ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাবুরহাটে নেই ভিড়, তবু রোজা-ঈদে ২ হাজার কোটি টাকা বিক্রির আশা

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২৪
বাবুরহাটে নেই ভিড়, তবু রোজা-ঈদে ২ হাজার কোটি টাকা বিক্রির আশা

নরসিংদী: ঈদ উপলক্ষে নতুন কাপড় সাজিয়ে প্রস্তুত দেশের বৃহত্তর পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর বাবুরহাট। তবে এখনো ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় মন্দাভাবে চলছে দেশীয় কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নরসিংদীর (শেখেরচর) বাবুরহাটের বেচাকেনা।


 
রোজার এক মাস আগে থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত পাইকারি  ক্রেতায় মুখর থাকার কথা থাকলেও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে এবার রোজার মাসের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তবে সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা করে লোকসানের হার কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৩৪ সালে জমিদার হলধর সাহা প্রায় ১১ একর জমির ওপর হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই বাবুরহাট দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। বর্তমানে এ হাটে পাঁচ হাজারেরও বেশি দোকান আছে। এক সময় কেবল প্রতি রোববারই হাট বসত। এখন সপ্তাহে তিনদিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার হাট বসে। তবে ঈদ সামনে রেখে পুরো সপ্তাহ এখন চলছে কেনাবেচা।

দেশীয় কাপড়ের অন্যতম পাইকারি বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি কাপড়, সাটিন কাপড়, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড় ও গামছা উৎপন্ন হয় স্থানীয় তাঁত ও সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে। একই সঙ্গে দেশের প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানি, কাতানসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায় বাবুরহাটে।

দেশীয় তৈরি প্রায় সব ধরনের কাপড় মেলে এ বাজারে। ঈদ উপলক্ষে বাজারের ছোট বড় প্রায় পাঁচ হাজার দোকানে নিত্য নতুন ডিজাইন করা পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের এক সপ্তাহ আগে থেকেই চলে পাইকারি বেচাকেনা।

এ হাট ঘিরে নরসিংদী জেলা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েক লাখ তাঁতকল। একই সঙ্গে কয়েকশ সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

তবে এবারের হাটে নেই বাবুরহাটের বাবুগিরি। ডলার সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে কাপড় উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকটসহ নানা কারণে মন্দা চলছে কাপড় বেচাকেনায়। রোজার আগেই প্রতিটি দোকানের মালের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখনো অর্ধেক মালই বিক্রি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে এবারের ঈদের ভরা মৌসুমেও ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
 
বাবুরহাটের ব্যবসায়ী মেসার্স মিলন থ্রি-পিসের মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সারা বছর ঈদ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। এ সময় কাপড়ের অনেক চাহিদা থাকে। সেজন্য আমরা মালের স্টক করে রাখি। এবার বাজারে কোনো পাইকার নাই। যার কারণে কোনো বেচাকেনা নেই। আমরা মালের অর্ধেক স্টকই শেষ করতে পারিনি। এবার ব্যবসায় লাভ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।

আরেক ব্যবসায়ী গ্রামীণ থ্রি-পিস ও শাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম পারভেজ বলেন, আমরা সারা বছরই লোকসানে ছিলাম। এবার ঈদ উপলক্ষে লাভের আশা করেছিলাম। কিন্তু বাজারে পাইকার কম থাকায় বেচাকেনা কম হচ্ছে। আমরা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব না।

আরেক ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, আমরা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও কোনো পাইকার পাচ্ছি না। আমরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি। ঈদে বেচাকেনা না করতে পারলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।

এদিকে বেচাকেনায় মন্দাভাব থাকায় অলস সময় পার করছেন দোকানের কর্মচারীরা। তারা বলছেন, আগে যেখানে সারাদিন ক্রেতায় মুখর থাকত হাট আর এখন ক্রেতাই পাচ্ছি না।  

দোকানের কর্মচারী নয়ন মিয়া বলেন, প্রতি ঈদে দোকানে পাইকারি ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকত। আমরা দম ফেলার সময় পাইতাম না। এখন দোকানে খালি বসে থাকি। যাও কয়েকজন পাইকার আসেন, তারা দাম জেনে চলে যান।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে বাবুরহাটে থ্রি-পিছ, শাড়ি কিনতে এসেছেন সোহাগ মিয়া। তিনি বলেন, বাবুরহাটে একই জায়গায় হরেক রকমের কাপড় পাওয়া যায়। যার কারণে একাধিক হাটে না গিয়ে আমরা বাবুরহাট থেকেই সব কিছু কিনতে পারছি। কাপড়ের গুণগতমান ভালো হওয়ার কারণে ক্রেতাদের কাছে এখানকার কাপড়ের চাহিদা অনেক। যার কারণে প্রতি ঈদেই বাবুরহাট থেকে কাপড় নিয়ে ব্যবসা করি।

তবে এবার আগের বারের তুলনায় হাটে কাপড়ের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন পাইকারি ক্রেতারা। খাগড়াছড়ি থেকে কাপড় কিনতে এসেছেন আনোয়ার হোসেন।  

তিনি বলেন, প্রতিটি কাপড়েই ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। যার কারণে আমরা যেই পরিমাণ লক্ষ্য নিয়ে হাটে এসেছিলাম, সেই পরিমাণ কাপড় কিনতে পারিনি। তারপরও ঈদে এখানকার কাপড়ের চাহিদা থাকায় তিন লাখ টাকার কাপড় কিনেছি।

ঢাকার মহাখালী থেকে হাটে এসেছেন ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সহজেই আমরা হাট থেকে কাপড় নিয়ে যেতে পারি। আর কাপড়ের দামও ভালো, সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। তবে এবার দাম একটু বেশি। তারপরও আশা করছি, এবারের ঈদের কাপড় বিক্রি করে লাভ হবে।

একই সঙ্গে এবারের ঈদে বৈচিত্র্য এসেছে পুরুষের অন্যতম পোশাক লুঙ্গিতে। নানা নাম ও বাহারি ডিজাইনের এসব লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে একশ টাকা থেকে ১১ হাজার টাকা দরে।  

আমানত শাহ লুঙ্গির পরিচালক রেজওয়ান কবির শিহাব বলেন, এবার লুঙ্গির ডিজাইনে আমরা নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। প্রায় ২০০০ ডিজাইনের লুঙ্গি ঈদের জন্য বাজারে এসেছে। আমরা পাইকারি ক্রেতাদের কাছে এসব ডিজাইনের লুঙ্গির ব্যাপারে ভালো সাড়া পাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারদের মাধ্যমে আমাদের লুঙ্গি দোকানে যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে, আশা করছি, এবারের ঈদে পাইকাররাও ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।
 
বাবুরহাট বণিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি  আবদুল বারিক বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এবার ব্যবসার মন্দা অবস্থা। প্রতি ঈদের তুলনায় এবারের হাটের অবস্থা কিছুটা খারাপ। তারপরও এবারের রমজান জুড়ে প্রতি হাটে গড়ে লেনদেন হচ্ছে দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকা।  
এবারের ঈদ মৌসুমে বাবুরহাটে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ধারাবাহিকভাবে সুতার দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে কাপড়ের দামে। সুতার দাম যদি স্থিতিশীল থাকলে কাপড়ের দাম কম হতো। তাহলে বিক্রিও বাড়ত।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।