মিরপুর থেকে: মিরপুর ঝুটপট্টির আগুনে পুড়েছে ঝুট, পুড়েছে স্বপ্ন। স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা স্বপ্ন নিয়ে মিরপুর এলাকায় ঝুটের ব্যবসা করে থাকেন।
বুধবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে আলোচিত জল্লাদখানার পাশেই ঘটে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা। এতে ৬০টি ঝুট ব্যবসায়ী গোডাউনের সবই পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের কাউকে কাউকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কেননা এখানেই ছিলো তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের নাম আব্দুল আউয়াল কাটাকাপড় মার্কেট। এই মার্কেটের সাথে পুড়েছে পাশের কয়েকটি বস্তির ঘর।
ঝুট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে প্রায় ৭/৮ কোটি টাকার ঝুট কাপড় ছিলো। এসব ঝুট কাপড়ের একটি টুকরোও কেউ রক্ষা করতে পারেননি।
তবে কিভাবে কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত তার কোনো তথ্য দিতে পারেননি কেউ। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ মার্কেটের কোথাও কোনো চুলা বা আগুনের কাজ-কারবার ছিলো না। পাশের বস্তি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলেও জানান অনেকে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কারণ যে সময় আগুনের সূত্রপাত হয়, তখন সবাই ছিলো লাঞ্চে।
আগুনের সচিত্র সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে কয়েকজন ঝুট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া যায়।
মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ঝুটপট্টিতে তিনটি সমিতি আছে। এছাড়াও ব্যক্তি মালিকনায় ছিলো আরো কিছু গোডাউন। এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় শতাধিক গোডাউন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নবজাগরণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম খান বাংলানিউজকে জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। এই ঝুটপট্টিতে সবচেয়ে বড় গোডাউনটি ছিলো এই সমিতির সদস্যদের। ওই গোডাউনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আল-আমিন বহুমুখী সমিতির একজন সদস্য গোড়াউন মালিক ইউনুস মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ঝুটপট্টিতে প্রায় ৬০ টি গোডাউন তাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সবগুলে গোডাউন পুড়ে গেছে। অগ্নিকান্ডে নিজের’ই প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলেও জানান ইউনুস মিয়া।
যুব উন্নয়ন সমিতির সদস্য গোডাউন মালিক মোস্তফা কামালও একই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অবরোধ-হরাতাল না থাকলে আমদের এত বড় ক্ষতি হতো না। দেশের এমন পরিস্থিতির কারণে আমরা মালামাল সাপ্লাই দিতে পারিনি। ফলে মালামাল গোডাউনে জমিয়ে রাখতে হয়েছে। ঝুটপট্টির অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সম্পর্কে কোনো গোডাউন মালিকই কিছুই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
অনেকেই এই আগুন পরিকল্পিত বলেও অভিযোগ করেন। তাদের দাবি মালিক ভাড়া বাড়ানোর জন্য অনেক দিন থেকে চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু আমরা কেউ তাতে সায় না দেওয়াতে তিনিই এটি করিয়ে থাকতে পারেন।
মালিকরা জানায়, এই ঝুটপট্টির ভিতরে কোনো রান্নার জায়গা নেই, যে পাশে আছে সেপাশে আগুন ছড়ায়নি। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের থেকে নয়তো পরিকল্পিতভাবেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। সিগারেটের থেকে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে না। সিগারেটের আগুনে এমন আগুন লাগে না।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫