ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুঁজিবাজারে আশার আলো, স্বস্তি ফিরছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
পুঁজিবাজারে আশার আলো, স্বস্তি ফিরছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে

ঢাকা: কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে পুঁজিবাজারে সূচকের টানা পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেয়।

এতে করে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট কাটতে শুরু করে।  

তবে দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ধাক্কা লাগে। বিনিয়োগ আটকে যাওয়ায় কেউ চাইলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছিলেন না। তেমনি আটকে থাকা শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোম্পানির শেয়ারেও বিনিয়োগের সুযোগ ছিল না। অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করতে না পারায় লেনদেনে স্থবিরতা দেখা দেয়। যুক্ত হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, এতে বিনিযোগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।  

তবে দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখা দিলে বাজারে লেনদেনে চাঙ্গাভাব দেখা দেয়। একই সঙ্গে প্রায় দেড় বছর পর বিএসইসি পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা গত রোববার (২১ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক প্রেক্ষাপটে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ইতিবাচক। তবে এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে, সেদিকে বিএসইসিকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। এতে সব ধরনের বিনিয়োগকারী বাজারে ফিরবেন, যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে আটকে পড়েছিল। বাজারে যেভাবে লেনদেন বাড়ছে এটা আশাব্যঞ্জক। সার্বিক প্রেক্ষাপটে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ইতিবাচক। তবে এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে, সেদিকে বিএসইসিকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। করোনাকেন্দ্রিক ফ্লোর প্রাইসের পর পুঁজিবাজার প্রায় তিন হাজার সূচক বেড়েছিল। সব কিছু ঠিক থাকলে শেষ  পর্যন্ত আমরা বিনিয়োগকারীরা ভালো কিছু আশা করতেই পারি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা; জাতিসংঘ, কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন দেশের বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন ও আস্থা জানানো পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

গত রোববার বিএসইসি ৩৫টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল রেখে বাকি কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে। সার্বিকভাবে ইতিবাচক হলেও এটা বর্তমান সময়ের জন্য একটি স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এর ফলে মার্কেটে সেল প্রেসার বাড়বে, মার্জিন লোনে বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে প্যানিক সৃষ্টি করে লুণ্ঠনকারীরা যেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হাতিয়ে নিতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতির মধ্যে না পড়ে এজন্য কমিশনকে দৃষ্টি  রাখতে হবে। মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন, আইসিবি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডসহ সংশ্লিষ্টরা যাতে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে সেজন্য কমিশন থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে। সর্বোপরি আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্যানিকড হয়ে যাতে শেয়ার সেল না করে সেই অনুরোধ রাখছি।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সোলাইমান হোসেন পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, সবগুলো কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোরে আটকে ছিল। এখন সুযোগ এসেছে বিনিয়োগ করবো। দেরিতে হলেও ফ্লোর তুলে নেওয়ায় বিএসইসিকে সাধুবাদ।  

সোলাইমান হোসেন বলেন, বাজারে উত্থান-পতন স্বাভাবিক ব্যাপার। এর মধ্যেও আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ হয়েছে। লাভ-ক্ষতি ব্যবসার অংশ, একটা শেয়ার কিনে লস করে বিক্রি করে আরেকটি কিনে লাভ করবো। এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে বাজারে নিয়মিত ট্রেড করে আমার সংসার চলে, তবে হতাশার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। ফ্লোর তুলে নেওয়ায় আমাদের মতো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পুঁজিবাজার বড় হচ্ছে, পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। শেয়ার দরে কখনো উত্থান হবে, আবার পতন হবে। এটিকে মুক্তভাবে ওঠানামা করতে দিতে হবে। কৃত্রিমভাবে কোনো সীমা ঠিক করে দিয়ে শেয়ারের দাম ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। দীর্ঘদিন পরে হলেও বিএসইসির এমন সিদ্ধান্ত বাজারের জন্য ইতিবাচক।

এ ব্যাপারে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে পতন ঠেকাতে বিনিয়োগকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িক সময়ের জন্য ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। এরপর নানা বাস্তব কারণে ফ্লোর প্রাইসের সময় দীর্ঘায়িত হয়। এখন বাজারসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে করে বাজারে সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

২০২২ সালের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারের চলমান সংকটে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেয়েছিল বিএসইসি। গত ১৮ জানুয়ারি বিএসইসির এক নির্দেশনায় ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস বহাল রেখে বাকি সব প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। রোববার (২১ জানুয়ারি) থেকে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলো স্বাভাবিক নিয়মে লেনদেন করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসএমএকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।