ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সামাজিক অস্থিরতায় পড়ে কৃষিপণ্য নিয়ে ধুঁকছে রাজশাহীর অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৪
সামাজিক অস্থিরতায় পড়ে কৃষিপণ্য নিয়ে ধুঁকছে রাজশাহীর অর্থনীতি

রাজশাহী: অর্থকরী ফসল পান ও আম ছাড়াও শস্য উৎপাদনে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহী। মিষ্টি পান ও আমের জন্য বিখ্যাত হলেও সব ধরনের শাকসবজি এবং মাছ উৎপাদন ও বিপণনেও এই রাজশাহী জেলার অবস্থান সবার ওপরে।

তবে দেশজুড়ে চলা ব্যাপক সহিংসতা ও ধ্বংসলীলার পর এখন বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক ও সামাজিক অস্থিরতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক রাখতে দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কিন্তু এতে সহিংসতা বন্ধ হলেও স্বাভাবিক হয়নি মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রা। তাই চলমান সংকটের মুখে পড়ে সব ধরনের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে ধুঁকতে শুরু করেছে রাজশাহীর অর্থনীতি।

দেশে কারফিউ জারির পর সব ধরনের বাস-ট্রাক ও ট্রেন চলাচল রয়েছে বন্ধ। এতে রাজশাহীর সাথে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কারফিউ শিথিলের সময় মহানগর ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে যানবাহন চলাচল করছে সীমিত আকারে।  

কৃষি ও খাদ্যপণ্য কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকলেও নিরাপত্তার অভাবে মানুষজন উৎপাদিত কৃষি ও খাদ্যপণ্য নিয়ে সড়কে নামছেন না। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে এক অজানা আতঙ্ক।  তাই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সেই সময়ের দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই। আর সময় যত গড়াচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট ততই ঘনীভূত হচ্ছে। শিগগিরই সংকট না কাটলে উৎপাদিত এসব কৃষিপণ্য নিয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কৃষিজীবী মানুষ।

সাধারণত রাজশাহী জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব কৃষিপণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। তাই পণ্য বিপণনও বন্ধ। এতে স্থানীয় বাজারগুলোতে কৃষিজাত পণ্যের যোগান বেড়েছে। ফলে কমছে সব ধরনের শাকসবজির দাম। তবে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এর দাম বাড়ছে হু হু করে।

রাজশাহীর পানের বড় মোকাম মোহনপুর উপজেলা সদর ও আমের বড় মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। গেল কয়েক দিনের সামাজিক অস্থিরতায় এ দুই উপজেলার হাট-বাজার এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। চিরচেনা সেই হাঁকডাক আর নেই। শেষ সময়ে আমের সরবরাহ কমে এসেছে। কিন্তু এখনও যে পরিমাণ আম আছে সেই পরিমাণ কেনাবেচা নেই। যারা গাছে আম রেখেছেন তাদের আম গাছেই পেকে নষ্ট হচ্ছে। একই অবস্থা রাজশাহীর অর্থকরী ফসল পানেরও।

মৌসুমের শেষ সময়ে এসব আম ও পানসহ কৃষিজাত পণ্য শিগগিরই বিক্রি করতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজশাহী জেলার সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে  পান ও আম নিয়ে রাজশাহীর মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার চাষি এবং ব্যবসায়ীরা ভাসছেন হতাশার সাগরে ।  

মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের পানচাষি জয়নুদ্দিন মিয়া বলেন, কৃষিপণ্য কারফিউয়ের আওতা মুক্ত থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রায় সব ধরনের ভারী যানবাহনই এখন বন্ধ। আর পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় বাজারে তারা এখন সীমিত আকারে পান বিক্রি করছেন। আর বেশিরভাগ পানই পান বরজ অথবা ঘরে রাখতে হচ্ছে। এতে পানে পচন ধরছে। এভাবে আর কয়েক দিন চললে তারা সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়েবেন। অনেকে চাষি পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন বলেও আশঙ্কার কথা জানান।

পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি গ্রামের হেসেন আলী বলেন, আমের মৌসুম প্রায় শেষ। কিন্তু তার বিভিন্ন বাগানে এখনও কিছু বারি-৪, ফজলি ও আম্রপালি আম রয়েছে। হাটে ক্রেতা না থাকায় এগুলো নামাতে পারছেন না। আর পরিবহন সংকটে বাইরেও কোথাও পাঠাতে পারছেন না। বাইরের পাইকাররা না আসতে পারায় কেনা-বেচায় ধস নেমেছে। কিছু আম পেরে খাওয়া হচ্ছে, আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক আম গাছেই পেকে নষ্ট হচ্ছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু জানান, চলমান সংকট মোকাবিলায় তারা এরই মধ্যে রাজশাহী সিটি মেয়রের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সেখানে রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় আরও বেশি সময় কারফিউ শিথিলের দাবি জানানো হয়েছে। কারণ এরই মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে পড়েছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। অর্থকরী ফসল পান ও আম তো রয়েছেই। এছাড়াও রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ অন্তত ১৮টি জেলায় তাজা মাছ ও শাকসবজি বিপণন ও বাজারজাত করা হয়। কিন্তু চলমান সংকটের কারণে নিরাপত্তার শঙ্কায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। তাই জেলেরা ও মাছ চাষিরা মাছ ধরতে পারছেন না। বাজারজাত করার মতো উপযোগী মাছগুলোকে জলাশয়ে রেখেই প্রতিদিন খাবার দিতে হচ্ছে৷ এতে লোকসান বাড়ছে।  

ভালো নেই সবজি ব্যবসায়ীরাও। রাজশাহীর বাইরে পাঠাতে না পারায় স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত শাকসবজির যোগান বেড়ে গেছে। এতে হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। এই সংকটের মধ্যে পড়ে শুধু কৃষিখাত থেকেই কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৪
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।