ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রথম দিনেই চকবাজারে জমে উঠেছে ইফতার বাজার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৪
প্রথম দিনেই চকবাজারে জমে উঠেছে ইফতার বাজার

ঢাকা: পবিত্র রমজানের প্রথম দিনেই জমে উঠেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে চকবাজারে গিয়ে দেখা যায়, চক শাহী মসজিদের সামনে সার্কুলার রোডের দুই পাশজুড়ে মুখরোচক নানা পদের ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।

প্রায় ৬৯ বছরের পুরনো এই ইফতার বাজার যেমন ঐতিহ্যবাহী, তেমনি সারা দেশেই রয়েছে এর সুখ্যাতি। তাই তো প্রতিবারের মতো এবারের রমজানের প্রথম দিনেই উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে এই ইফতার বাজারে।

ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে প্রথম দিনে ইফতার কিনতে আসা মানুষের যেমন ভিড় ছিল, তেমনি শুধু দেখতে আসা মানুষের ভিড়ও কম ছিল না। বিক্রেতাদেরও ইফতার আইটেমের নাম ধরে হাঁক-ডাক দিতে দেখা গেছে।



গত বছরের তুলনায় এবার চকবাজারে ইফতার আইটেমের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে। তবে ঠিক কতখানি দাম বেড়েছে সেই ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। কেউ বলছেন দ্বিগুণ দাম বেড়েছে, কেউবা বলছেন ২৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। দাম যাই বাড়ুক, খানদানি ইফতার কিনতে কার্পণ্য ছিল না ক্রেতাদের।

এবার প্রতি পিস চিকেন মোমো ৩৫ টাকা, বাকনাবা ৪৫ টাকা, কিমা পরোটা ১১০ টাকা, টান পরোটা ৭০ টাকা, চিকেন সাসলিক ১১০ টাকা, অ্যারাবিয়ান কাবাব ৮০ টাকা, মুঠি কাবাব ৬০ টাকা, হালিম (প্রতি কেজি) ৮০০ টাকা, বটি কাবাব ১২০ টাকা, দই বড়া ২০ টাকা, শাহী জিলাপি (প্রতি কেজি) ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি (প্রতি কেজি) ২০০ টাকা, চিকেন চাপ ১৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকা, টিক্কা ৪০ টাকা, জালি টিক্কা ৫০ টাকা, চিকেন কারি ৭০ টাকা, বিফ কারি ৮০ টাকা, শাহী পরটা ৬০ টাকা, সাদা পরোটা ৪০ টাকা, সুতি কাবাব (প্রতি কেজি) ১২০০ টাকা, কবুতর রোস্ট ৩৫০ টাকা, খাসির লেগ রোস্ট ১০০০ টাকা, আস্ত চীনা হাঁস রোস্ট ১৫০০ টাকা, আস্ত চিকেন গ্রিল ৪৫০ টাকা, আস্ত পাতি হাঁস ১০০০ টাকা, গরুর সুতি কাবাব (প্রতি কেজি) ১২০০ টাকা, চিকেন পরোটা ৬০ টাকা, বিফ পরোটা ৭০ টাকা, চিকেন রোল ৫০ টাকা, গরুর কাবাব ৫০ টাকা, খাসির জালি কাবাব ৫০ টাকা, ডিম চপ ৪০ টাকা, চিকেন বটি কাবাব ১৫০ টাকা, চিকেন তন্দুরি ২৫০ টাকা, চিকেন লেগ পিস ৫০ টাকা, আলু পরটা ৩০ টাকা, ঘুগনি (২৫০ গ্রাম) ৩০ টাকা, ঘিয়ে ভাজা জিলাপি (প্রতি কেজি) ৩০০ টাকা, কাশ্মীরি বটি কাবাব (প্রতি কেজি) ১৮০০ টাকা, চিকেন আচারী (প্রতি কেজি) ১০০০ টাকা, গরুর কোপ্তা ২০ টাকা, চিকেন বন ১৫ টাকা, শাহী তন্দুরী ১২০ টাকা, কেশোয়ারী ৪০ টাকা চিকেন কাটলেট ৬০ টাকা, কিমা পরটা ৬০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ১৫০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৬০০ টাকা, ছোট পিজ্জা ৫০ টাকা, সবজি নান ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া পানীয়ের দিক দিয়ে প্রতি লিটার শরবত-ই মোহাব্বত ২০০ টাকা, মাঠা ১৪০ টাকা, গোড ২৫০ টাকা, লাবাং ২০০ টাকা, বোরহানি ১২০ টাকা, পেস্তা বাদামের শরবত ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে প্রতি পিস মালপোয়া ৩০ টাকা, পাটিসাপ্টা ৩০ টাকা, ফালুদা (বক্স) ১১০-২২০ টাকা, ফিরনি (বক্স) ১২০ টাকা, জর্দা (বক্স) ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

প্রতি বছরের মতো এবারও চকবাজারের ইফতারের প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ নামের বিশেষ ইফতারি। এটি কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এই ইফতার আইটেমটি তৈরিতে মাংস, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ নানা পদ এবং মসলার ব্যবহার করা হয়। প্রতি কেজি ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ এর দাম ছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।

চকবাজারে তিন প্রজন্ম ধরে ইফতার বিক্রি করে আসছেন মন্টু মিয়া। থাকেন পুরান ঢাকার বকশি বাজারে। তিনি বলেন, আমার নানা এখানে ইফতার বিক্রি করতেন। তারপর মামারা বিক্রি করতেন। এখন আমি বিক্রি করছি। ১০ বছর বয়স থেকে এখানে ইফতার বিক্রি করি। প্রায় ৩২ বছর হয়েছে। প্রতি বছরই ঐতিহ্যবাহী এই ইফতার বাজার জমে ওঠে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম দিনেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে এটি আরও বাড়বে।

মো. হারুনের পরিবারও তিন প্রজন্ম ধরে এই বাজারে ইফতার বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, এবার ইফতারের দাম প্রায় দ্বিগুণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেশি। গ্যাস থেকে শুরু করে ধনিয়া পাতা পর্যন্ত। ইফতারের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। ৫০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। আমার আগে আমার বাবা, দাদা করতো। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভিড় একটু কম। তারপরও হাঁটার মতো জায়গা নেই। কারণ এটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে। একসঙ্গে এত ইফতার আর কোথাও পাওয়া যায় না।

হারুনের কথার সত্যতা পাওয়া যায় বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খানদানি ইফতার কিনতে চকবাজারে ছুটে এসেছেন তারা। তাদের একজন জুয়েল। চাকরি করেন একটি ল’ চেম্বারে। তিনি এসেছেন কাকরাইল থেকে। জুয়েল বলেন, প্রতি বছরই চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা হয়। এবার প্রথম দিনই এসেছি। কাবাব, চিকনে ঝাল ফ্রাই, চিকেগ গ্রিল, ডিম চপ, রোস্টসহ বিভিন্ন আইটেম কিনেছি। একসঙ্গে এত ইফতার দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না। প্রথম দিনেই এই ইফতার বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।