সিলেট: দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে নারী উদ্যোক্তাদের আরও বেশি ঋণ সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
শনিবার (১৬ মে) দুপুরে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে সিলেটের নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন ও এসএমই ব্যাংকিং বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারে আয়োজন করা হয়।
ড. আতিউর রহমান বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত করতে এবার এক লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বড় বড় পুরুষ শিল্পপতিরা ঋণখেলাপি হন, কিন্তু নারী উদ্যোক্তারা সাধারণত ঋণখেলাপি না। নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সময়মত তা ফেরত দেন। প্রথম তিন মাসেই এই বৃহৎ অংকের ২৫ শতাংশ ঋণ নারী উদ্যোক্তারা সংগ্রহ করেছেন।
গভর্ণর ড. আতিউর রহমান বলেন, শুধু টাকা থাকলেই উন্নয়ন করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন বিশেষ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। যা আমাদের নারীদের রয়েছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গভর্নর বলেন, আমাদের দেশ হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশ, আমাদের অর্থ কম। এরপরও প্রবৃদ্ধির ও উন্নয়নের দিক থেকে প্রতিবেশি দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। এটা আমাদের দাবি নয়, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তথ্য।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাসেম, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, ইন্সপায়ার্ডের প্রকল্প প্রধান আলী সাবেত।
এছাড়া সেমিনারে অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন- আরিফ হোসাইন, নারী উদ্যোক্তা তানিয়া আহমেদ, মৌসুমী, আরিতা দাশ মুক্তা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নারীবান্ধব উদ্যোগের ফলে নারী উদ্যোক্তা খাতে এসএমই ঋণ বিতরণের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৪৩ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে চার হাজার কোটি টাকা এসএমই ঋণ বিতরণ করেছে, যা ছিল আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি।
বক্তারা আরও বলেন, ২০১২ সালে বিতরণকৃত এসএমই ঋণের মধ্যে নারী উদ্যোক্তা খাতে বিতরণের পরিমাণ ছিল ৩ শতাংশ, যা ২০১৪ সালে ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নারী উদ্যোক্তারা এখন শুধুমাত্র চিরায়ত হস্তশিল্প, বুটিক বা বিউটি পার্লারের ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তারা এখন ব্যবসা নিয়ে গবেষণা করছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও তাদের পদচারণা লক্ষ্যণীয়। নিত্য নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাত করে নিজেদের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সমাজ গঠনে নারীরা এখন অনবদ্য ভূমিকা রাখছেন।
এছাড়া, ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৪৭ হাজার উদ্যোক্তাকে ৫ হাজার ৬শ’ ৬৫ কোটি টাকা পুন:অর্থায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে ১১ হাজার ৬০০ নারী উদ্যোক্তার বিপরীতে পুন:অর্থায়ন করা হয়েছে ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের বিপরীতে পুন:অর্থায়ন সুবিধার সদ্ব্যবহার করলে নারী উদ্যোক্তারা অধিকহারে ঋণ পাবেন বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, মে ১৫,২০১৫
এনইউ/বিএস