ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কোম্পানি আইন সংস্কার-বাস্তবায়ন সময়ের দাবি: ডিসিসিআই সভাপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
কোম্পানি আইন সংস্কার-বাস্তবায়ন সময়ের দাবি: ডিসিসিআই সভাপতি

ঢাকা: কোম্পানি আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) ডিসিসিআই মিলনায়তনে আয়োজিত ‘কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর সংস্কার’ বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের আস্থা বাড়ানো ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান কোম্পানি আইনের সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি করপোরেট খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে কোম্পানি আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিনের পুরোনো এ আইনটি বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বেসরকারিখাতের সক্ষমতা বাড়াতে যথেষ্ট নয়। এ লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাত্মক ব্যবহারের মাধ্যমে অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার ব্যবহার বাড়ানো ও মেধাস্বত্ব আইনের ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

এ ছাড়া কোম্পানি আইনটি বৈশ্বিক আইনের সঙ্গে মিল রেখে ‘মার্জার’ ও ‘একুইজেশন’কে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। কোম্পানি আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে আরজেএসসির সক্ষমতা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করেন সামীর।      

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া কোম্পানি আইনের ওপর বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যা নিয়ে কাজ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানি আইনে বেশি মাত্রায় ক্ষমতা আরোপ ও শাস্তি দেওয়া বিধান না থাকা প্রয়োজন। কারণ এতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আরজেএসসির কার্যক্রমে আরও অটোমেশন আনয়নে বর্তমানে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে আরজেএসসির শাখা অফিস স্থাপনের কোনো প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবিত কোম্পানি আইনে দেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কীভাবে আরও বেশি সহযোগিতা করা যায়, তা নিরুপণের ওপর জোরারোপ করেন তাপন কান্তি ঘোষ।  

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, কোম্পানি আইনে ‘মার্জার’ ও ‘একুইজেশন’কে অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বর্তমানে কোন কোম্পানির অবলুপ্তির প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়সাপেক্ষ, তাই প্রস্তাবিত কোম্পানি আইনে বিষয়টি সহজীকরণে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া তিনি খসড়া আইনে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর)’ ও ‘মধ্যস্থতা’কে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন। সেইসঙ্গে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি নয়, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনায়নের লক্ষ্যে ‘ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। সব কোম্পানির ক্ষেত্রে ‘কোম্পানি সচিব’ নিয়োগ, কাজের পরিধি নির্ণয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।      

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খান, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসিস) রেজিস্ট্রার (যুগ্ম সচিব) মো. আব্দুস সামাদ আল আজাদ, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান, দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইক্যাব) কাউন্সিল মেম্বার ও প্রাক্তন সভাপতি মো. শাহাদত হোসেন এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাভেদ আখতার অংশগ্রহণ করেন।

শাহাদত হোসেন বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন, প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির প্রক্রিয়া সহজিকরণ ও দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস, এসএমইদের জন্য সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

আব্দুর রহমান খান বলেন, কোম্পানি আইন আধুনিক ও যুগোপযোগী হলে ব্যবসা পরিচালন প্রক্রিয়া আরও সহজতর হবে, তাই আমাদের এ আইন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধন আবশ্যক। পাশাপাশি ২ থেকে ৩ বছর অন্তর অন্তর আইনটির সংস্কার করার বিধান রাখা প্রয়োজন।

আব্দুস সামাদ আল আজাদ বলেন, আরজেএসসির কার্যক্রমে অটোমেশন বাস্তবায়ন হলে এর কার্যক্রম আরও দক্ষতা বাড়বে।  

মার্টিন হল্টম্যান বলেন, আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিদ্যমান কোম্পানি আইনটি সংগতিপূর্ণ নয়। ব্যবসায়িক কার্যক্রম ঝুঁকি হ্রাস, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের ভূমিকাকে কাঠামোবদ্ধ করার জন্য একটি যুগোপযোগী কোম্পানি আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।  

ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
এমকে/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।