ঢাকা: টানা কারফিউ’র কারণে সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ১০- ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রতিকেজিতে ২০ টাকা বেড়ে করলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। ২৬০ টাকার কাঁচা মরিচ কেজিতে ১৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
১৩৫ টাকা ডজনে বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৬৫-১৭০ টাকা। প্রতিকেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি বেড়ে হয়েছে ২১০-২২০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎই বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই বাজারে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
সবজির বাজারে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা দাবি করছেন, মাঠে পর্যাপ্ত সবজি উৎপাদন হলেও কারফিউর কারণে ঢাকায় পর্যাপ্ত সবজির গাড়ি আসতে পারেনি। যেখানে চাহিদা ১০ গাড়ি সবজির সেখানে এসেছে ২ গাড়ি। যার জন্য উৎপাদন ভালো থাকলেও সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর সিপাহীবাগ কাঁচা বাজার, গোড়ান বাজার, খিলগাঁও রেলগেট কাঁচাবাজার সহ বেশকিছু খুচরা ও পাইকারি বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।
কারফিউ’র কারণে প্রায় সব ধরনের সবজি অল্প করে এনে দুটি ভ্যানে করে বিক্রি করছিলেন দক্ষিণ বনশ্রীর সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর ও তার ছোট ভাই জহির। অন্য সময় মেরাদিয়া হাটের পাশে সবজি বিক্রি করলেও, দেশের চলমান অস্থিরতায় এখন দক্ষিণ বনশ্রীর অলিগলিতে সবজি বিক্রি করছেন এই খুচরা ব্যবসায়ী।
সবজির দাম সম্পর্কে জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, আজকের বাজারে সব থেকে কম দামে বিক্রি হওয়া সবজির দামও প্রতিকেজি ৬০ টাকা করে। প্রতিকেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে পটল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, পেঁপে, বাঁধাকপি। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে।
এই সবজি বিক্রেতা আরো বলেন, এছাড়া বেশি দামে বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে প্রতিকেজি বরবটি ১০০ টাকায়। হাইব্রিড শসা ৫০ টাকা, দেশি শসা মানভেদে ৮০-১০০ টাকায়। কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। ২৬০ টাকার কাঁচা মরিচ কেজিতে ১৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০- ২০০ টাকায়। প্রতিকেজিতে ২০ টাকা বেড়ে করলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কাঁকরোল ৮০-৯০ টাকায়। প্রতিটি লাউ ৭০- ৮০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০-৭০ টাকায়, ফুলকপি ৮০ টাকায়। কালো লম্বা ও গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় এবং সবুজ গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকায়।
এছাড়া বাজারে কলমি শাক ১৫ টাকা, ডাটা শাক ২০ টাকা, কচু শাক ২০ টাকা, লাল শাক ৩০ টাকা, পাট শাক ৩০ টাকা, ডাটা ৩০ টাকা, প্রতি আঁটি লাউ শাক ৫০ টাকায় এবং পুঁই শাক প্রতি আঁটি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। কারফিউর আগে থেকেই অবশ্য পেঁয়াজের দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। তবে মুদি দোকানে বেশির ভাগ পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। ১৩৫ টাকার ছোট দেশি মসুরের ডাল দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। ১৩৫ টাকা ডজন বক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৬৫-১৭০টাকায়।
মুদি পণ্যের দাম সম্পর্কে দক্ষিণ বনশ্রীর মুদি দোকানি মেহেদী হাসান সৌরভ বাংলানিউজকে বলেন, মানভেদে মোটা আমদানি করা মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা, মাশকলাইয়ের ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্যাকেট পোলাউয়ের চাল ১৫৫ টাকা, মানভেদে খোলা পোলাউয়ের চাল প্রতিকেজি ১১০- ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৫-১৫৫ টাকায়। খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা।
এছাড়া প্রতিকেজি এলাচি ৪৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১৬০০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমিষের বাজারে এক সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হলেও আজকে দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়। কক মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ৩৪৫-৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
ইএসএস/এসএএইচ