ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মূল্যস্ফীতি রোধে টাকা ছাপিয়ে ঋণ বন্ধ, ৪০ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ সরকারের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৪
মূল্যস্ফীতি রোধে টাকা ছাপিয়ে ঋণ বন্ধ, ৪০ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ সরকারের

ঢাকা: বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় আলোচনায় মূল্যস্ফীতি। হু হু করে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে নাগরিকদের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি ওঠে।

এজন্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে মূল্যস্ফীতি কমাতে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো সরকারই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে। যদিও এ সময়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বাড়তি ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। জুলাই থেকে অক্টোবর—চার মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪০১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫৬ হাজার ২৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৯ হাজার ৮৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পাঁচ মাসে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪০১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

আগের বছরের এই সময়ে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে এ টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে মূল্যস্ফীতি বা পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পতিত সরকারের আমলে গত কয়েক বছর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে হু হু করে। এতে মানুষে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। বরং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে।

অন্যদিকে ঋণের সুদ হার বাড়িয়ে চাহিদা কমানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ভোক্তা ঋণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কমে যায়।    

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া মূল্যস্ফীতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ বলে মনে করেন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণ দিলে বাজারে সার্কুলেশন বেড়ে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। কিন্তু সরকারের এখন প্রধান কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সেজন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এটা দোষের নয়।

তিনি বলেন, এখন যেটা হচ্ছে, লেনদেনের মাধ্যমে একজনের পকেট থেকে আরেকজনের পকেটে টাকা যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা নতুন সরকারের এখন লক্ষ্য হলো মানুষের জীবন সহজ করা। টাকা না ছাপিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে।     

বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। প্রতি বছর এ ঋণ নেওয়া হয়, আবার পরিশোধও করা হয়ে থাকে। এ যাবত ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৯০ হাজার ৮৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২১৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।