ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘কমপ্লিট শাটডাউন’: অর্থনীতিতে ক্ষতি এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপেন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
‘কমপ্লিট শাটডাউন’: অর্থনীতিতে ক্ষতি এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ফলে দেশের অর্থনীতিতে ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।

রোববার (২৮ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মতবিমিনয়কালে ফিকি সভাপতি জাভেদ আক্তার এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। এ সময় ফিকির অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নেতারা বলেন, দেশে সীমিত অনলাইন এবং ফিজিক্যাল সংযোগের সঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কার্যক্রম এখনও ফিরে আসেনি এবং আমরা অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছি। শিল্পের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য আমাদের সম্পূর্ণ ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং যাতায়াত সুবিধা প্রয়োজন। এছাড়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দর থেকে পণ্য খালাস এবং শাটডাউনের সময় কাজ করতে না পারার কারণে অতিরিক্ত বিলম্ব শুল্ক নির্ধারণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

তারা বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প, ব্যাংকিং, বিমা, লজিস্টিকস, অবকাঠামো, টেলিকম, ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, রাইড-হেলিং, সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং স্যোশাল কমার্সের ওপর নির্ভরশীল অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান শাটডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিল্পের ওপর এ আর্থিক প্রভাব কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত যেতে পারে।

বর্তমানে বিদ্যমান অনেক বিনিয়োগকারী নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েও অনিশ্চয়তা বোধ করছে বলে জানান ফিকি নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, পণ্য খালাস, অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং অদক্ষতা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদি আমরা আমাদের বর্তমান বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজীকরণকে অগ্রাধিকার দিতে ব্যর্থ হই, তাহলে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখতে নিরুৎসাহিত হবে।

‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ফলে হওয়া ক্ষতি থেকে উত্তোরণে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন ফিকি’র নেতারা। সেগুলো হলো—

পুরোপুরি ডেটা সংযোগ
*  যদিও ব্রডব্যান্ড সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এই সংযোগ দুর্বল এবং অনেক জায়গায় এখনো সংযোগ পাওয়া যায় না। আমাদের এটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

* এফএমসিজি, লজিস্টিকস, হেলথ ইন্স্যুরেন্স, ব্যাংকিং, আইটি ও টেকনোলজি কোম্পানি, মোবাইল কোম্পানি, টেস্টিং ও ইন্সপেকশন কোম্পানি, এনার্জি ও পাওয়ার এবং ফিকির ২১টি সেক্টরের জন্য সম্পূর্ণ মোবাইল ডেটা কানেক্টিভিটি পুনরায় চালু করা প্রয়োজন।

নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা
* বাংলাদেশে কর্মরত স্থানীয় এবং বিদেশি কর্মীদের মধ্যে বিশ্বস্ততা স্থাপনের জন্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যাপারে পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করা প্রয়োজন।

* বাজার এবং চাহিদা তৈরিতে আরও স্বস্তি এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।

* কারফিউ প্রত্যাহার এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যবসা সহজীকরণ
* বন্দর থেকে পণ্য খালাস এবং বাইরে শিপমেন্ট দ্রুত করা।

* ১৮ জুলাই থেকে খালাস না পাওয়া সমস্ত পণ্যের জন্য সবরকমের বিলম্ব শুল্ক মওকুফ। এটি বন্দরের যানজট এবং বিলম্ব শুল্কের প্রভাব কমাতে অনেক সাহায্য করবে।

* একই উৎস থেকে নিয়মিত যেসব উপকরণ আমদানি করা হয়, সেগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক ল্যাব টেস্টিং বাদ দেওয়া। এটি ক্লিয়ারিং এবং পোর্ট কনজেশনের জন্য উল্লেখযোগ্য সময় কমিয়ে দেবে।

* চট্টগ্রাম বন্দরে বিএসটিআই পূর্ণ পরীক্ষার সুবিধা (মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষা) স্থাপন করা যাতে আমরা আমদানিকৃত পণ্যগুলির জন্য সময় কমাতে পারি।

* ব্যাংক এবং কাস্টমস হাউস অপারেশন সময় সমন্বয় করা। উদাহরণস্বরূপ, এই শনিবার কাস্টমস হাউসগুলি ব্যাকলগ কমাতে চালু ছিল, কিন্তু ব্যাংকগুলো ছিল না। তাই শুল্ক পরিশোধ করা যায়নি এবং ম্যাটেরিয়াল ক্লিয়ারিং প্রভাবিত হয়েছে।

* বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সমস্ত বকেয়া পরিশোধ এবং নিয়মিতকরণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।