ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফলন কম হওয়ায় লিচুর দামে ‘আগুন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
ফলন কম হওয়ায় লিচুর দামে ‘আগুন’ লিচু কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে চলতি বছরে লিচুর ফলন ভালো হয়নি। শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ব্যাপক পরিমাণ লিচু নষ্ট হয়েছে।

এতে বাগানিদের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় জ্যৈষ্ঠ মাসের এই ভরা মৌসুমেও বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই রসালো ফল।

রোববার (২ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতি ১শ পিস বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬শ টাকা, বেদানা লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৭৫০ টাকা এবং চায়না-৩ নামের পরিচিত লিচু বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।  

অথচ বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে বোম্বাই লিচু ৩শ থেকে ৪শ টাকা, বেদানা লিচু ৩৫০ থেকে ৫শ টাকা ও চায়না-৯ লিচু ৭শ থেকে ৯শ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই লিচুর বাজার চড়া ছিল। তবে সেটি আকাশছোঁয়া পর্যায়ে যায় দেশের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার পর থেকে।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা ও লিচুর বাগান মালিকরা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এবার লিচুর ফলন কম হয়েছে। অনেক লিচু গাছেই তাপের কারণে নষ্ট হয়েছে। এরপর মাঝে কিছুদিন শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতেও লিচু নষ্ট হয়েছে। গাছে যা লিচু ছিল সেগুলো ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ঝরে গেছে। তাই বাজারে লিচুর সংকট ও দাম বেশি।

কারওয়ান বাজারের লিচু বিক্রেতা সোহান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আড়ত থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে লিচু। চাইলেও কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।

মাহফুজ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, এবার ফলন কম হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে লিচু ঝরে গেছে। বাজারে লিচু নেই। তাই দাম বেশি। এ বছর আর লিচুর দাম কমবে না।

কারওয়ান বাজারের আড়তদার আমেনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার লিচুর ফলন কম হয়েছে। অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টিতে লিচু নষ্ট হয়েছে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রিমালে লিচুর বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটাতে বাগানিরা লিচুর দাম বেশি রাখছেন। প্রতি এক হাজার লিচু বাগানেই চার হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। সেগুলো খরচ দিয়ে পাইকারিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ পড়ে। খুচরা বিক্রেতারা তো বেশি দামে বিক্রি করবেনই।

এ বছর লিচুর দাম আর কমবে না বরং বাড়বে বলে আশঙ্ক করছেন ওই আড়তদার।

লিচুর বাগানিরাও এই কথা স্বীকার করেছেন। দিনাজপুরে বোম্বাই লিচুর বাগান রয়েছে মিঠুন রায়ের। মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবার বাগানেই লিচু নেই। বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কম ও নষ্ট হয়েছে। তাই আমাদের বাধ্য হয়েই বেশি দামে লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি এক হাজার লিচু বাগানেই চার হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যেখানে আগে ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকায় এক হাজার লিচু বিক্রি হত।
 

লিচুর এই বাড়তি দামে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, লিচুর ক্ষতি হলেও একেবারে দ্বিগুণ দাম হওয়ার কথা নয়। তাই সিন্ডিকেট করেই দাম বাড়ানো হয়েছে।

নাজমুল নামের এক ক্রেতা বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতি হলেও লিচু কি একেবারেই সব নষ্ট হয়ে গেছে, যে দাম আকাশছোঁয়া হবে। ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন। লিচুর না হয় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু বাজারে কোন পণ্যের দাম কম? এতেই বোঝা যায়, ফলন কমের জন্য দাম বাড়েনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২৪
এসসি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।