দিনাজপুর: এক মাসে দেড় লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি। তবে পাথর বিক্রিতে ধীরগতির ফলে খনিতে দেখা দিয়েছে খনির ইয়ার্ডে পাথর মজুদের স্থান সংকট।
গত অক্টোবর মাসে এই খনি থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৫ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করেছে। এটি এই খনির ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ উত্তোলন। এর আগে এই খনি থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করেছিল।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবিক্রিত পাথর বিক্রির গতি করতে দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যে পরিমাণে পাথর উত্তোলন হচ্ছে তাতে করে আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে পাথর খনির উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এর আগে স্থান সংকুলানের অভাবে চলতি বছরের ০১ ফেব্রুয়ারি খনিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে দুই মাস নয়দিন পর ৯ এপ্রিল থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করা হয়। এ সময় ৭০০ শ্রমিক-কর্মচারীকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা এক প্রকারে সমস্যার মধ্যে পড়েছিল।
ইয়ার্ডে স্থান সংকুলানের অভাবে যাতে করে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে না যায় এজন্য দাবি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিটিসির এক কর্মকর্তা।
তবে মধ্যপাড়া পাথর খনির সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারি উন্নয়ন কাজে যাতে করে এই প্রতিষ্ঠানের পাথর ব্যবহার করা হয় এমন নিয়ম চালু করলে খনিতে অবিক্রিত পাথর থাকবে না। রাজস্ব বাড়বে একইভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান।
খনি সূত্র জানায়, মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে উৎপাদনের মাসিক এই নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টির ফলে খনিটি বর্তমানে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু খনি থেকে তেমনভাবে পাথর বিক্রি হচ্ছে না। সঠিকভাবে বিক্রি না হলে আগামী দেড় থেকে দুই মাস পর পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ পাথর উত্তোলন হলেও বিক্রি না হওয়ায় স্থান সংকুলানের অভাব দেখা দেবে। বর্তমানে এই খনিতে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টনেরও অধিক পাথর মজুদ রয়েছে।
এ বিষয়ে মধ্যপাড়া পাথর খনির কোম্পানি সচিব মোছা. সালাতেয়ারা বেগম বলেন, বর্তমানে এই খনিতে ১০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি পাথর মজুদ রয়েছে।
পাথর বিক্রি কম জানিয়ে তিনি বলেন, যদি এমন নিয়ম করা হয় যে, সরকারি উন্নয়নে মধ্যপাড়া পাথর খনির পাথর ব্যবহার করতে হবে তাহলে এই খনির পাথর যেমন বিক্রি হবে তেমনিভাবে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি কমবে। এখন যে পরিমাণে পাথর মজুদ রয়েছে এবং জিটিসি পাথর উত্তোলন করছে। এতে করে আগামী দেড় থেকে দুই মাস পাথর উত্তোলন করে মজুদ রাখা যাবে।
জানা যায়, দেশের একমাত্র পাথর খনি হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ২০০৭ সালের ২৫ মে যাত্রা শুরু করে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। প্রথম অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক দেড় হাজার থেকে ১৮শ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫০০ টনে। উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকার ওপরে।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসি’কে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে লাভের মুখ দেখতে পায় সরকারি এই খনিটি। পাথরের মজুদ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি চাহিদা মাফিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সরবরাহ হতে শুরু করে মধ্যপাড়া খনির পাথর।
লাভের মুখ দেখায় পাথর উত্তোলনের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোডিয়াম জিটিসি’র সঙ্গে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের জন্য ছয় বছরের জন্য দ্বিতীয় দফায় পুনঃ চুক্তি করে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (মধ্যপাড়া পাথর খনি) কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২৪
এসআরএস