ঢাকা, সোমবার, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এবার লক্ষ্মীপুরে ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভাবনা

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৫
এবার লক্ষ্মীপুরে ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভাবনা

লক্ষ্মীপুর: উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সয়াবিন আর সয়াবিন। এখানকার আবহাওয়া এবং মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

ফলে রবি মৌসুমে কৃষকেরা সয়াবিন চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিশেষ করে যে সব জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্ভব হয় না, ওই সব জমিতে চাষ করা হয় সয়াবিন।  

অন্যান্য ফসল উৎপাদনের তুলনায় সয়াবিন চাষে খরচ কম লাভ বেশি। বিভিন্ন পশুখাদ্য তৈরির কারখানায় সয়াবিনের রয়েছে বেশ চাহিদা, ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে দাম। সয়াবিন এখন অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষিবিভাগ।  

সারা দেশে যে পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন হয়, তার ৮০ শতাংশ উৎপাদন হয় লক্ষ্মীপুর জেলাতে। এ জন্য এ জেলাকে সয়াল্যান্ড বলা হয়।  

কৃষকরা জানিয়েছেন, ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে যে খচর হয়, তার চেয়ে সয়াবিন চাষে খরচ কম। অন্যান্য ফসল চাষে যেখানে মাটির শক্তি হ্রাস পায়, সেখানে সয়াবিন চাষের ফলে মাটির উর্বরতাও বাড়ে। ফলে সয়াবিনের জমিতে অন্যান্য ফসলও বেশ ভালো হয়।  

তারা আরও জানান, সয়াবিন চাষে সর্বোচ্চ দুবার করে সার-ওষুধ দিতে হয়। এছাড়া আগাছা পরিষ্কারের জন্য গাছের চারা ছোট অবস্থায় একবার নিড়ানি দিলেই যথেষ্ট।  

জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ফসলি জমিগুলোতে এখন সয়াবিনের সমারোহ। এক থেকে দেড় মাস বয়সী সয়াবিনের চারার কচিপাতায় দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। দেড় থেকে দুই মাস পর কৃষকের ঘরে উঠবে সয়াবিন।  

তবে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মাঝে মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় সয়াবিন চাষিদের। এক্ষেত্রে জলবায়ু ও লবণাক্ততা সহনশীল এবং স্বল্প জীবনকালের সয়াবিনের জাত চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে কৃষিবিভাগ।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলাতে চলতি মৌসুমে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় দুই মেট্রিক টন সয়াবিন পাওয়া যায়। সে হিসেবে এবার সয়াবিনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। জেলার সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের আবাদ হয় মেঘনার উপকূলীয় উপজেলা রামগতিতে। এখানে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। কমলনগর উপজেলাতে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর, সদর উপজেলাতে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর ও রায়পুর উপজেলাতে ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।  

জেলার কমলনগর উপজেলার দক্ষিণ চর মার্টিন গ্রামের কৃষক মোহতাছিন বাংলানিউজকে বলেন, এবার ৫২ শতাংশ জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেছি। খচর হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। আশা করি, ৩০ মণ সয়াবিন পাব। প্রতি মণ সয়াবিনের বাজারদর দুই হাজার টাকার মধ্যে থাকে।  

একই এলাকার কৃষক আবদুর রহমান বলেন, প্রতি বছর সয়াবিন চাষ করি। ধানের চেয়ে লাভ বেশি হয়। গেল বছর ২২০০ টাকা মণ দরে ৪৯ হাজার টাকার সয়াবিন বিক্রি করেছি। এবারও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার সয়াবিন বিক্রির আশা করছি।  

তিনি জানান, সয়াবিন চাষে ধান আবাদের চেয়েও খচর এবং পরিশ্রম কম হয়।  

সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের কৃষক নুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, বোরো ধান বা বিভিন্ন সবজি আবাদে প্রচুর সার এবং কীটনাশক প্রয়োজন। এতে খরচও বেশি পড়ে। কিন্তু সয়াবিনে সার-কীটনাশক কম লাগে। জমিতে বীজ বপনের আগে একবার, এরপর গাছের ফুল আসার সময় একবার সার দিতে হয়। কীটনাশকও দুই বার দিলে চলে। এ কারণে সয়াবিন চাষে খরচ কম হয়।  

একই এলাকার কৃষক শাহ আলম বলেন, যেসব জমিতে পানি সেচের উৎস থাকে না, ওই সব জমিতে সয়াবিনের আবাদ করা হয়। সয়াবিন লাভবান শস্য। কিন্তু ঝুঁকিও আছে। পাকা সয়াবিন ঘরে তেলার আগে যদি অতিবৃষ্টি হয় এবং ক্ষেতে পানি জমে যায়, তাহলে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যায়। এতে লাভের বদলে লোকসান হয়।

কৃষক সোহেল ইসলাম বলেন, গেল মৌসুমে সয়াবিন তোলার আগেই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে খেতে পানি জমে প্রায় ৬০ শতাংশ জমির সয়াবিন নষ্ট হয়ে গেছে। এতে লোকসান হয়েছে। এবার ১২০ শতাংশ জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেছি। শেষ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া ভাল থাকে, তাহলে লাভবান হব।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, সয়াবিন চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। গেল মৌসুমে জেলায় ৩৫০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, সয়াবিন চাষে পানি কম লাগে। এছাড়া উপকূলীয় জমিতে কিছুটা লবণ রয়েছে, অন্য ফসল লবণাক্ততা সহ্য করতে না পারলেও সয়াবিন পারে। আমরা কৃষকদের উন্নত জাত সরবরাহ করি। বীনা ৫, বীনা ৬, বারি ৪, বারি ৬, বিইউ ৩, বিইউ ৪, বিইউ ৫- এসব জাতের সয়াবিনের দানা বড়, ওজন বেশি। তাই ফলনও বেশি। এগুলো পানি ও জলবায়ু সহনশীল, আগাম ঝড় থেকে রক্ষা পায়। বর্তমানে সয়াবিনের জীবনকাল কম। কৃষকরা আগেভাগেই বীজ বপন করলে দ্রুত সয়াবিন কাটতে পারবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।