ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে পদত্যাগ করবেন গভর্নর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে পদত্যাগ করবেন গভর্নর

ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পদত্যাগ করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) এমন তথ্য জানিয়েছে গভর্নরের পরিবার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

সূত্রটি জানায়, গত সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর এমনিতেই গভর্নরের মনের অবস্থা ভালো নেই। তারপর একজন ডেপুটি গভর্নরকে যে পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, এতে তার মন আরও খারাপ হয়েছে। এ অবস্থায় তিনি দ্রুত পদত্যাগ করতে চান। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হচ্ছে। তিনি নতুন সরকারের অপেক্ষায় আছেন। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পদত্যাগ করবেন।

সূত্রটি আরও জানায়, ডেপুটি গভর্নরকে পদত্যাগ করানো, অন্য ডেপুটি গভর্নর ও দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করার পর যদি গভর্নর পদত্যাগ করে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শূন্যতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা আর্থিক খাতের জন্য শুভ নয়। এ অবস্থায় তিনি নতুন সরকারের অপেক্ষায় আছেন। পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা চাচ্ছেন দ্রুত পদত্যাগপত্র জমা দিতে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের তোড়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরের দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্যান্য কর্মকর্তারা গেলেও গভর্নর যাননি। সে সময় ডেপুটি গভর্নর-১ কাজী সাইদুর রহমান জানিয়েছিলেন, গভর্নরের মানসিক অবস্থা ভালো নেই। তিনি আজ (৬ আগস্ট) ব্যাংকে আসবেন না।

সাইদুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় পাঁচ মাস ধরে সাংবাদিকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর মহলের ওপর দায় চাপান। তিনি নতুন সরকারের অপেক্ষার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু পরের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা তাকেই আগে পদত্যাগ ও সেনা প্রহরায় বাংলাদেশ ব্যাংক ত্যাগ করতে বাধ্য করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ‘গুড লিস্টে’ ছিলেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে অর্থ সচিব থাকাকালীন অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় পুরো দুর্যোগকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থনীতি সামাল দিয়েছিলেন। মহামারি মোকাবিলায় প্রণোদনা বিতরণেও তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এ কারণে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। পরে গভর্নর হওয়ার কারণে আর্থিক খাতে তার নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত হয়। এ কারণে তিনি অন্য কর্মকর্তাদের কম পাত্তা দিতেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরের দিনই তিনি নিজের পরিস্থিতি টের পান। সেদিন থেকেই যাচ্ছেন না বাংলাদেশ ব্যাংকে।

এরই মধ্যে খবর ছড়ায় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দেশ ছেড়েছেন। বুধবার (৭ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রথমেই গভর্নরের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের কাছের লোকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে তার পদত্যাগ দাবি করেন। ডেপুটি গভর্নরের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনেন। তারা বলেন, এই গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনদের অনৈতিক, আইন বহির্ভূত সুবিধা দিয়েছেন। তাদের রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুশাসন ফেরানো সম্ভব নয়। বিষয়টি গভর্নরের মন খারাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও দ্রুত পদত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গভর্নরের পরিবারের সূত্রটি জানায়, এ অবস্থায় তিনি নতুন সরকারের অপেক্ষায় আছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।