ঢাকা: তৈরি পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালা-২০১৪’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চূড়ান্ত খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, সাব-কন্ট্রাক্ট পেতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি দিতেই হবে। থাকতে হবে শ্রমিকদের জন্য গ্রুপ বিমাও।
কাজ পেতে সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাকে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্য হতে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী, সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালার নাম হবে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালা-২০১৪’। সরকারের গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে নির্ধারিত তারিখ থেকে নীতিমালার শর্ত কার্যকর হবে।
সাব-কন্ট্রাক্ট প্রতিষ্ঠান বা কারখানা বলতে বোঝাবে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বা কারখানা থেকে পোশাক তৈরির কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান বা কারখানাকে।
চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, নীতিমালার শর্ত পালনে সক্ষম কারখানা সাব-কন্ট্রাক্টিং কাজে অংশ নিতে পারবে। সাব-কন্ট্রাক্ট কার্যক্রমের জন্য একটা চুক্তিপত্র থাকতে হবে। এ চুক্তিপত্রের একটি কপি সংশ্লিষ্ট সংগঠনকে (বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএ) দিতে হবে।
সাব-কন্ট্রাক্টিং কাজে নিয়োজিত কারখানা ভবনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বা লে-আউট প্ল্যানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে। সাব-কন্ট্রাক্ট পাওয়া কারখানার শ্রমিকদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী গ্রুপ বিমার আওতায় আনতে হবে এবং নিয়মিত প্রিমিয়াম পরিশোধ করে হাল-নাগাদ থাকতে হবে।
তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সাব-কন্ট্রাক্ট পাওয়া কারখানার মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা মীমাংসার জন্য যে কোনো পক্ষ সংগঠনের (বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএ) আরবিট্রেশন কমিটিতে আবেদন করবে। যা প্রচলিত আরবিট্রেশন বিধি মোতাবেক চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
এছাড়া বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএ এ দুই সংগঠনের মধ্যে কারখানা যেই সংগঠনের সদস্য সেই সংগঠনকে প্রতি তিন মাস অন্তর সাব-কন্ট্রাক্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বস্ত্র সেলে পাঠাতে হবে।
সাব-কন্ট্রাটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ নীতিমালা বা নীতিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তার উৎপাদন বা রফতানি কাজে দেওয়া সেবা সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আইন, বিধি ও নির্বাহী আদেশ বলে সরকার ও সংগঠনের মাধ্যমে এ সেবা বন্ধ করা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলানিউজকে বলেন, সাব-কন্ট্রাক্ট’র যে নীতিমালা করা হচ্ছে, আইনগতভাবে তার পরিপালন গুরত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে নীতিমালা পরিপালন করা হলে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।
তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালার ছয় ধারায় বলা হয়েছে সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের কোনো পক্ষ নীতিমালার বা নীতিমালার কোনো বিধানের ব্যত্যয় ঘটালে উপৎদান বা রফতানি কাজে প্রদত্ত সেবা সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বায়ার ও মূলকারখানার যৌথ দায় নিশ্চিত করা দরকার। যাতে সাব-কন্ট্রাক্ট’র বাইরে অন্য কোনো কারখানার মাধ্যমে কাজ করা না যায়। কারণ সাব-কন্ট্রাক্টিং’র নীতিমালা কমপ্লায়েন্স করে না এমন কারখানাকে কাজ দেওয়া হলে এবং ওই কারখানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মূলকারখানা সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালার দোহাই দিয়ে দায় অস্বীকার করতে পারে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সাব-কন্ট্রাক্ট নীতিমালা প্রণয়নের কারণ হিসেবে বলা হয়, ২০১২ সালে তাজরিন ফ্যাশানে অগ্নিকাণ্ডের ফলে অনেক সম্পদ ও জীবনহানি ঘটে। পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার, মালিক পক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ২০১৩ সালের জানুয়রি মাসে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি হয়।
ওই বছরের মার্চে চুক্তির অংশ হিসেবে ত্রি-পক্ষীয় কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর কর্ম-পরিকল্পনায় ভবনের নিরাপত্তার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫