ঢাকা, বুধবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পরিকল্পনাবিহীন রাঙামাটির পর্যটন শিল্প

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
পরিকল্পনাবিহীন রাঙামাটির পর্যটন শিল্প কাপ্তাই হ্রদের ওপর অবস্থিত ঝুলন্ত সেতু।

রাঙামাটি: সবুজ ও অরণ্য ভরা হ্রদ পাহাড়ের শহর পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। এ অঞ্চলের প্রকৃতির রূপ যিনি একবার দেখেছেন তিনি বারবার এ রূপের প্রেম মজেছেন।

প্রকৃতির ছয় ঋতুর দেখা পেতে হলে যে কাউকে এ অঞ্চলে ছুটে আসতে হবে। প্রতি বছর এমন রূপের দেখা পেতে এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য এমন সুনসান নীরবতায় অবকাশ যাপনে ছুটে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক।

তৎকালীন সরকার আশির দশকে রাঙামাটিকে পর্যটন নগরী ঘোষণা করে এখানে কিছু পর্যটন স্পট গড়ে তোলে। জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের দুই পাহাড়ের প্রান্তকে এক করতে নির্মিত হয়েছিল ঝুলন্ত সেতু। ওই এলাকায় পর্যটন করপোরেশনের কাটেজও নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ বছর ধরে জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরে কিছু তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে এ জেলার পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে প্রাকৃতি পরিবেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রিসোর্ট, হেটের-মোটেল। ভারতের কাশ্মিরী আদলে কাপ্তাই হ্রদে নামানো হয়েছে অসংখ্য হাউজ বোট। মূলত তরুণদের এমন উদ্যোগ জেলার পর্যটন শিল্পকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রেখেছে।

রাজনৈতিক জটিলতার কারণে অনেক সময় উদীয়মান এ তরুণ উদ্যোক্তাদের কঠিন সময় পার করতে হয়। রাজনৈতিক জটিলতায় পর্যটন স্পট অনেক সময় বন্ধ থাকায় বছরের বেশ কয়েক মাস তাদের আয়ের চাকা বন্ধ হয়ে পড়ে। যে কারণে তাদের চরমভাবে অর্থনৈতিক লোকসান গুণতে হয়।

ব্যাংক ঋণ নির্ভর এ তরুণ উদ্যোক্তারা অনেক সময় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পর্যটন নির্ভর ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তারা পায় না কোনো সরকারের সুযোগ-সুবিধা। আবার অনেক তরুণ উদ্যোক্তা পর্যটন ব্যবসায় আগ্রহ থাকলেও এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা করতে শতবার ভাবছেন।

অথচ স্রষ্টার নিজ হাতে গড়া এমন প্রাকৃতিক লীলা ভূমি হতে পারে দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট। এমন সৌন্দর্য পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না।

এজন্য সরকারের সৎ ইচ্ছা, দীর্ঘমেয়াদি সুপরিকল্পনা, বাজেট বৃদ্ধি, রাজনৈতিক সহিংসতা রোধ করতে পারলে এ জেলার পর্যটন শিল্প বিশ্বের যেকোনো পর্যটন স্পটকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাঙামাটি জেলাকে পর্যটন নগরী গড়ে তোলতে হলে প্রথমে পর্যটকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, কাপ্তাই হ্রদকে পর্যটন ভিত্তিক কার্যক্রমে নিয়ে আসতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা কমিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত ডিজেল চালিত গাড়ি ব্যবস্থা, হোটেল-মোটেলের মান বৃদ্ধি এবং সুলভ মূল্যে ঐতিহ্যবাহী খাবারের হোটেল ব্যবস্থা নিতে হবে।

বার্গি লেকের স্বত্বাধিকারী সুমেধ দেওয়ান বলেন, রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হলে পর্যটন ব্যবসায় কোটি টাকা লোকসান হয়। সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক জটিলতা দূর করতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

রাঙামাটি হাউস বোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পর্যটনখাতে আমাদের কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। পর্যটক না থাকলে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুব করুণ হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ সময় কর্মচারী ছাঁটাই করতে হয়।  

রাজনৈতিক জটিলতা দূর করতে পারলে এখানকার পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

পর্যটন বিভাগের আহ্বায়ক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মো. হাবীব আজম বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু ছোট-বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। রাঙামাটিকে একটি উন্নত পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটকরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৫
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।