ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মালয়েশিয়া চায় এফটিএ, বাংলাদেশ শ্রমিক নিয়োগ

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
মালয়েশিয়া চায় এফটিএ, বাংলাদেশ শ্রমিক নিয়োগ

ঢাকা: বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে তিন বছর ধরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের (এফটিএ) প্রস্তাব দিয়ে আসছে মালয়েশিয়া। কিন্তু এতো দিনেও চুক্তির লাভক্ষতির হিসাব মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ।

ফলে এখনো ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার প্রস্তাব।

এমন এক পরিস্থিতিতে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে আগামী ১৫ মে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

এর আগে ১৪ মে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া যাবে। ১৬-১৭ মে সেখানে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও ট্যারিফ কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুতে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়কমন্ত্রী দাতো মুস্তপা মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফরের সময় এফটিএ’র বিষয়টি উঠে আসে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ চুক্তি নিয়ে ভাবতে শুরু করে। কিন্তু এখন পর‌্যন্ত সে কাজ শেষ হয়নি।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের সময়ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজিব বিন তুন হাজি আব্দুল রাজাক বিষয়টি
উত্থাপন করেন।

তবে গত বছরের আগস্টে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রিয়তের ঢাকা সফরে ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের বিষয়ে চুক্তির হলেও এখন পর্যন্ত চাহিদাপত্র পাঠায়নি দেশটি। এমনকি দুদেশের মধ্যে ভিসা অব্যাহতির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সেটি করা হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার প্রতিশ্রুত সারওয়াক প্রদেশে শ্রমিক পাঠানো জন্য চাহিদাপত্রের বিষয়টি বিশেষভাবে জোর দেওয়া হবে এবারের বৈঠকে। একই সঙ্গে ভিসা অব্যাহতির বাস্তবায়ন, নিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে মালয়েশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশটি চায়, পাকিস্তান ও ভারতের মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও তাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হোক।  

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ট্যারিফ কমিশনকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়া থেকে বিনিয়োগ আনা বা দেশটিতে আরো শ্রমিক রফতানির সম্ভাবনা বিবেচনায় লাভক্ষতির হিসাব চাওয়া হয়। সে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, কাজটি মূলত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারা আগ্রহ দেখালেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাকি ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এফটিএ’র হিসাব মেলাতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে এখন ট্যারিফ কমিশন কাজ করছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের একটি পর্যালোচনা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় মালয়েশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি হলে বিরাট অংকের রাজস্ব হারাবে বাংলাদেশ। মূলত, এ কারণেই হিসাব চূড়ান্ত করতে গড়িমসি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই যুক্তির সঙ্গে একমত নয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা মনে করছে, শ্রমশক্তি রপ্তানির বিষয়টি এফটিএ চুক্তির আওতায় আনা গেলে রাজস্ব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এফটিএ
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ-র ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে ক্ষতির আশঙ্কা করছে বিচক্ষণতার পরিচয় দিলে সেটিও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
অর্থাৎ ক্ষতিকর দিকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো বাইরে রেখে দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা যেতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে চায় মালয়েশিয়া। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বেশকিছু শ্রমিকও রফতানি করতে চায় দেশটি।

গত অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ২শ’ ৮ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ রফতানি করেছে মাত্র ১৩ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ সময়: ২২২০ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
জেপি/এজেড/কেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।