ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শান্ত মিরপুর, পুলিশের পাহারায় চলছে কারখানার উৎপাদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
শান্ত মিরপুর, পুলিশের পাহারায় চলছে কারখানার উৎপাদন

ঢাকা: মিরপুর-১৪ নম্বর সেক্টরের কচুক্ষেতের প্রায় সব তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন চলছে। পুলিশের পাহারায় ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

পাশাপাশি সাদা পোশাকের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে মিরপুর-১৪ কচুক্ষেত ও মিরপুরের-১৩ এর এক নম্বর বিল্ডিং এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) পোশাক কারখানা শ্রমিকদের অবরোধ, বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় পুলিশি পাহারা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  

কচুক্ষেতের সড়কের সেনানিবাসের প্রবেশে সড়ক থেকে মার্ক হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সকাল থেকে পুলিশ সতর্ক অবস্থান করছে। রয়েছে সাদা পোশাকে বিভিন্ন এজেন্সি। সেনাবাহিনীর গাড়িও দেখা গেছে। এর মধ্যে সকাল থেকে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকরা কাজের জন্য কারখানায় প্রবেশ করেন।  

শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ রিপোর্ট লেখার সময় শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করছেন। কোনো বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি।

বৃহস্পতিবার ‘ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন’ নামে গার্মেন্টস থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আজ ওই কারখানাটিই শুধু বন্ধ আছে। পাশেই পুলিশ সতর্ক অবস্থানে দাঁড়িয়ে।

দায়িত্বরত কাফরুল থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আব্বাস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গতকালের বিক্ষোভের কারণে আজ আমরা সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোর সামনে অবস্থা করছি। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে প্রবেশ করেছেন, এখনো কাজ করছেন তারা। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাগুলোর গেটের পাশেই ১৫/১৬ জন এপিবিএন-এর সদস্য অবস্থান করছেন। সতর্ক টহলও চলছে মিরপুর-১৪ নম্বরের সড়কে।

কচুক্ষেতের সেনটেক্স ফ্যাশন, ক্লদিং মেকার, এসআর ফ্যাশন, এমার ফ্যাশন, হাফসা ফ্যাশন ও ফিউচার ফ্যাশন কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছেন। মিরপুর-১৩ নম্বরে লোডস্টার, ভিশন-১ ও দুই ও ড্রিমল্যান্ড কারখানায় উৎপাদন চলছে। পাশেই রিসাল অ্যাপ্যারেল ও এমবিএম ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানায় সাপ্তাহিক ছুটি চলছে।  

গতকাল শ্রমিকরা যেখানে অবরোধ-বিক্ষোভ করেছিল ও পুলিশ-সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন দিয়েছিল, সড়কের সেই স্থান ইতোমধ্যে পরিস্কার করা হয়েছে। পরিস্থিতি একেবারে শান্ত। বোঝার উপায় নেই, গতকালই এখানে সংঘর্ষ বেধেছিল, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।

কচুক্ষেতে সংলগ্ন কারখানার পাশে সড়কের দোকানগুলো অন্য কর্মদিবসের মতোই সকাল থেকে পসারা নিয়ে বসেছে। ফুটপাথে সবজি বিক্রেতার ভ্যানসহ নানান পণ্য নিয়ে বসেছেন হকার-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে সকালে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা একেবারে নির্ভার-নিরুদ্বেগ, বেচাকেনায় মগ্ন।

মিরপুর-১৪ নম্বরে ক্লদিং অ্যাপারেল কারখানার কর্মকর্তা আব্দুল বারিক বাংলানিউজকে বলেন, সেনাবাহিনী নেমেছে। আজ বিক্ষোভ করার সাহস হবে না কারও। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করলে ব্যবস্থান নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

ফার্নিচার দোকানের ম্যানেজার মাসুদ জানান, আজ কোনেরা সমস্যা নেই। শ্রমিকরা কাজ করছেন। আমরা দোকান খুলেছি। পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন টহল দিচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের।

গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রমিক বিক্ষোভের কারণ নিয়ে গণমাধ্যমে খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় পুলিশ ও গার্মেন্ট কারখানা কর্মচারী।

কচুক্ষেতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের বিষয়ে দায়িত্বরত পুলিশের আরেক সাব-ইনসেপেক্টর জাকির হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন কারখানার এক শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় কারখানা ভবনের দুই ফ্লোরে দুই শ্রমিকের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আর এই ঘটনা থেকে শ্রমিক বিক্ষোভের সূত্রপাত। দুই শ্রমিকের দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগও নেয় মালিকপক্ষ। কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে রূপ নেয় শ্রমিক বিক্ষোভের। এর সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রমিকের দাবি। শেষে সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয় শ্রমিক বিক্ষোভ থামাতে।

মিরপুরে-১৪ এলাকার কারখানাগুলোতে যে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে তা শ্রমিক অসন্তোষের কারণ থেকে সৃষ্টি হয়নি; জানান এই কর্মকর্তা।

বিক্ষোভের সূত্র ধরে আগের দফায় সেনটেক্স ফ্যাশনের কারখানায় ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। এ দফায় কারখানাটিতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।  

কারখানাটির একজন কর্মচারী রুবেল আহমেদ বলেন, যে কোনো অজুহাত ধরেই বিক্ষোভ করা হচ্ছে। এক কারখানায় বিক্ষোভ শুরু হলে আরেকটি কারখানা থেকে শ্রমিকদের বের করে আনা হয়। শ্রমিকরা বের হতে রাজি না হলে বা কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি না দিলে ওই কারখানা ভাঙচুর চালানো হয়। ৫ আগস্টের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটা শুরু হয়েছে।  এসব কারণে এক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হলে আরেক আশপাশের সব কারখানা ছুটি দিতে হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
জেডএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।