ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ব্যাংকের এক্সপোজারের হিসাব সঠিক নয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
‘ব্যাংকের এক্সপোজারের হিসাব সঠিক নয়’ ছবি : সাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক্সপোজারে যে পদ্ধতিতে হিসাব করা হয় তা সঠিক নয়। এক্সপোজারের হিসাব থেকে সাবসিডারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকা মার্চেন্ট ব্যাংকের এক্সপোজারের অর্থ ও শেয়ারবাজারে অতালিকাভূক্ত কোম্পানির শেয়ারের হিসাব বাদ দেওয়া উচিত।


 
সোমবার (২৫ মে) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের সমৃদ্ধি’ শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা এমন অভিমত দেন।
 
বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ’র সঞ্চলনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি মসিহ্ মালিক চৌধুরী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. স্বপন কুমার বালা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামন প্রমুখ।
 
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন। সমাপনী বক্তব্য রাখেন সিএসইর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।

ড. মসিউর রহমান বলেন, অতালিকাভূক্ত কোম্পানির শেয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেন হয় না। যা শেয়ারবজারে আসেই না তার হিসাব কেন শেয়ারবাজারে হবে। এটা এক ধরনের জবরদস্তি করে এক্সপোজারের হিসাবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
মার্চেন্ট ব্যাংকের এক্সপোজার মাদার ব্যাংকের এক্সপোজারের হিসাবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকে যেহেতু সাবসিডারি করে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের (মার্চেন্ট ব্যাংকটি যে ব্যাংকের সাবসিডারি প্রতিষ্ঠন) ব্যবসা না। তাই মার্চেন্ট ব্যাংকের হিসাব মাদার ব্যাংকের এক্সপোজারে যুক্ত করাও ঠিক নয়।
 
সরকারি সার কারখানা পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্তির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, সার ও জ্বালানি খাতে সরকারের সহায়তা রয়েছে। এই দুই খাতে মুনাফার উদ্দেশ্য থাকলে তা সমাজের কোনো উপকারে আসবে না।
 
এম এ মান্নান বলেন, পুঁজিবাজারে কয়েকবার যে ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের নাড়া দিয়ে গেছে। আমাদের সরকার পুঁজিবাজারের সংস্কারে অনেক কাজ করেছে। তারপরও আমাদের সরকার শুনতে চায়, বুঝতে চায় ও কাজ করতে চায়। আমরা পুঁজিবাজার সম্পর্কে শোনার জন্য উদগ্রীব।
 
ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ উঠেছে বিএসইসি যে আইপিও দিচ্ছে তার অনেকগুলো তালিকাভূক্তির কিছুদিন পরেই ফেস ভ্যালুর নিচে চলে আসছে। বিএসইসির এ দিকে নজর দেওয়া উচিত।
 
বাজারে নতুন আইপিও আসার দরকার আছে তবে তা অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। কোম্পানিগুলো টাকা তুলে কোথায় ব্যয় করছে সেদিকেও বিএসইসির নজর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
 
তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকের এক্সপোজার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সে সময় বেঁধে দিয়েছে তা বাড়ানোর দাবি উঠেছে। এ দাবি যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি ব্যাংক কোনো অতালিকাভূক্ত কোম্পানির শেয়ার কিনলে তা এক্সপোজারের হিসাব থেকে বাদ দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জন্য বাজার বর্তমানে খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে যেসব মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস মার্জিন ঋণ দিয়েছে তারা বর্তমানে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
 
তিনি বলেন, কোন ব্যাংকে কী পরিমাণে এক্সপোজারের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ আছে তা দেখতে হবে। যদি কোনো ব্যাংকের বড় অংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ থাকে তবে তা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
খায়রুল হোসেন বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক শেয়ারবাজার। আমাদের বাজারের সব থেকে বড় দুর্বলতা হলো বিনিয়োগকারীদের আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।
 
স্বপন কুমার বালা বলেন, বাজার মূলধনের ১৭ শতাংশ ট্রেজারি বন্ড রয়েছে। এগুলো লেনদেন যোগ্য নয়। এ বন্ডগুলোকে লেনদেন যোগ্য করা উচিত।
 
আইসিবির এমডি ফায়েকুজ্জামান বলেন, ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিক্রেতার ভূমিকা পালন করছে। যে কারণে অনেক সময় বাজার ধরে রাখা সম্ভ হচ্ছে না। এ কারণে বাজার পড়ে যাচ্ছে।  
 
মেঘনা ব্যাংকের এমডি নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের শেয়ারবাজারে শেয়ার বিক্রয় করতে দিচ্ছে না। এটি না করে ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে বাজারের জন্যই ভালো হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
এএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।