ঢাকাঃ অসংখ্য মামলার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ আ্যন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। প্রতি বছরই নানা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এসইসির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কমিশনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে কোনো মামলারই দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। বছরের পর বছর এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় অনিয়মকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর ভ’ক্তভোগী বিনিযোগকারীরা যথাসময়ে সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে ‘জাস্টিস ডিলেইড,জাস্টিস ডিনাইড ’ আপ্তবাক্যটিই সত্য হয়ে দেখা দিচ্ছে।
১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজার কেলেংকারির ঘটনা বহুল আলোচিত। ওই কেলেংকারি নিয়ে ২ জুলাই ৯৭ সালে করা দায়ের করা ১৫টি মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এসব মামলার ৭টি আপিল বিভাগে, ২ টি হাইকোর্ট বিভাগে এবং বাকি মামলাগুলো এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আদালতের দীর্ঘসূত্রতা এবং মামলা নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদিচ্ছার অভাবেই এমনটা হচ্ছে।
এসইসি, ডিএসই ও সিএসই দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তির জন আদালতে আলাদা বেঞ্চ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। আলাদা বেঞ্চ গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষ দেখা করেন। আইনমন্ত্রীও আলাদা বেঞ্চ গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু এরই মধ্যে দীর্ঘ একটি বছর পার হয়ে গেছে। তবু সে আশ্বাস বাস্তবায়নে ছিটেফোটা অগ্রগতি নেই।
দেখা গেছে, মামলার কারণে অনেক কোম্পানির লেনদেন বছরের পর বছর স্থগিত হয়ে থাকে। ফলে বিনিয়োগকারীদের টাকা যায় আটকে । এভাবে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি খুইয়ে নি:স্ব হয়ে গেছেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে মামলা করে বরং ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা। অথচ অনিয়মকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শাস্তির বদলে লাভবান হচ্ছে। কারণ তাদের টাকা তো আর আটকে থাকে না।
বর্তমানে বিভিন্ন আদালতে এসইসি কর্তৃক এবং এসইসির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২৪৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিচারধীন এসব পুরাতন মামলার সঙ্গে প্রতি বছরই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। এসইসি বাদী হয়ে এবং এসইসিকে বিবাদী করে দায়ের হওয়া এসব মামলা কতোদিনে শেষ হবে তাও জানে না কর্তৃপক্ষ।
এসইসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিচারাধীন ২৪৮ টি মামলার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৮ টি, হাইকোর্ট বিভাগে ৯৭টি, মহানগর দায়রা জজ আদালত ঢাকা ৬টি, মহানগর ১ম সহকারী দায়রা জজ আদালত ঢাকা ১টি, ৪র্থ যুগ্ম জেলা জজ আদালত ঢাকা ১টি, ৫ম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ঢাকা ৮টি, ৪র্থ সহকারী জজ আদালত ঢাকা ১টি, ৮ম সহাকারী জজ আদালদ ঢাকা ১টি, ৯ম সহকারী জজ (সাভার) আদালত ঢাকা ১টি, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকা ৮টি এবং জেনারেল সার্টিফিকেট আদালত ঢাকায় ১১৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে এসইসির সদস্য(আইন বিভাগের দায়িত্ব) মোঃ আনিসুজ্জামান এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অনেক মামলা আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় নিস্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। এটি আদালতের বিষয়। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আদালতে আলাদা বেঞ্চ গঠন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে আমাদের বত্তব্য তুলে ধরেছি। কিন্তু এখনো কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ’
অন্যদিকে ডিএসইর সাবেক সভাপতি মোঃ রকিবুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই সরকারের উচিত এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা আদালত বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া। ’
অন্যদিকে রিজভী নামের এক বিনিযোগকারী বলেন, ‘মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের যাতে কোনো সুযোগ সুবিধা দিতে না হয়,সেজন্য অনেক সময় কোম্পানির পরিচালকরা ইচ্ছা করেই নিজেরা এক জন আরেক জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর এর সঙ্গে ডিএসই এবং এসইসি‘র এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজস রয়েছে। ’
স্থানীয় সময়ঃ ১৬২৪ ঘন্টা ১৯ জুলাই ২০১০