মাওয়া থেকে ফিরে: রোববার তপ্তরোদের মধ্যে পৌঁছালাম দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে। একদিকে প্রখর রোদ অন্যদিকে পদ্মা পাড়ের তপ্তবালি।
মূল সেতু নির্মাণ স্থান থেকে ৫০ মিটার দূরে ক্রেনের মাধ্যমে বিশাল হ্যামার দিয়ে পিলার টেস্টের কাজ চলছে। এর অদূরে তপ্ত বালির ওপর বড় ছাতার নীচে বসে রয়েছেন সেতু নির্মাণের প্রধান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) কর্মকর্তারা। তারা সবাই পিলার টেস্টের কাজে নিয়োজিত।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সেতু জুড়ে ১২টি পিলার টেস্ট করা হবে। প্রতিটি পিলারের গভীরতা হবে ৩৫০ ফুট। এ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে পাঁচ মাস। এর পরেই শুরু হবে মূল সেতুর কাজ। এর মধ্যে দু’টি পিলার স্থাপন কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন বাকি শুধু পরীক্ষা। প্রতিটি পিলারের ওপর ৩ হাজার টন ওজন ভার দেওয়া হবে।
এ ভার দেয়ার পর পিলার যদি দেবে না যায় তবে টেস্ট কাজ সফল হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর যদি দেবে যায় তবে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও পিলারের গভীরতা বৃদ্ধি করা হবে।
পিলার টেস্ট প্রসঙ্গে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় এমবিইসি ফোরের প্রধান প্রকৌশলী মি. চুং এর সঙ্গে।
চুং এর ভাষ্য মতে, ১২টি পিলার টেস্ট করতে পাঁচ মাস সময় লাগবে। পিলার থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই শুরু হবে পদ্মাসেতুর মূল কাজ। প্রতিটি পিলারের ওপর উপর তিন হাজার টন ওজন দেয়া হবে ।
এরপর পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য সতর্কতা স্বরূপ পরে নিলাম লাইফ জ্যাকেট। পিলারের পাশেই বড় বড় অক্ষরে লিখা ‘কাজ চলিতেছে, নৌ-যান চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করুন। অনেক উঁচু থেকে পিলারে সামনে নৌ-যানের সাহায্যে ঠাণ্ডা পানি ঢালছেন কতিপয় শ্রমিক।
শ্রমিকের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতিটি ৩৫০ ফুট টেস্ট পিলার খনন কাজ শেষ হয়েছে। এরপর ঢালাই দেয়া হয়েছে। পিলারের ঢালাই ঠাণ্ডা ও নানা প্রকারের কাঁদাবালি পরিষ্কার করার জন্য মোটরের সাহায্যে ঠাণ্ডা পানি দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে কথা হয় শ্রমিক জাকির হোসেরে কাছে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পিলার ঢালাইয়ের পরে প্রচণ্ড গরম থাকে। ঠাণ্ডা করতে পানি দিতাছি। পাঁচ দিন একইভাবে পানি দেবো। প্রথম দিন পানিতে হাত দেওয়া যায় না। পানি প্রচুর গরম থাকে। পানির সাহায্যে পিলারের নীচের অনেক কাঁদা মাটিও বের হয়।
অন্যদিকে পিলারের নিচে পড়ে থাকতে দেখা গেছে কয়েকগুচ্ছ বিদ্যুতের তার। তার গুচ্ছ পিলারের বরাবর বেয়ে উপরে উঠানো হয়েছে। এছাড়া তারের মুখে লাগানো হয়েছে বিশেষ এক ধরনের যন্ত্র।
এ প্রসঙ্গে অন্য পিলারের কাজে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পিলারের নীচে ওজন মাপা যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। পিলারের নিম্নভাগে যন্ত্রের সঙ্গে লাগানো তারের মুখে বাইরে বের করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি পিলারে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার তার ব্যবহার করতে হয়। তারের মুখে ডিজিটাল যন্ত্র বসিয়ে পিলার পরীক্ষা করা হবে। পিলার তিন হাজার টন ওজন বহন করতে স্বক্ষম না অক্ষম ডিজিটাল মেশিনেই বলে দিবে।
পদ্মা সেতুর মূল কাজ স্থাপেনর ৫০ মিটার পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রায় ১২টি টেস্ট পিলার স্থাপন করা হবে। মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ সেতু জুড়েই পিলার টেস্ট কাজ চলবে।
একটি পিলার টেস্টের অপেক্ষায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এক সপ্তাহের মধ্যে পিলারের চূড়ান্ত টেস্ট শেষ হবে।
অন্যদিকে সেতুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাওয়া ও জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় ৫০ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। নদীশাসন কাজের সার্ভের কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদারের নিজস্ব স্থাপনা যেমন অফিস ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কসেড, স্টোর হাউজ, লেবারসেড, জেটি নির্মাণ কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে।
তাছাড়া মাওয়া প্রান্তে বর্ষা মৌসুমের পূর্বে নদী ভাঙন প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ চলমান রয়েছে। শ্রমিকেরা বালি ভর্তি ছোট ছোট বস্তা বস্তা দিয়ে এই কাজ সম্পূর্ণ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৫
এমআইএস/এসই/এসএইচ