ঢাকা: আগামী অর্থবছরে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে বলে আভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
দাতা সংস্থাটি বলছে, আমদানি ব্যয় সংকোচন ও নীতি কাঠামোর কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে।
বুধবার (৮ মে) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউ এ কথা বলেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান পাপাগেওর্জিউ বলেন, নীতিগত পদক্ষেপ নিতে শুরু করলে সামষ্টিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে। আমদানি ব্যয় সংকোচন ও নীতি কাঠামোর কারণে চলতি অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমে এবং আমদানি বেড়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি বলেন, আমরা অনুমান করছি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। তবে কঠোর নীতির মিশ্রণ এবং বৈদেশিক খাদ্য ও দ্রব্যমূল্য কমার কারণে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে।
বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের প্রধান বলেন, উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য টেকসই রাজস্বকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বাড়াতে আগামী বাজেটে বাস্তব কর নীতি এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এর মধ্যে ট্যাক্স বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে আইএমএফ, এতে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পাপাগেওর্জিউ বলেন, আমাদের কর্মসূচির একটি বড় অংশ হলো সামাজিক নিরাপত্তা। কাজেই আমাদের নীতি দরিদ্র গোষ্ঠীর ওপর কী প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকি। এনবিআরের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়গুলো থাকে।
সুদের হার বেশি থাকার পরও মূল্যস্ফীতি বেশি কেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুদের হার বাড়ালেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল আছে। আমাদের কাছে নতুন তথ্য আছে মূল্যস্ফীতি কমতির দিকে। বাংলাদেশে আগামী বছর মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে আসবে বলে আমরা মনে করছি।
ব্যাংক মার্জ (একীভূত) করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ক্রিস পাপাগেওর্জিউ বলেন, ব্যাংক রিক্যাপিটালাইজেশনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আমি মনে করি কখনো কখনো এর দরকার আছে। কারণ বাংলাদেশে ৬১টি ব্যাংক আছে, এর মধ্যে কিছু খুবই স্ট্রং, কিছু স্ট্রং নয়।
মানি লন্ডারিং নিয়ে আইএমএফ কোনো কথা বলে না, কিন্তু শুল্ক অব্যাহতি কমাতে এনবিআরকে পরামর্শ দিচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হচ্ছে অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের টার্গেট বিভিন্ন প্রোগ্রামকে সমর্থন দেওয়া যাতে ট্যাক্স বাড়ে। এনবিআরের সঙ্গে আমাদের প্রোগ্রাম আছে। মানি লন্ডারিং নিয়ে আমরা বিএফআইইউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলি। এর মধ্যেই অর্থ পাচার সমস্যার সমাধান আছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ গত বছরের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের পরপরই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। গত বছরের ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন দেয় আইএমএফের বোর্ড। আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৪
জিসিজি/এইচএ/