ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাজস্ব বোর্ডকে ব্যবসাবান্ধব হতে হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
রাজস্ব বোর্ডকে ব্যবসাবান্ধব হতে হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান এনবিআরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান

ঢাকা: ব্যবসাবান্ধব ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান।  

তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই ব্যবসার ক্ষতি করা যাবে না।

ট্যাক্সনীতির কারণে কোনো ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত বা  ধ্বংস হয়ে যাক, এটা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।

রোববার (১৮ আগস্ট) শের ই বাংলানগরে এনবিআরের মিলনায়তনে এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যদানকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় রাজস্ব বোর্ডের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যারা করদাতা, যারা উদ্যোক্তা, তারা অত্যন্ত সম্মানীয়। আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না বলে চাকরি করি। নিশ্চিত জীবন চাই বলে চাকরি করি। আর উদ্যোক্তারা নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করে, ব্যাংক বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগ না করলে তারা ২০ জেনারেশন বসে বসে খেতে পারতো। কিন্তু তারা ঝুঁকি নিচ্ছে। তাদের রক্তে আছে উদ্যোক্তা। সরকার ১২ থেকে সাড়ে ১২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করে। বাকি ২০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছে বেসরকারি খাত, উদ্যোক্তারা। তাদের স্যালুট দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পরিণামদর্শী উদ্যোগের কারণে কোনো ব্যবসা বাণিজ্য উদ্যোগ ধ্বংস হতে পারে। এক সময় আলাউদ্দিনের সুইট বিখ্যাত ছিল। সব পাড়া মহল্লায় বিক্রি হতো। আমার এমনভাবে ট্যাক্স বসিয়েছিলাম, আল্টিমেটলি এই ব্যবসাটা তারা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এমন যেন না হয়, ব্যবসায়ীদের প্রতি সহনশীল হতে হবে; তিনি রাজস্ব বোর্ডের কমকর্তাদের সতর্ক করেন।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনের অনুশাসনে জোর দেন তিনি। বলেন, ট্যাক্স ব্যবস্থা যদি স্থিতিশীল না হয় তাহলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে না। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এগুলোর অনেকগুলো চালু হয়েছে। কিন্তু ভালো সাড়া পাচ্ছি না। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।  

তিনি বলেন, আমরা কিছু ব্যবসায়ীকে দেখিয়ে বলি তারা ভালো আছে। তাদের অনেক টাকা, অনেক ব্যবসা। কিন্তু যে কেউ খবর নেন, দেখবেন আপনার কোনো আত্মীয়-পরিচিত ব্যবসা করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। অনেক ব্যবসা করতে গিয়ে বসে গেছে। এনবিআরকে এগুলোও খেয়াল রাখতে হবে।  

তিনি বলেন, আমরা যাই করি মনে রাখতে হবে আমাদের জবাবদিহির জায়গা আছে। জনগণ আমাদের প্রভু (মাস্টার)। এই গণআন্দোলন সেই মালিকদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। যারা সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি, ছাত্রদের গণআন্দোলন তাদের ম্যাসিভ সাজা দিচ্ছে।  

তিনি সময়ের কাজ সময়ে করার পরামর্শ দেন।  

উপদেষ্টা বলেন, সময়ের কথা সময়ে করতে হবে। হাসি মুখে কাজটি শেষ করতে হবে। কোনোভাবেই মনে হয় না যেন, করদাতাদের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করছেন না। আপনি যা করবেন, সব কিছু ম্যাগনিফাই হচ্ছে। শুধু বসকে খুশি করার জন্য কাজ করবেন না। আপনার সঙ্গে যারা আছে এবং দেশের কথা মনে রাখবেন।

এনবিআরের অটোমেশনের জন্য যত লাগে খরচ করা হবে বলেও জানান । এটা অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রস্তুত থেকেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাও প্রস্তুত আছে। রাজস্ব বোর্ডের অটোমেশনে  যা যা লাগে করানো হবে। তিনি রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় মানুষের উপস্থিতি কমিয়ে নীতি ও সিস্টেমের ওপর জোর দেন।  

অটোমেশন করা গেলে অভিযোগ কমে যাবে, কাজের গতি ও পারফরম্যান্স সবই বাড়বে।

তিনি বলেন, রাজস্ব বোর্ডের পদোন্নতির কাজ গুলো দ্রুত করবো। কারো হক আমি বন্ধ করবো না। রাজস্ব বোর্ডের কাজের ক্ষেত্রে আইন ও বিধি বিধান অনুসরণ করা হবে। আইন না মানলে, বিধি বিধান না  মানলে আইন দিয়েই তাকে ধরা হবে। আমরা আইনের ব্যত্যয় করতে করতে এমন পর্যায়ে গিয়েছি যে, আমাদের সন্তানরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তোমরা এটা করোনি।

নবনিযুক্ত এনবিআর চেয়ারম্যান নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। বলেন, সবার উপরে রাষ্ট্রের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হলে রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিতে হবে। বেশি রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠান ধ্বংস যেন না হয়, কর্মসংস্থানের জায়গা যেন নিঃশেষ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। কারণ রাষ্ট্রও এগুলো নিশ্চিত করতে চায়।

ওভার ইনভয়েস বা আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়। এ টাকা আমাদের তৈরি পোশাকশ্রমিকের টাকা, এ টাকা আমাদের বিদেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করে টাকা পাঠাচ্ছে। এই সাধারণ মানুষের অর্থ যেন কিছু লোক অসৎ পথে বিদেশে পাচার করে না নিয়ে যায় - সেই সতর্কতা দেন উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, ঘাটতি বাজেট করার মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ঋণের বোঝা তৈরি করা হয়েছে। আমরা আগামীর জন্য ভালো কিছু করতে চাই।  কিন্তু ঘাটতি বাজেট করে ঋণের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের ওপর ঋণের বোঝা দিয়ে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে অসাম্য তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, গরিব মানুষের ঋণের বোঝা কমাতে হবে। পরোক্ষ কর গরিব মানুষকে বেশি দিতে হয়। ১৯৭২ সালে পরোক্ষ কর ছিল ৯০ ভাগ আর প্রত্যক্ষ কর ছিল ১০ ভাগ। এখনও অবস্থা খুব একটা উন্নতি হয়নি। এখন ৭৫ ভাগ পরোক্ষ আর ২৫ প্রত্যক্ষ। রাজস্ব আদায়ের নেট সম্প্রসারণ করতে হবে। ৫ শতাংশের নিচে রাজস্ব নিবন্ধনের আওতায় এসেছ। বাকি মানুষ ট্যাক্স নিবন্ধনের বাইরে আছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যাতে কোনো নাগরিক উপযোগী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব দিতে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
জেডএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।