ্যাকেট ও শীতবস্ত্রের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।  

সব পুঁজি বিনিয়োগ করে শীতের কাপড় তৈরি করে চোখে সরষে ফুল দেখছেন এসব মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।  

কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, কয়েকশ ব্যবসায়ী নিজেদের ছোট ছোট কারখানায় তৈরি শীতবস্ত্র সৈয়দপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সড়কের পাশের নিয়ে বিক্রি করেন। তেমন বিক্রি না থাকায় বর্তমানে দোকানে বসে অলস সময় পার করছেন তারা। নিত্যদিনের মতো নেই গ্রাহকের আনাগোনা। অথচ প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারদের পদচারণায় মুখর থাকত বাজারটি। বেচাকেনা নেই বললেই চলে এখানকার বিভিন্ন ডিজাইনের জ্যাকেট, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টসহ বিভিন্ন পোশাকের।
 
ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জসিম গার্মেন্টসের সুন্নু আলম জানান, আমাদের সৈয়দপুরের তৈরি এসব জ্যাকেটের অনেক চাহিদা। তাই সারাদেশ থেকে পাইকাররা এখানে ভিড় করেন। মৌসুমে এখানকার কয়েকশ গার্মেন্টস এখন বসে বসে দিন কাটাচ্ছেন।  

তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণ ও ধার দেনা করে শীতের পোশাক বানিয়ে ক্রেতার জন্য বসে আছেন। হরতাল ও অবরোধে পাইকার ও ক্রেতারা আসছেন না।  

একই কথা বলেন, বিএম ট্রেডিংয়ের বুলবুল, আসফিন গার্মেন্টসের বাবলুসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।  

তারা বলেন, এমনিতে অবরোধের কারণে জেলার বৃহত্তম এ বাজারে ধস নেমেছে। তার ওপর গার্মেন্টসের প্রতিটি পণ্য ও উপকরণের দাম চড়া। আগের মতো আর কম দামে ঝুটও পাওয়া যায় না। আগে এখানকার তৈরি জ্যাকেট, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, সোয়েটারসহ অন্যান্য পোশাক ভারতের শিলিগুড়ি, মেঘালয়সহ বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি হতো। নেপাল, ভুটানেও ছিল এর বাজার। এখন সব বন্ধ। সব মিলে এবার কয়েক কোটি টাকার লোকসান আমাদের। এ সংকট থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ীরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে ভারত থেকে হাজার হাজার পিস পোশাকের ঋণপত্র (এলসি) পাঠাতেন তারা। বেশির ভাগ রপ্তানির অর্ডার আসে ভারতের শিলিগুড়ি, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় থেকে। আমার কারখানায় কয়েক হাজার পোশাক হয়, অর্ডার মাঝে মাঝে এত আসে যে অন্য কারখানা থেকে পোশাক নিয়ে অর্ডার পূরণ করতে হয়। কিন্তু এবার হরতাল ও অবরোধ যেন সব শেষ করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বাইরের কোনো অর্ডার পাইনি।

মূলত শহরের এসব ব্যবসায়ী ঝুট কাপড় কেজি দরে সংগ্রহ করেন ঢাকার মিরপুর, কালিগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানাগুলো থেকে। পরে এসব ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি হয় শীতের বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক। ঢাকা থেকে এসব ঝুট কাপড় প্রতি কেজি ব্লেজার ঝুট ৬০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, জ্যাকেট তৈরির ঝুট ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, জিনসের ঝুট ৬০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে কেনা হয়।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, সৈয়দপুরর ক্ষুদ্র গার্মেন্টস খাত রপ্তানি-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি একটি সম্ভাবনা দেখিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের। তবে বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার অবরোধের কারণে চরম বিপর্যয় নেমেছে তাদের ব্যবসায়। অচিরেই জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।  

তিনি  এ সম্ভাবনায় বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে সরকারকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।