ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকেই ঋণ দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক

শাহজাহান মোল্লা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকেই ঋণ দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক

ঢাকা: অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে অগ্রণী ব্যাংক। খোদ সংসদীয় কমিটিতেই এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঋণের দায় পরিশোধে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে পুনঃতফসিলের সুযোগ করে দিয়ে এই আর্থিক অনিয়ম করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ইলিয়াস ব্যানার্স ও এসডিএ কোম্পানিসহ বেশ কিছু  প্রতিষ্ঠানকে পূর্বের ঋণ পরিশোধ না করা সত্ত্বেও নাম মাত্র মরগেজ দিয়ে পুনরায় ঋণ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাই অভিযুক্ত অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামার নির্দেশ দিয়েছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
 
রোববার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়।

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, আ ফ ম রুহুল হক, মো. আফসারুল আমীন, বেগম রেবেকা মমিন, মো. শামসুল হক টুকু, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান প্রমুখ।
 
অগ্রণী ব্যাংকের এই অনিয়মে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬১৯ টাকা। অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি সিএ ফার্মকে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে বলেছে। অন্যথায় ফার্মকে বরখাস্ত করার এবং সম্পত্তি যাতে হস্তান্তরিত হতে না পারে সেজন্য অগ্রণী ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদানের  সুপারিশ করে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড.  মহিউদ্দিন খান আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকের কিছু লোক আর্থিক সুবিধার জন্য এসব কাজ করেছে। যারা নামমাত্র মরগেজের বিনিময়ে কিছু প্রতিষ্ঠানকে বার বার ঋণ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তাই আমরা তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।
 
কমিটি সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী বাংলানিউজকে বলেন, কাস্টম কর্মকর্তা ও কিছু ব্যাংক কর্মকর্তারা ক্রমন্বয়ে অনিয়মে জড়িয়ে পরছে। তাই কমিটি  দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
 
বারবার পুনঃতফসিলিকরণ ও অনিয়মিতভাবে ‘কস্ট অব ফান্ড’ কভার না করে সুদ মওকুফসহ পুনঃতফসিলিকরণের পরও ঋণের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ৬৯ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
 
এছাড়া প্রকল্প ও সিসি হাইপো ঋণের দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে পুনঃতফসিলিকরণ এবং আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ৪৮ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ১ শত ২৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
 
অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি হিসাব অব্যাহত রেখে অনাদায়ী অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তিন মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।
 
পুনঃতফসিলিকরণ আদেশে অর্জিত সুদসুদবিহীন হিসেবে প্রদর্শনের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও তা করায় ব্যাংক সুদ বাবদ ৪৮ লোখ ৫৭ হাজার ৪ শ’ ৬৫ টাকা আয় হতে বঞ্চিত হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এছাড়া নিয়মিত ঋণের দায় ব্লক হিসেবে স্থানান্তর করায় ব্যাংকের ৩৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৬শত ৬৩ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও অগ্রণী ব্যাংকের প্রতিনিধি নিয়ে তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করার সুপারিশ করে।
 
জামানত চার্জ গ্রহণ ব্যতিরেকে মেসার্স এস কে এম জুট মিলস লিমিটেডকে সিসি হাইপো ও প্লেজ ঋণ বিতরণ এবং সুদ মওকুফ ও পুনঃতফসিলিকরণের পরও দীর্ঘদিনের খেলাপি দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ২০ কোটি ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৪ শ’ ৩০ টাকা ক্ষতি দেখানো হয়েছে।

এছাড়া প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট আদায় ব্যতিরেকে পুনঃতফসিলিকরণ ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যর্থ হওয়ার পরও পুনরায় সময় বৃদ্ধি করায় ব্যাংকের ১৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ক্ষতি।
 
এদিকে জামানত ছাড়াই মেসার্স ওয়ানটেল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে প্রকল্প ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৩ শত ৫৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়াও প্রকল্প ঋণের খেলাপি দায় থাকা সত্ত্বেও প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং ডিমান্ড লোনের মালামাল মজুদে না থাকায় খেলাপি দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ১২ কোটি ৭২ লাখ ১১ হাজার ৩শত ৪৪ টাকা ক্ষতি দেখানো হয়েছে।

পুনঃতফসিলিকরণ সুবিধার আওতায় সম্পূর্ণ অর্থ আদায় সত্ত্বেও পুনরায় ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়ায় রপ্তানি ব্যর্থতায় পুনঃ সৃষ্ট ডিমান্ড লোন ও পিপি ঋণ বাবদ ব্যাংকের ৮কোটি ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯শত ৮২ টাকা ক্ষতি।

কাস্টম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ:
 
সহায়ক জামানত ছাড়াই অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানিতে বার বার ক্যাশ এলসি স্থাপনেরর সুযোগ করে দিচ্ছে কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তারা। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ টিআর, পিএডি ও পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের আর্থিত ক্ষতি ২২৫ কোটি ২৬ টাকা। তাই সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অনিয়মে জড়িত কাস্টম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এনবিআরকে নির্দেশনা প্রদান করেছে। তিন মাসের মধ্যে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
 
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের এমডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, অডিট বিভাগের কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।