ঢাকা: তারা সবার কথা ভাবেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ ভাবেন না।
খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়েই দিনের পর দিন এই অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণে বাজেট প্রণয়ন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
রেওয়াজ অনুযায়ী, জুনে বাজেট পেশ করা হলেও এর টেবিল ওয়ার্ক শুরু হয় ৭ মাস আগে (অক্টোবর) থেকে। আর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চলে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। এ সময়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন- এমনকি কোন কোন রাতেও কাজ চলে অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায়।
এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ফেব্রুয়ারিতে সিনিয়র সহকারী সচিব উর্মী তামান্না নোটিশ জারি করেছেন। তাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাজেট প্রণয়নের জন্য সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনেও অর্থ বিভাগ খোলা রাখা ও সংশ্লিষ্টদের অফিস করার কথা বলা হয়েছে।
সেই থেকে শুক্রবার-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন, এমনকি মে দিবসেও টানা কাজ করতে হচ্ছে বাজেট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কোন কোন দিন গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করতে হচ্ছে তাদের। গত শনিবারও (১৬ মে) রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা ছিল বাজেট শাখা।
বাজেট শাখার একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, স্ত্রীকে বলেছি ৫ জুনের আগে আমার অসুখ বিসুখ হওয়া যাবেন না। দম ফেলার সুযোগ নেই।
এই দিন-রাতে বিরামহীন কাজের জন্য অর্থ বিভাগের উপ-সচিব থেকে নিচের স্তরের কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের সবাইকে একটি করে বোনাস দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। তবে গত অর্থ বছরে দু’টি বোনাস দেওয়া হয়।
আর এখানেই ঘোর আপত্তি বাজেট শাখার লোকজনের। তারা বলছেন, আমরা কাজ করি আর কিছু শাখার লোকজন বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- তাদেরকেও এই বোনাস দেওয়া হয়। তাহলে বিশেষ বোনাস বলি কেমনে।
বাজেট শাখার একজন উপ-সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, নন ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর), সরকারি দায় দেনা (ডিএসএল) কর ব্যতীত প্রাপ্তি(টিডিএম) অনু বিভাগসহ কিছু শাখা রয়েছে। যাদের বাজেট প্রণয়নে কোন কাজ নেই। তাদেরকেও এই বোনাস দেওয়া হয়। তাহলে যারা খেটে মরছেন তাদের জন্য বিশেষ কেমনে হলো।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দেখেন যে যত পায় আরও চায়। প্রত্যাশা বেশি থাকতেই পারে। কাউকে কি পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা সম্ভব! তবে আমরা চাকরির পার্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেখেন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থ বিভাগ সব সময় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। খরচ সাশ্রয় করতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর সভা শেষে হালকা নাস্তা দেওয়া হয়। কারণ অন্যরা যাতে অনুসরণ করে। তাই আমাদের লোকজন বেশি কাজ করলেও বেশি বোনাস দেওয়া হয় না।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, প্রথম শ্রেণির ১৩২ কর্মকর্তা, দ্বিতীয় শ্রেণির ১৭৬, তৃতীয় শ্রেণির ১৬৯, চতুর্থ শ্রেণির ১১৩ জনকে এই বোনাস দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৪ জুন সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিলো ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটের আকার ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫
এসআই/জেডএম