ভৈরব, কিশোরগঞ্জ থেকে: বলা হয়ে থাকে, পুরান ঢাকার পরই ভৈরবের পাদুকা শিল্পের অবস্থান। এখানকার তৈরি জুতা পরেন সারাদেশের মানুষ।
কথা হলো সুবর্ণ সুজ কারখানার শ্রমিক মো: ফোরকানের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কারখানার ভেতরে নিয়ে বসালেন। বললেন নিজের ভেতরে চেপে রাখা দীঘর্দিনের কষ্টের কথা।
“এখানের শ্রমিকদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। দিন এনে দিন খেয়ে বেঁচে আছি কোনোরকম। ঈদপূজায় কিছু কাজ থাকলেও বছরের বাকি সময় ধুঁকতে ধুঁকতে চলতে হয়। ”
মাঝারি আকারের কারখানার মাঝে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় মাচা রয়েছে। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একজন শ্রমিক খাচ্ছেন। আরেকজন নারী শ্রমিক জুতার চামড়া কাটায় ব্যস্ত। মাচার নিচে পশ্চিম কোনে মধ্যবয়সী আশ্রাফ উদ্দিন কাজ করছিলেন। ফোরকানের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে যোগ দিলেন তিনিও।
পাঁচ সন্তানের জনক আশরাফ বলেন, ডাল-ভাত খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। বছরের নিদির্ষ্ট সময় কাজ থাকলেও বাকি সময় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয়।
তিনি বলেন, ভৈরবে ৭ হাজারেরও বেশি কারখানায় লাখের ওপর শ্রমিক কাজ করে থাকেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ মৌসুমী শ্রমিক। আসল কথা হচ্ছে এদের কেউই ভালো নেই।
আশরাফের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে এবার ফোরকান বললেন, এক ডজন (১২ জোড়া) জুতা তৈরির মজুরি পাই ১৫০-১৭০ টাকা। সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্ন্ত কাজ করে দুই ডজনের বেশি জুতা তৈরি করা যায় না। সে হিসেবে সারাদিন কাজ থাকলেও আমরা দৈনিক ৩০০-৩৫০ টাকার বেশি আয় করতে পারি না। এ টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে চলা বড় দায়। তারপর অর্ডার না থাকলে বেকার থাকার টেনশন তো রয়েছেই।
সুবর্ণ সুজ কারখানা থেকে বেরিয়ে এক গলি পর ইবি সুজ কারখানা। কারখানার শ্রমিক আউয়ালের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মালিক আবদুল গাফফারের প্রবেশ।
বতর্মানে পাদুকা ব্যবসার সম্পর্কে জানতে চাইলে তার মুখ থেকেও বেরিয়ে আসল হতাশার কথা। তার আশংকা যেভাবে প্লাস্টিকের জুতা বাজারে ছেয়ে যাচ্ছে তাতে চামড়া ও চামড়াজাত জুতার অস্তিত্ব অচিরেই হুমকির মুখে পড়বে। হারিয়ে যেতে পারে ভৈরবের ইতিহ্যবাহী পাদুকা শিল্প।
বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা গেল, শ্রমিকদের একটা বড় অংশই শিশু। পুষ্টির অভাব তাদের চোখে মুখে স্পষ্ট। সামান্য আয়ের জন্য পড়ালেখা ছেড়ে এ পেশায় তারা। মালিকরাও কম মজুরিতে তাদের খাটাতে পেরে সন্তুষ্ট। এই চিত্র পুরো ভৈরব পাদুকা শিল্পের।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৫