ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আগ্রহ কমছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৫
আগ্রহ কমছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং

ঢাকা: ব্যাংকে অর্থ লেনদেনে পরিচিত একটি মাধ্যম ‘এজেন্ট ব্যাংকিং’। সরাসরি ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিযুক্ত এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়াই এজেন্ট ব্যাংকিং।

ব্যাংকের শাখার তুলনায় কম লোকবল, কোনো স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা খরচ ছাড়াই এমন ব্যাংকিং চালানো যায়।  

২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ছোট পরিসরে শুরু হওয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে প্রত্যন্ত এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং বেশ জনপ্রিয়তা পায়। যার মাধ্যমে গ্রাহক পায় সেবা, সৃষ্টি হয় কিছু কর্মসংস্থানও। কিন্তু নানা বাস্তবতায় সেই জনপ্রিয়তায় যেন ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যাংক এজেন্টরা বলছেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ পাওয়ার জটিলতা, হ্যান্ডেলিংয়ে সমস্যা ও প্রযুক্তিগত দিকে অতিসতকর্তায় সৃষ্ট কড়াকড়ির কারণে গ্রাহক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলো গ্রাহকবান্ধব হয়ে ওঠায় এখন মানুষ সরাসরি শাখাতেই সেবা নিতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দুই কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭২৩টি। গত এক বছরে (২০২৪ এর অক্টোবর পর্যন্ত) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৫৮টি। এর আগের দুই বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির সংখ্যা সাড়ে ৩৮ লাখের ওপরে ছিল। অর্থাৎ গত বছর আগের দুই বছরের চেয়ে অ্যাকাউন্টের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১১ লাখের মতো।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট যোগ হয় ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৩টি। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে যোগ হওয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৭টি।

সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, অ্যাকাউন্ট কমার পাশাপাশি গত এক বছরে লেনদেনের সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণও কিছুটা কমেছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এজেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার পেছনে ব্যাংক শাখাগুলোর সেবার মান উন্নয়ন ও ঝামেলাহীন দ্রুত লেনদেন, নির্দিষ্ট  সময়ে লেনদেনের পর ব্যাংক শাখা থেকে ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং উল্টোদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এ ধরনের সুবিধা না থাকাটা কারণ বলছেন কৃষ্টিয়ার ফিলিপনগরের একটি ব্যাংকের এজেন্ট আলিফ সরকার।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগের বছরগুলোতে মানুষকে অনুরোধ করে অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও এখন কাজ ছাড়া মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আসছে না। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে এজেন্টরা গ্রাহকের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মানুষের আগ্রহ কমেছে। টাকা লেনদেনে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) সিস্টেম থাকার কারণে ঝামেলা মনে করা ও টাকা অন্যে তুলে নেওয়ার ভয় থেকে অনেক গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আসতে চান না।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সার্ভার সমস্যা সব গ্রাহকের ক্ষেত্রেই হয়। কখনো এনআইডি সার্ভারের সমস্যায় পড়তে হয়, কখনো ব্যাংকের। এজন্য কোনো কোনো সময় টাকা লেনদেনে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহককে। এসব কারণেও গ্রাহক এখন ধারে-কাছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দ্বারস্থ না হয়ে সরাসরি শাখায় চলে যান। লেনদেন করে ফেলেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে।  

কুষ্টিয়ার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট আল মামুন খান মনে করেন, চেক নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার কারণে মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আসছে না।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমানতের টাকা তোলার ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েই তোলা যায়। কিন্তু ক্যাশবই বেশি বিশ্বাস করে মানুষ। আর ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ক্যাশবই নিতে জেলা শহরে যেতে হয়। এজন্য ডাচ-বাংলার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অগ্রহ কমছে মানুষের।  

এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলোও আগের চেয়ে গ্রাহকবান্ধব হয়েছে। ব্যাংক শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রচারের পাশাপাশি আগের চেয়ে সেবার মানও বাড়িয়েছে স্ব স্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। নিয়মিত লেনদেন করলে বা ভালো আমানত জমা রাখার পর প্রয়োজনে ঋণ চাইলেই ব্যাংকগুলো তা দেয়।  

উল্টোদিকে এজেন্ট ব্যাংক শুধু আমানত জমা করতে পারে, কিন্তু ঋণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিযুক্ত এজেন্ট শর্ত পালন করতে না পারার কারণে গ্রাহক ঋণ বঞ্চিত হচ্ছে। এসব কারণে মানুষ এজেন্ট ব্যাংকে আগের মত আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে জানান একাধিক ব্যাংকের এজেন্ট।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মহিষকুন্ডিতে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট মো. আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন, অ্যাকাউন্ট খোলার মত কাজগুলো এখন অনেকটা মূল ব্যাংকের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা, এজেন্ট আউটলেট কেমন, যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে কি না, এসব বিবেচনার ওপর নির্ভর করে। এজন্য কোনো কোনো এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা ও লেনদেন কমলেও সব এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কমেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৫
জেডএ/এইচএ/
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।